কাশ্মীরকে ‘আরেক গাজায়’ পরিণত করতে ভারতকে ইন্ধন দিচ্ছে ইসরাইল?

ভারত অধীকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরাইল? এ নিয়ে ভয়াবহ কোনো ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে তারা? ভারতে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত রুভেন আযারের বেশকিছু বিস্ফোরক দাবি যেন তেমন অশুভ ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
পেহেলগামে হামলার কিছুদিন আগেই পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসকে সফর করতে দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন রুভেন আযার। সার্বিক প্রেক্ষাপটে এই হামলার ঘটনায় হামাসের হাত থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত করেছেন তিনি।
ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম পিটিআই ও এনডিটিভিকে রুভেন জানান, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠির নেতাদের সাম্প্রতিক সফরের পরপরই পেহেলগামে হামলার ঘটনা ঘটলো। ওই সফরকালে প্রতিরোধ গোষ্ঠীর নেতারা ইসলামি উগ্রবাদী গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর নেতাদের সাথে গোপনে বৈঠক করেন বলে দাবি ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতের। ওইসব বৈঠকের ফলস্বরূপ পেহেলগামে বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা হয়ে থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত করেন তিনি।
ভারতের দাবি খোদ পাকিস্তান রাষ্ট্রই জইশ-ই-মোহাম্মদসহ অন্যান্য উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে মদদ দেয়। ঐসব গোষ্ঠীই পেহেলগামে হামলার পেছনে জড়িত। দিন দিন পাকিস্তানের ইসলামী উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর সাথে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর যোগাযোগ ও সমন্বয় বাড়ছে দাবি করে ভারতে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত বলেন, পেহেলগামে হামলার সঙ্গে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলার সাদৃশ্য রয়েছে। দুই ক্ষেত্রেই বেসামরিক পর্যটকদের নিশানা করেছে হামলাকারীরা। এর অর্থ, উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো একে অপরকে অনুসরণ করছে।
এইসব উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নিতে হবে। কেবল কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ভারতের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, 'এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় যে, বিকৃত ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে চলা সন্ত্রাসীদের খুনী বাহিনী আমাদের সভ্যতাকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালাবে। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের লড়াই করতে হবে। সেটা নিছক নিন্দা জানিয়ে নয়, কঠোর পদক্ষেপ ও কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে। আমি বিশ্বাস করি, ভারত সরকারও তেমন ব্যবস্থাই গ্রহণ করবে। সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় যা করতে হয়, তাই করবে'।
এদিকে ভারতের ইস্যুতে ইসরাইলের এই অতি আগ্রহকে সরল চোখে দেখছেন না অনেক বিশ্লেষক। পেহেলগামে হামলায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা তৈরির চেষ্টাকেও সরলভাবে দেখার সুযোগ নেই, বলছেন তারা। তাদের মতে, সম্ভবত গাজায় যে নৃশংস নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, ভারতকে কাশ্মীরেও সে ধরনের নীতি গ্রহণের ব্যাপারে ইন্ধন জোগানোর চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরাইল। ভারত সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো যেন তারই ইশারা। বরাবরই দুই দেশের মধ্যে নীতিগত বিভিন্ন মিল লক্ষ্যণীয়। গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতারও ঘোর সমর্থক ভারত। সব মিলিয়ে ইসরাইল দ্বারা প্ররোচিত হয়ে সন্ত্রাসবাদ দমনের অজুহাতে ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুতবাদী বিজেপি সরকার কাশ্মীরকে নতুন গাজায় পরিণত করার চেষ্টা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
বিভি/এইচজে
মন্তব্য করুন: