নিরাপত্তা দিতে না পারলে জাতিসংঘ ভেঙে দিনঃ জেলেনস্কি

ছবিঃ জাতিসংঘের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের শুরু থেকেই বিশ্বমহলে সাহাজ্য চেয়ে আসছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনেস্কি। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে একাধিক বৈঠকও করেছেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা ও সাধারণ পরিষদ। কিন্তু এসব সভায় মেলেনি কোনো সুফল। যদিও চলতি সপ্তহে কিছুটা সৈন্য গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে রুশ বাহিনী। তাদের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে উইক্রেনে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে ধংসযঞ্জের প্রমাণ। বেরিয়ে আসছে গণকবরও।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) আয়োজিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভায় কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় উক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কিকে। সেখানে বিনা কারণে ইউক্রেনীয় বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে ক্ষোভ ঝাড়েন জেলেনস্কি। কড়া ভাষায় তিনি বললেন, ‘হয় এখনই কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করুক, নাহলে জাতিসংঘই ভেঙে দিন।’
সভায় দেওয়া ভাষণে রুশ বাহিনীর হামলায় দেশের দুর্দশা ও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। বুচা, কিয়েভসহ একাধিক শহরে যেভাবে রাস্তাতেই হাত-পা বাঁধা মৃতদেহ দেখা যাচ্ছে, সেই ভিডিও তুলে ধরে তিনি রুশ বাহিনীর নৃশংসতা দেখান।
জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের পরিষদের কাছে জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেনীয় শহরগুলিতে রাশিয়া যে হিংসার বহিঃপ্রকাশ করেছে। এই হত্যালীলা চালানোর জন্য রাশিয়াকে যাতে নিরাপত্তা পরিষদ থেকে বহিস্কার করা হয়, সেই দাবিও জানান জেলেনস্কি। এই পদক্ষেপ গ্রহণ করলে রাশিয়া নিজেদের হিংস্রতা, বর্বরতা, যুদ্ধের বিরুদ্ধে গৃহীত সিদ্ধান্তকে আটকাতে পারবে না বলেও যুক্তি দেন তিনি।
যদি জাতিসংঘ কোনো পদক্ষেপ না নেয় এবং তাদের কাছে কোনও উপায় নেই বলে জানায়, তবে জাতিসংঘকেই তুলে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উপস্থিত মাননীয় ব্যক্তিরা, আপনারা কি জাতিসংঘ বন্ধ করে দিতে প্রস্তুত? আন্তর্জাতিক আইনও কি আর নেই? যদি আপনাদের উত্তর না হয়, তবে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’
সভায় খোঁচা খোঁচা দাড়ি ও জলপাই রঙের টি-শার্ট পরে অংশ নেওয়া জেলেনস্কির চোখেমুখেই ফুটে উঠেছিল যুদ্ধের বীভৎসতা। তবুও তিনি দমতে রাজি নন। জাতিসংঘের মঞ্চেই তিনি ভিডিওতে দেখান যে কীভাবে বুচায় রাস্তাঘাটে সারি সারি মৃতদেহ পড়ে রয়েছে, তাদের মধ্যে ছোট বাচ্চাদের দেহও রয়েছে।
জেলেনস্কি বলেন, ‘বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে হত্যা করা হয়েছে, গ্রেনেড দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ নাগরিক যখন গাড়িতে করে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাদের ট্যাঙ্কার দিতে চাপা দিয়ে দেওয়া হয়েছে কেবলমাত্র নিজেদের খুশির জন্য। হাত-পা কেটে নেওয়া হয়েছে, গলা কেটে দেওয়া হয়েছে…। মহিলাদের তাদের সন্তানদের সামনেই ধর্ষণ করা হয়েছে। তাদের জিভ উপড়ে নেওয়া হয়েছে যাতে কোনও কথা না শুনতে হয়। এটা দায়েশ জঙ্গিদের কার্যকলাপের থেকে বিশেষ কিছু আলাদা নয়। আর এটা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক সদস্যই করছে।’
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ায়, রাশিয়ার কাছে ভেটো ক্ষমতা রয়েছে। যা ব্যবহার করেই তাদের বিরুদ্ধে যাতে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করা যেতে পারে, তা আটকাচ্ছে দেশটি।
বিভি/কেএস
মন্তব্য করুন: