পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে নতুন রায়, কোণঠাসা ইমরান খান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট প্রস্তাব বাতিলে ডেপুটি স্পিকারের সিদ্ধান্ত বেআইনি ঘোষণা। শনিবার অনাস্থা ভোট। পার্লামেন্ট অধিবেশন বহালের আদেশ দেশটির সুপ্রিম কোর্টের। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে এই মামলা। পাকিস্তানের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এ মামলার রায়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন শনিবার অনাস্থা ভোট। সংসদ অধিবেশন বহাল থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রেসিডেন্টের সংসদ বাতিলের ঘোষণার বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে সংসদে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। ডেপুটি স্পিকারের ওই পদক্ষেপ ‘ভুল’ বলে বৃহস্পতিবার দুপুরে জানিয়েছিলেন সেদেশের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল।
দিনভর নাটকীয়তার পর জাতীয় পরিষদ পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট। অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে ডেপুটি স্পিকারের দেয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে বৃহস্পতিবার সন্ধায় এই রায় দেয়। পাক সংবাদপত্র দ্য ডন-এ এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এর আগে গত ৮ মার্চ ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকারের প্রতি লিখিত আবেদন জানায় তারা। কিন্তু সে সময় রাজধানী ইসলামাবাদে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দুইদিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকের জন্য সেই তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়।
এরপর ২৫শে মার্চ শুক্রবার আবারো অধিবেশন ডাকা হলেও সেদিন অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন ছাড়াই ২৮ তারিখ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার। ২৮ তারিখের অধিবেশনে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ। সংবিধান অনুযায়ী প্রস্তাব উত্থাপনের পর তিন দিন পার হলেই ভোটাভুটি করা যায়। তবে ভোটাভুটির জন্য সাত দিনের বেশি সময় নেয়া যাবে না। ২৮ তারিখ প্রস্তাব উত্থাপনের পর আবারো ৩১শে মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এরপর সর্বশেষ এ নিয়ে ৩রা এপ্রিল ভোটাভুটির তারিখ নির্ধারিত হয়।
অনাস্থা প্রস্তাব আনার প্রথম থেকেই ইমরান খানকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল বিরোধীরা। তাদের পক্ষে ছিল ১৬২ আইনপ্রণেতাও। যদিও ইমরানকে সরাতে প্রয়োজন ছিল ১৭২ ভোটের। তবে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর হঠাৎ করেই ইমরানের দল পিটিআই’র ২৪ এমপি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। তারা ইমরান খানের পক্ষত্যাগ করার ঘোষণা দেয়। এতে প্রচ- চাপে পড়ে যান ইমরান। বিরোধীদের আত্মবিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসে ইমরানের বিপদ তত বাড়তে থাকে। একদম শেষ মুহূর্তে সরকারি জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট। তারা তাদের ৫ আসন নিয়ে বিরোধীদের দলে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়। এর মধ্যদিয়ে ইমরান খানের অনাস্থা ভোটে হারা সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়।
এত সব নাটকীয়তার মধ্যে গত ৩রা এপ্রিল পার্লামেন্টে অধিবেশন শুরু হয়। হিসাব অনুযায়ী ওইদিনই অনাস্থা ভোটে হেরে বিদায় নেয়ার কথা ইমরান খানের। কিন্তু সেদিন পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হতে না হতেই শুরু হয় আরেক নাটকীয়তার। স্পিকার কাসিম সুরির সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে খারিজ করে দেন তিনি। এর পরপরই ইমরান খানের পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। স্পিকারের এই ঘোষণার মধ্যদিয়ে অনাস্থা প্রস্তাবের স্বপ্ন ভেঙে যায় বিরোধীদের। এরপরই এই রাজনৈতিক সংকট সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: