পাকিস্তানে বিদেশিদের প্রতিষ্ঠা করা সরকার সহ্য করা হবে না: ইমরান খান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় তিনি মেনে নিয়েছেন। তবে এই রায়ে দুঃখও পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই পাকিস্তানে বিদেশিদের প্রতিষ্ঠা করা সরকার সহ্য করা হবে না।’ তবে এমন কিছু ঘটলে তিনি সমর্থনের জন্য জনগণের কাছে ফিরে যাবেন।
শুক্রবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন ইমরান। ভাষণে তিনি দেশের জন্য তার অবস্থানের বিষয়েও কথা বলেন। তিনি সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর বিভিন্ন বিষয় জাতির সামনে তুলে ধরেন।
পাকিস্তান কোনো দেশের সঙ্গে একতরফা সম্পর্ক চায় না উল্লেখ করে এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিবেশী ভারত তাদের দেশের অভ্যান্তরীণ রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ সমর্থন করে না। কিন্তু আমরা সব সময় বিদেশিদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে আসছি। আমরা এমন কোনো জাতি নই যা যাদের টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করা যেতে পারে।’
অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে ইমরান খান বলেন, তিনি কখনোই ‘আমদানি করা সরকার’ মেনে নেবেন না। আর এ জন্য তিনি জনগণের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবেন।
ইমরান খান বলেন, ‘তারা (বিরোধীরা) নিজেদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতির মামলা থেকে বাঁচতে একত্রিত হয়েছে। যদি তারা ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয় তাহলে তাদের আগাম নির্বাচনে যেতে সমস্যা কোথায়?’
প্রধানমন্ত্রী রোববার দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নিতে এশার নামাজের পর সড়কে নেমে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত নাটক বন্ধে সবার অবশ্যই সড়কে নেমে আসা প্রয়োজন। কারণ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হওয়া বিদেশি ষড়যন্ত্র আমি কোনো অবস্থাতেই মেনে নেব না।’
এদিকে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে সম্মান করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অভিযোগ করে বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের উচিৎ ছিল ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ যে অভিযোগ উঠেছে অন্তত সে বিষয়ে তদন্ত শুরুর করার অদেশ দেওয়া।
সুপ্রিম কোর্টের এ রায় নিয়ে ইমরান খান বলেন, ‘আমি সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। কিন্তু বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি তাদের দেখা উচিত ছিল। রায় দেওয়ার আগে বিষয়টি একবার হলেও দেখা উচিত ছিল।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি। এই অনাস্থা প্রস্তাবে বিদেশি হস্তক্ষেপ ছিল। আমি চেয়েছিলাম সুপ্রিম কোর্ট অন্তত এ বিষয়টিতে নজর দেবে। অন্য একটি দেশ চক্রান্ত করে পাকিস্তান সরকারের পতন ঘটাতে চায়- এটি একটি গুরুতর অভিযোগ।’
ইমরান খান আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের তরুণদের সামনে আমরা কি উদাহরণ দিয়ে যাচ্ছি। তারা যদি দেখে রাজনীতিবীদরা তাদের বিবেককে বিক্রি করে দিচ্ছে কি শিখবে?’
সম্মান বাঁচানোর চেষ্টায় আস্থা ভোট এড়িয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার কৌশল নিয়েছিলেন ইমরান, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তা অবৈধ ঘোষণা করে শনিবার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসিয়ে আস্থা ভোটের নিষ্পত্তি করতে বলেছে। পার্লামেন্টে সমর্থনের যে হিসাব-নিকাশ দাঁড়িয়েছে, তাতে অনাস্থার লজ্জা নিয়ে ইমরানের প্রস্থান অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি কী ঘোষণা দেন তা নিয়ে জল্পনার মধ্যে তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী জানিয়েছিলেন, জাতির সামনে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা’ নিয়ে আসছেন ইমরান খান।
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: