পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন প্রভাবক মাওলানা ফজলুর রহমান

মাওলানা ফজলুর রহমান (মাঝে), শাহবাজ শরিফ (ডানে)।)
পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শাহবাজ শরিফ। বহু নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে মন্ত্রীসভা গঠনের পালা। জোটের সব শরিককে সন্তুষ্ট করেই নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করছেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফ।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার এক সপ্তাহ পর নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন তিনি। মন্ত্রিত্ব বণ্টন নিয়ে শরিক দলগুলোর সঙ্গে দরকষাকষি শেষে সোমবার নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক সংবাদে জানিয়েছে পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন।
খবরে বলা হয়, যদিও মন্ত্রিত্ব বণ্টন নিয়ে মতবিরোধে জমিয়তে উলেমায়ে ইসলাম (জেইউআই-এফ) সরকারে অংশ নেয়া না নেয়া নিয়ে শেষ মুহূর্তে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এটির সমাধান হয়েছে। মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে রবিবার জোটের শরিকদের সঙ্গে পরামর্শ করেন শাহবাজ শরিফ।
এর আগে শনিবার প্রধানমন্ত্রী ভবনে যান জেইউআই-এফপ্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান। সরকারি একটি সূত্র ডনকে জানিয়েছে, জেইউআই-এফপ্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান ফেডারেল মন্ত্রিসভায় যোগ না দিয়ে জোটের শরিক হিসেবে থাকার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন। এ ছাড়া আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি (এএনপি) ও স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতা মোহসিন দাওয়ার—প্রত্যেককে একটি করে মন্ত্রিত্ব দেওয়ায় অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন তিনি।
জারদারির কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করে মাওলানা ফজলুর রহমান বলেন, তার দলের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা দল ও ব্যক্তিকে কেন মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনেও তারা তার দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
জবাবে জারদারি বলেন, ‘গ্যারান্টর’ হিসেবে শরিকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে তিনি সরে আসবেন না। সব শরিককে জায়গা করে দেওয়ার আগপর্যন্ত তার দল মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে ইচ্ছুক নয়।
সূত্রের বরাতে ডন জানিয়েছে, জেইউআই-এফ দেশের রাষ্ট্রপতি পদটি দাবি করেছে। তবে এই দাবির প্রতি পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) সম্মতি দেয়নি।
মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সিনিয়র নেতা মরিয়ম আওরঙ্গজেব ডন নিউজকে জানিয়েছেন, ফেডারেল সরকারের মন্ত্রিসভা সোমবার শপথগ্রহণ করবে। পিএমএল-এন ১৪টি মন্ত্রণালয় পাবে। পিপিপি পাবে ১১টি মন্ত্রণালয়। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (জেইউআই-এফ) পাবে দুটি মন্ত্রণালয়।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (জেইউআই-এফ) গৃহায়ণ ও পূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় পাবে।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এনের (পিএমএল-এন) বর্তমান প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ, মাওলানা ফজলুর রহমান ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির যৌথ প্রচেষ্টাতেই ইমরান সরকারের পতন হয়েছে।
মাওলানা ফজলুর রহমান ১৯৮৮ সাল থেকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। মাওলানা ফজলুর রহমান রাজনৈতিক মামলায় ১০ বার কারাবরণ করেছেন।
১৯৮১ সালে তিনি যখন জেনারেল জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কারাবন্দি হন, তখন তাকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব নির্বাচন করা হয়।
১৯৯৩ সনে বেনজীর ভুট্টো দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে মাওলানা ফজলুর রহমান জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।
২০১৯ সালে ইমরান খানের পদত্যাগ এবং পুনরায় নির্বাচন দাবিতে মাওলানা ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানজুড়ে আজাদি মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কয়েক লাখ কর্মী-সমর্থক নিয়ে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে কয়েক দিন অবস্থান করেন তিনি।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: