ভালোবাসা দিবসে গরুকে ‘হাগ’ করতে বললো বিজেপি

ভালোবাসা দিবসে গরুকে ‘হাগ’ বা জড়িয়ে ধরে চুমু দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ভারতের প্রাণী কল্যাণ বোর্ড। আপাত দৃষ্টিতে ভালো মনে হলেও ধারণাটার সুদূর প্রসারী চিন্তা অত্যন্ত ভয়াবহ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতি ভারতের প্রাণী কল্যাণ বোর্ড আহ্বান জানায়, ভালোবাসা দিবস পালন না করে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে গরু আদর দিবস হিসেবে পালন করুন। এটার মধ্যদিয়ে হিন্দু মূল্যবোধের বিকাশ ঘটবে। এটার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি ও সমষ্টির মধ্যে আবেগ ও সুখ গভীর হবে।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের কট্টপন্থি হিন্দু গোষ্ঠীগুলো ভালোবাসা দিবসকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি হিসেবে দেখে। কট্টর হিন্দুদের বাইরে ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের বড় একটা অংশও গরুকে দেবী বা দেবতা জ্ঞান করে পুজা করে। তাই কট্টরপন্থি ও ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের একটা অংশ ভালোবাসা দিবসকে ভারতীয় মূল্যবোধের বিরোধী বলে মনে করে।
ভারতের শিবসেনা ও বজরং দল দীর্ঘদিন ধরে তথাকথিত ভারতীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের মতো করে কাজ করছে। গত কয়েক বছরে এসব গোষ্ঠীর সদস্যরা ভালোবাসা দিবসে পার্কে, রেস্তোরাঁ এবং রাস্তা-ঘাটে তল্লাশি অভিযান চালায়। প্রেমিক-প্রেমিকাদের হাত ধরে ঘুরতে বা বসে থাকতে দেখলে নিজেদের মতো করে শাস্তি দেয়, হেনস্তা করে। কিন্তু অন্য দশটি উৎসবের মতো ভালোবাসা দিবসও ভারতে অনেক বছর ধরে জাঁকজমকভাবে পালিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ১৯৯০ সালে দেশটির অর্থনীতি উদারীকরণ করার পর থেকে ভালোবাসা দিবস উদযাপন সেখানে একটি সাধারণ ঘটনা।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর থেকে রক্ষণশীল হিন্দু আচারকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। কট্টর হিন্দু মূল্যবোধকেই সবচেয়ে ভালো, সর্বোৎকৃষ্ট বলে প্রচার করা হচ্ছে। এটা দেশটির সাংবিধানিক ভিত্তিতে অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় গরু আদর দিবসের স্প্রিট নিয়ে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ উন্মাদ ধারণা। এর কোনো যুক্তি নেই। এ আহ্বানের অত্যন্ত দুঃখজনক দিক হলো, ভালোবাসা দিবস এখন রাষ্ট্রী নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছে। রাষ্ট্র ও ধর্মকে আরও বেশি কাছাকাছি আনা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত শোচনীয়। এত দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো যা করত এখন রাষ্ট্রই তা করছে।’ সূত্র: আলজাজিরা।
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: