চা: দুধ না লাল? জেনে নিন...

বিশ্বজুড়ে হালে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ব্ল্যাক টি। স্বাদ আর ফ্লেভারে রং চাও আকর্ষণীয়। রং চায়ে আদা, তেজপাতাসহ গরম মসলা, সঙ্গে একটু লেবুর রস চিপে দিলে স্বাদে আসে ভিন্ন মাত্রা। যা শরীর ও মনকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি ত্বক ভালো রাখে বলে ব্যাপক প্রচারিত। এতে বিশ্বাসও অনেকের। আদা চা হজমি সমস্যা দূর করে বলে চিকিৎসকদের অনেকেরও পরামর্শ।
এসব পরামর্শ ও বিশ্বাসের জেরে কেবল সকাল-সন্ধ্যা নয়, কাজের ফাঁকে, আড্ডায় এক কাপ চা না হলে যেন চলে না। তবে দুধ চা কিছু সময়ের জন্য মনকে ভালো রাখলেও শরীরের কোনো উপকারে আসে না। বরং ক্ষতির নানা শঙ্কা। যা দিনে দিনে আকর্ষণীয় করে তুলছে লাল চা-কে।
এক কাপ চা দিয়ে সকালটা শুরু করা যায়,তাতে শরীর থাকবে আর্দ্র। সারাদিনের খাটনিও গায়ে লাগবে না। নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট আছে এই পানীয়তে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই সাহায্য করে লাল চা। খালি পেটে চা খেলে আরও একটি উপকার হয় শরীরের। খাদ্যনালীতে জমে থাকা সব ধরনের ব্যাক্টেরিয়া দূর হয় সকাল সকাল।
লাল চা-এ রয়েছে ক্যাফেইন, কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম, মিনারেল, ফ্লোরাইড, ম্যাঙ্গানিজ ও পলিফেনল। এছাড়াও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ট্যানিন, গুয়ানিন, এক্সাথিন, পিউরিনে ভরপুর লাল চা। প্রতিদিন মাত্র ৩ কাপ লাল চা।
লাল চায়ের কেরামতি এখানেই শেষ নয়। গবেষণা বলছে, দিনে একবার লাল চা খেলে গ্লুকোমার মতো চোখের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে প্রায় ৭৫ শতাংশ। লাল চায়ের সঙ্গে দৃষ্টিশক্তির ভাল-মন্দের সরাসরি যোগ আছে। লাল চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ এবং নিউরো প্রোটেকটিভ কেমিক্যাল চোখ ভাল রাখতে সাহায্য করে।
শুধু চোখই নয়, চিনি ছাড়া লাল চায়ের প্রচুর গুণ। হজমশক্তি বাড়ায় লাল চা। ক্যানসার প্রতিরোধ করে। হার্ট চাঙ্গা রাখে। ব্রেনের ক্ষমতা বাড়ায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ওজন কমায় লাল চা। হাড়কে শক্তিশালী করে। স্ট্রেস কমায়, ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায় লাল চা। নিয়মিত লাল চা পান করুন। লাল চা রক্তের খারাপ কোলেস্টরল কমাতে সহায়তা করবে।
নিয়মিত লাল চা পানের ফলে হজম শক্তি বাড়ে। কমায় শরীরে অতিরিক্ত মেদ। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত লাল চা পান করুন। লাল চা শরীরকে ক্ষতিকর ভাইরাস থেকে বাঁচাবে। নিয়মিত লাল চা পানের ফলে রক্ষা পেতে পারেন ক্যান্সার এর মতো মরন ব্যাধির হাত থেকে। এছাড়াও ম্যালিগনেন্ট টিউমার প্রতিরোধ করতে লাল চায়ের জুড়ি নেই।
লাল চা মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলের গতি বাড়ায় বলে দাবি ভেষজ ও হারবাল বিশেষজ্ঞদের। লাল চায়ে ক্যাফিনের পরিমাণ কম বলেও প্রমানিত। যা মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। লাল চা পানের ফলে পারকিনসন্স রোগের ঝুঁকি কমে। লিকার চায়ে রয়েছে ক্যাটাচিন ও থিয়াফ্লেবিন। যা শরীরে প্রবেশ করার পর ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ কমে।
শরীরের জন্য চা বেশ উপকারী। সেই সঙ্গে মন ভালো রাখার কাজও করে চা। তবে দুধ-চিনি দিয়ে চা খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিন। দুধ চা শরীরের জন্য উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। তাই কাজের ফাঁকে একটা টি ব্রেক সকলের জন্যই জরুরি। এতে হাতে নিতে পারেন এক কাপ লাল চা। এতে মন হবে চাঙ্গা, জমবে আড্ডা। সেই সঙ্গে কাজে উদ্দীপনাও পাওয়া যাবে। তাই কাজের ফাঁকে দুধ চা বা কফি নয়, চুমুক দিন লাল চায়ে।
ঘুমের ব্যাঘাতের মূল কারণ হচ্ছে চায়ে থাকা ক্যাফেইন। তাই গ্রিন, হোয়াইট, দুধ কিংবা লাল যে চা-ই হোক; রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করায় নিষেধ রয়েছে চিকিৎসকদের। মোটকথা চা পানের অভ্যাসে আনতে হবে পরিবর্তন।
লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, বাংলাভিশন
বিভি/এনএ
মন্তব্য করুন: