ইসির রোডম্যাপের খসড়া প্রস্তুত, দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর চূড়ান্ত

ছবি: সংগৃহীত।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোডম্যাপের খসড়া প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন ঈদুল আজহার পর চলতি মাসের শেষে বা আগস্টের প্রথম দিকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে এটি চূড়ান্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে কিনা সেই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই রোডম্যাপে ইভিএম বিষয়টি যুক্ত করা বা বাদ দেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া দলগুলোরও বিভিন্ন মতামত থাকতে পারে। তাই খসড়ার সঙ্গে তাদের মতামত যুক্ত করে রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হবে।
রোডম্যাপের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, রোডম্যাপের খসড়া মুটামুটি তৈরি করা হয়ে গেছে। এখন শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা হয়ে গেলে এটি চূড়ান্ত করা হবে।
দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নাকি আগে রোডম্যাপ তৈরি করে সংলাপে বসবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা খসড়াটা করে ফেলেছি, এটি নিয়ে যখন উনাদের সঙ্গে বসবো। আমরা উনাদের কথা শুনবো। যদি তাদের মতামতের সাথে মিলে যায়, তখন আমরা বলবো আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনাদের সঙ্গে মিলে গেছে। যেটি মিলবে না, সেটির সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করে উনারা আমাদেরকে কনভিনজড করার চেষ্টা করবে। উনারা যে প্রস্তাব দেবেন সেটি যে আমরা মেনে নেবো সেটি নাও হতে পারে। তখন আমরা তাদেরকে বলবো এইটা করলে এই এই সমস্যা আছে, এই এই সুবিধা আছে।
আপনাদের রোডম্যাপে বিশেষত্ব কি থাকছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটু পার্থক্য আছে, কারণ আগের কমিশনগুলো রোডম্যাপ তৈরি করে রাজনৈতিক দল বা সুধীজনের সঙ্গে সংলাপে বসেছেন। আমরা কিন্তু তা করিনি। আমরা রাজনৈতিক দল বা সুধীজনের সঙ্গে প্রথমে আলোচনা করেই কিন্তু রোডম্যাপ করছি। অর্থাৎ এতে বুঝা যায় যে, তাদের কথাবার্তার অনেক রিফ্ল্যাকশন এই রোডম্যাপে থাকবে। আমরা রোডম্যাপটি করার জন্য উনাদের পরামর্শ নিয়েছি। এরপর যখন চূড়ান্তটা করবো তখন উনাদের সঙ্গে কথা বলেই। তার মানে এই রোডম্যাপ আমাদের না। এই রোডম্যাপ রাজনৈতিক দলের।
বিএনপিকে সংলাপে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখেন আমরা বারবারই তাদেরকে ডাকবো। যতদিন তারা না আসবেন, ততদিন ডাকবো। আমরা ডাকতেই থাকবো। আহ্বান জানাবো এইটাই আমাদের দায়িত্ব। তবে হ্যা আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে।
আমরা চাই সবাই নির্বাচনে আসুক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনার যদি কোনো অভিযোগ থাকে, আপনি যদি মনে করেন আপনি ঠিক আছেন, অন্যরা ঠিক নাই। জনগণকেই সেটি নির্ধারণ করার সুযোগ দেন। আপনি যদি নির্বাচনে না আসেন, তাহলে আপনার কথাই ঠিক, নাকি ঠিক না। এটি তো জনগণ নির্ধারণ করতে পারছে না। আপনি হয়তো বলতেছেন আপনি ঠিক, অন্যে ঠিক নাই। সেটি বিচার করার দায়িত্ব কার? সেটি বিচার করার দায়িত্ব তো জনগণের, ভোটারের। ভোটারকে তো আপনি সেই সুযোগ দিচ্ছেন না। ভোটারদেরকে সেই সুযোগ না দিয়ে যদি বলেন আমি ঠিক আর উনারা ঠিক না। তাহলে আপনার কথা তো বাজারে বেশিদিন টিকবে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দরজা দলগুলোর জন্য সব সময় খোলা। এছাড়া আমাদের আমন্ত্রণ ছাড়াও নিজে থেকে যদি কেউ কোনো পারমর্শ দিতে কথা বলতে চায়, সেটিও আমরা গ্রহণ করবে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নতুন কমিশন নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি অফিস শুরু করে কাজী হাবিবুল আউয়ায় কমিশন। এরপর ১৩ মার্চ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী, ২২ মার্চ নাগরিক সমাজ, ৬ এপ্রিল প্রিণ্ট মিডিয়ার সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক, ১৮ এপ্রিল ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী/প্রধান বার্তা সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক, ৯ জুন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি এবং ১২ জুন নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সাথে মতবিনিময় করে কমিশন।
এছাড়া প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইভিএম নিয়ে ইতোমধ্যে মত বিনিময় করেছে কমিশন। এখন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে যন্ত্রটি প্রদর্শন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কারিগরি বিষয়ে প্রশ্নোত্তর, মত বিনিময়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে ১৯, ২১ ও ২৮ জুন তিন দফায় নিবন্ধিত ৩৯ টি দলকে ডেকেছিল কমিশন। সেই মতবিনিময় সভায় ২৮ টি দল অংশ নেয়। বাকি ১১টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মপরিকল্পনায় সাতটি করণীয় ঠিক করে ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিল কেএম নূরুল হুদা কমিশন। ইসির সেই কর্মপরিকল্পনার মধ্যে ছিল- আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার; নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণ; সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ; নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ; বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক ভোটকেন্দ্র স্থাপন; নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথম সংসদ অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানে সংসদের মেয়ার শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের কথা বলা হয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিভি/এইচকে
মন্তব্য করুন: