প্রেমে জড়ানোর শঙ্কায় ৫০ শতাংশ কিশোরীকে ফোন দেননা অভিভাবকরা: গবেষণা

প্রেমে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ৫০ শতাংশ কিশোরীর হাতে অভিভাবকরা মোবাইল ফোন দেন না। এডুকো পরিচালিত ‘বাংলাদেশে কিশোরীদের ওপর জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সভায় এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭১ শতাংশ কিশোরী স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না। আর ৫২ শতাংশ কিশোরী মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়।
এডুকোর কনসালট্যান্ট ইরফাথ আরা ইভা জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি; ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল এবং ময়মনসিংহের ভালুকায় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৭৬৮ জন কিশোর-কিশোরীর ওপর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জরিপ চালিয়ে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। আর গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছে মোট ৮৮১ জন কিশোর-কিশোরী। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ কিশোরী এবং ৪০ শতাংশ কিশোর। তাদের গড় বয়স ১৫ বছর।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৮৭ শতাংশ কিশোরী হেনস্তা, মৌখিক হয়রানি এবং ইভটিজিংয়ের শিকার। ৭৩ শতাংশ কিশোরী পারিবারিক ও বাল্য বিয়ে জনিত উদ্বেগ, ৬৬ শতাংশ মানসিক আঘাত (ডিসরাপশন), ২২ শতাংশ শারীরিক আঘাত, ৬০ শতাংশ ট্রমা, ৫৫ শতাংশ ভয়ের অনুভূতির মধ্যে দিন কাটায়। জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার কারণে ৬৯ শতাংশ কিশোরী আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে, ২৬ শতাংশ আত্মহত্যার চেষ্টা করছে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনলাইনে শিশুরা হয়রানির শিকার হচ্ছে, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এই ক্ষেত্রটাকে কীভাবে সুরক্ষিত করা যায়, আমাদের ভাবতে হবে। তিনি জানান, বাল্যবিয়ে বন্ধে মানবাধিকার কমিশন কাজ করছে। দেশের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আখতার জলি বলেন, শেলটার হোমের অপর্যাপ্ততা আমাদের একটি বড় দুর্বলতা। অনেকেই আশ্রয় হারাবার শঙ্কায় আইনগত ব্যবস্থা নেয় না। আমাদের দেশে নারী ও শিশু সুরক্ষায় যত আইন আছে, অনেক দেশেই এত আইন নেই। কিন্তু এত আইন করেও কিছু হবে না, যদি তা বাস্তবায়ন করা না যায়।
বক্তারা জানান, নারী ও শিশু সুরক্ষায় বাজেট একটি বড় বিষয়। কিন্তু শুধু বাজেট বা টাকা দিলেই হবে না। প্রতিটা পরিবারকে সচেতন হতে হবে। সবাইকে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে। নয়তো নারী ও শিশু নির্যাতন, কিশোরী হয়রানি বন্ধ হবে না।
এডুকো একটি স্পেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা; যা বাংলাদেশে ১৯৯৯ সাল থেকে শিশুদের শিক্ষা, সুরক্ষা ও সার্বিক উন্নয়নে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। এডুকো বাংলাদেশের কৌশলগত উদ্দেশ্য হলো পিছিয়ে পড়া ও অবহেলিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে শিশুদের উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করা।
এডুকো বাংলাদেশ ১০টি জেলায় পার্টনারশিপ এপ্রোচের মাধ্যমে ১৫টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে সাথে নিয়ে শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এই সংস্থাটি ২০২১ সাল থেকে কিশোর-কিশোরীদের বিভিন্ন ইস্যু বিশেষ করে তাদের দক্ষতা উন্নয়ন, সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন নিয়ে তার কর্ম এলাকায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে এবং ৩০৮টি ক্লাব গঠনের মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় এডুকো বাংলাদেশ তার কর্ম এলাকায় কিশোরীদের ওপর জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করে।
বিভি/ এসআই
মন্তব্য করুন: