• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

শত আকুতির পরও এলো না ফায়ার সার্ভিস, পাখিটি উদ্ধার করলো ডিপিডিসি

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ৩০ জুন ২০২৪

ফন্ট সাইজ
শত আকুতির পরও এলো না ফায়ার সার্ভিস, পাখিটি উদ্ধার করলো ডিপিডিসি

এফডিসিতে গাছের সঙ্গে সুতোয় আটকে ছটফট করছে একটি ভুবন চিল। দুপুরেই এই অবস্থা দেখে পাখিটি উদ্ধার করতে ৯৯৯ এর মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। কিন্তু দুই ঘণ্টায়ও আসেনি ফায়ার সার্ভিস। বার বার সংস্থাটির হেল্প লাইন নম্বরসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার নম্বরে কল করা হলেও কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি তাদের।

নিজেদের অফিসের বারান্দা থেকে পাখিটিকে ঝুলতে দেখে বার বার ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের ফোন করছিলেন দ্বীপ্ত টিভির রিপোর্টার সাদিয়া চৌধুরী। তিনি বাংলাভিশনকে বলেন, আমরা প্রথমে ট্রিপল নাইনের মাধ্যমে, ফায়ার সার্ভিসের হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে চেষ্টা করি। তাতে কাজ না হওয়ায় পরে পরিচিত কর্মকর্তাদের কল করি। ফয়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের শাহজাহান ভাইকে বলি একটা ইউনিট পাঠান। কিন্তু তিনি বলেন একটা পাখির জন্য এটা পাঠাতে হলে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে হবে। এরপর তিনি আর ব্যাকও করেননি, ফোনও ধরেননি। পরে আমি ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিনকে ফোন করি। তিনি তাদের গাড়ি এফডিসিতে ঢুকবে না বলে অযুহাত দেন। 

সাদিয়া চৌধুরী আক্ষেপ করে বলেন, আমি ফায়ার সার্ভিসের যে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি তাদের অধিকাংশের কথার স্টাইল ছিলে এই যন্ত্রপাতিগুলো খুবই এক্সপেন্সিভ। একটা পাখির জন্য এটা ব্যবহার করার দরকার নেই। কিন্তু আমার প্রশ্ন ছিলো, পাখির প্রাণ কি প্রাণ নয়, ফায়ার সার্ভিসের কাছে কি শুধু মানুষের প্রাণই প্রাণ, অন্য প্রাণ বাঁচানো তাদের জন্য নিষেধ?

খবর পেয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা পর পাখিটি উদ্ধারে আসে বনবিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। কিন্তু কোনো ঢাল-তলোয়ার ছাড়া পায়ে হেঁটে এসেছেন দুই বনকর্মী। তারা উদ্ধারে আগ্রহী হলেও নিজেদের কোনো সরঞ্জাম নেই জানিয়ে অনুরোধ করেন অন্তত ফায়ার সার্ভিসের একটি মই ধার দেওয়ার। কিন্তু তাতেও নারাজ ফায়ার সার্ভিস কর্তারা।

 

পাখিটির কষ্ট যত বাড়ছিল, আহাজারি বাড়ছিল প্রত্যক্ষদর্শীদেরও। তখনি বন কর্মীদের পরামর্শে ডিপিডিসির সহযোগিতা চান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক ড. কামরুজ্জমান মজুমদার। অনুরোধে সাড়া দিয়ে দুটি ইউনিট পাঠায় সংস্থাটি। ততক্ষণে নিভে গেছে সূর্য। টেলিভিশনের ক্যামেরার লাইট ব্যবহার করে শুরু হয় উদ্ধার কাজ। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় প্রায় ৭ ঘণ্টা পর উদ্ধার হয় পাখিটি। চিকিৎসাসহ পরবর্তী ব্যবস্থার জন্য হস্তান্তর করা হয় বন বিভাগের কাছে।

গাছে উঠে পাখিটি উদ্ধারকারী ডিপিডিসির অ্যাসিস্টেন্ট লাইনম্যান নাঈম আকন বলেন, এটা আমার জীবনের অনেক বড় একটি পাওয়া। আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল ফায়ার সার্ভিস কর্মী হয়ে জীবন বাঁচাবো। যদিও আমার চাকরি হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগে। আজ এই পাখিটি বাঁচাতে পেরে খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে আমার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।

বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট সঞ্জয় বন্দ বলেন, পাখিটি আমরা নিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের প্রাণী  চিকিৎসককে জানানো হয়েছে। তার পরামর্শ অনুযায়ী এটির চিকিৎসা শুরু হবে। সুস্থ হওয়ার পর প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হবে।

তবে পাখিটি উদ্ধার হলেও ফায়ার সার্ভিসের এমন অমানবিক আচরণ বেশ কষ্ট দিয়েছে উপস্থিত জনতা ও পরিবেশবাদীদের। প্রশ্ন উঠেছে বন বিভাগের প্রাণী উদ্ধারের সক্ষমতা নিয়েও।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য সানি রহমান বলেন, আমরা এতবার ফায়ার সার্ভিসকে অনুরোধ করেছি। যে কাজটা ডিপিডিসির লোকজন করেছে একই কাজ ফায়ার সার্ভিস করলে অনেক আগে হয়ে যেত, কারণ তারা এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। কিন্তু একবারের জন্যতো তারা অন্তত দেখে যেতে পারতো সেটাও করেনি। তারা পাখির প্রাণ বলে মূল্য দেয়নি। অথচ তাদের উচিত ছিল প্রতিটি প্রাণের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। ফায়ার সার্ভিস যেটা পারেনি সেটা করে দেখিয়েছে ডিপিডিসির নাঈম। এটা ফায়ার সার্ভিসের জন্য লজ্জার।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, আমি কিছুদিন আগে বেইলি রোডে আগুনে আগুনে আটকা পড়েছিলাম। আমি বুঝি আটকা পড়ার কষ্ট কতটুকু। সেই তাড়না থেকে খবর পেয়ে আমি ছুটে এসেছি। অথচ বেইলি রোডের আগুন থেকে সেদিন আমাকে যারা উদ্ধার করেছে সেই ফায়ার সার্ভিস আজ এই পাখিটিকে উদ্ধার করতে আসেনি। এত আকুতির পরও তাদের এমন নিষ্ঠুর আচরণে আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছি। তাদের উচিত ছিল সকল প্রাণকে সমান গুরুত্ব দেওয়া।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কর্মীরা যদিও আন্তরিকতার সাথে এসেছে কিন্তু তারা এসেছে খালি হাতে। তাদেরও বন্যপ্রাণী উদ্ধারের সক্ষমতা থাকা উচিত ছিল। এ বিষয়টা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ই ঝড় বৃষ্টিতে প্রাণীরা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, আটকে যায়। তাদের উদ্ধারে সহযোগিতার জন্য ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে বন বিভাগের আলোচনা করা দরকার।

বিভি/রিসি

মন্তব্য করুন: