• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ১০ জুলাই ২০২৪

ফন্ট সাইজ
মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ

মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালসহ (৭) সাত দফা দাবিতে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বুধবার (১০ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আকম জামাল উদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মিজানুর রহমান, শেখ আতিকুর বাবু, সাজ্জাদ হোসেন, রাশেদুজ্জামান শাহীন, এরশাদ হোসেন, মনির হোসেন মোল্লা, হিমু মাইন, মিজানুর রহমান, সনেট মাহমুদ, আঃ রশীদ মণ্ডল, শাহীন সিকদারসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশের বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘উচ্চ আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা অবশ্যই বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবাররা উচ্চ আদালতের আপীল বিভাগে ন্যায়বিচার পাবেন। আজকে আপীল বিভাগে চার সপ্তাহের স্টে অর্ডার দেয়া হয়েছে। আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষা করছি। আদালতে আইনী প্রক্রিয়া চালানোর পাশাপাশি কোটা পুনর্বহালসহ সাত দফা দাবিতে রাজপথে নিয়মিত কর্মসূচী ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোটা বাতিল আন্দোলনের নামে যারা সুপ্রিম কোর্টের গেটে যেয়ে হাইকোর্টকে ভুয়া বলে শ্লোগান দিয়েছে তাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে জঘন্য ভাষায় কটূক্তি ও গালিগালাজ করে যাচ্ছে যা আইনের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট অপরাধ। অবিলম্বে এদেরকে চিহ্নিত করে ছাত্রত্ব বাতিলসহ আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে রক্ষা করতে ও একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের দোসরদের অপতৎপরতা ঠেকাতে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে কোটা সুবিধার মাধ্যমে চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন। আশা করি উচ্চ আদালতের আপীল বিভাগে ন্যায় বিচার নিশ্চিতের মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল হবে।’

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার স্বপ্ন দেখলো ভালো ভাবে বেঁচে থাকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কল্যাণে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি যখন ক্ষমতায় আসলেন ততদিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে যায়। স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতায় থাকার কারণে দীর্ঘ ২১ বছর এই কোটা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোন কাজে আসেনি। যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেখলেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স শেষ তখন তিনি ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা তাদের সন্তান পর্যন্ত বর্ধিত করেছিলেন। কিন্তু তিনি বার বার লক্ষ্য করছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী আমলাদের ষড়যন্ত্রের কারণে সুকৌশলে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিতে নেওয়া হচ্ছে না। কারণ ১৯৭৫-৯৬ সালের মাঝে নিয়োগকৃত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আমলারা ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের বংশধর আমলারা সুকৌশলে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পাওয়া যাচ্ছে না বলে পদগুলো শূন্য দেখানো শুরু করেছিল। এরপর বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে ৫ বছর চাকুরী প্রত্যাশী বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকা অবস্থায় আবার দুই বছর নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছিল। দীর্ঘ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে কোটা সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখার কারণে সন্তানদেরও চাকরির বয়স শেষ পর্যায়ে যাওয়ার কারণে নাতি-নাতনী পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। প্রশাসনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখার জন্য বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের ন্যায় প্রজন্ম পর্যন্ত কোটা সুবিধা বর্ধিত করা হয়েছে যা অত্যন্ত যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য।’

ঢাবির অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও প্রজন্ম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ আমাদের সাংবিধানিক অধিকার ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপহার মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখবেন এবং ন্যায় বিচারের প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে বঞ্চিত করবে না। কারণ চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা কখনোই বৈষম্য তৈরি করে না বরং কোটা ব্যবস্থা সবসময় বৈষম্য দূর করে সকলের জন্য সমতা নিশ্চিত করে।’

সনেট মাহমুদ বলেন, ‘২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুজব সৃষ্টিকারী ও ঢাবির ভিসির বাসায় হামলাকারীদেরকে চিহ্নিত করে আজও পর্যন্ত বিচার করা হয়নি। তদন্ত রিপোর্ট এখনো প্রকাশ হয়নি। অবিলম্বে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে ভিসির বাসায় হামলাকারী ও উস্কানিদাতাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’

এরশাদ হোসেন বলেন, "কোটা কখনো বৈষম্য তৈরী করে না বরং কোটা ব্যবস্থা রাষ্ট্রে বৈষম্য দূর করে সমতা নিশ্চিত করে। অনেককে ভুল বুঝিয়ে রাস্তায় নামিয়ে সেদিন নুরু গংরা নিজেদের ফায়দা হাসিল করেছিল যা ইতিমধ্যে দেশপ্রেমিক ছাত্রসমাজের নিকট প্রমাণিত হয়েছে। দেশপ্রেমিক সাধারণ শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে নুরু গংদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। নারী ও জেলা কোটার কারণে রাষ্ট্রের অধিকাংশ নাগরিক কোটা সুবিধার আওতায় পড়েন। বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রে কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কোটা পুনর্বহালের কোন বিকল্প নেই।’

শহীদের সন্তান মিজানুর রহমান বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল করার যৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। সামাজিক সমতা নিশ্চিত করার জন্য সাংবিধানিক অধিকার কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তকে এদেশের শিক্ষার্থী সমাজ ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কারণ চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা কখনোই বৈষম্য তৈরী করে না। কোটা ব্যবস্থা সবসময় বৈষম্য দূর করে চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করে। রাষ্ট্রে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সমান সুযোগ সৃষ্টি করে। সরকারের নিকট দাবি, অবিলম্বে মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায় দ্রুত কার্যকর করে নতুন পরিপত্র জারিসহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মরা দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।"

বিক্ষোভ সমাবেশের ৭ দফা দাবিসমূহ: 
১। সংবিধান অনুযায়ী বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৮ সালের অবৈধ পরিপত্র বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর উপহার মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল, সংরক্ষণ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।

২। কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীরা সকলেই মেধাবী, কেউ অমেধাবী নয়। সাধারণ প্রার্থীদের সাথে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোটা প্রয়োগ হওয়ার কারণে বৈষম্যমূলক মেধা শব্দ পরিবর্তন করে সাধারণ শব্দ সংযোজনপূর্বক সাধারণ প্রার্থী নামকরণ করে সকল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

৩। রাজাকারদের নামের তালিকা প্রকাশ করে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের নোটিশ বোর্ডে তালিকা প্রদর্শনপূর্বক নাগরিকত্ব বাতিলসহ এদের বংশধরদের চিহ্নিত করে চাকুরীচ্যুত করার পাশাপাশি সকল সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

৪। সাম্প্রতিক সময়ে কোটা বাতিল আন্দোলনের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নিয়ে কটূক্তিকারীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে ছাত্রত্ব বাতিলসহ বিশেষ ট্রাইবুনালে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি হলোকাস্ট ডিনায়াল এ্যাক্টের ন্যায় আইন প্রণয়ন করতে হবে।

৫। সমগ্র দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর হামলা, মামলা, হত্যা, নির্যাতন ও কটূক্তি স্থায়ীভাবে প্রতিরোধ করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।

৬। ২০১৮ সালে কোটা বাতিল আন্দোলনের নামে পুলিশের ওপর নগ্ন সন্ত্রাসী হামলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৭। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে হবে।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2