কাপ্তাই হ্রদ থেকে টানা ৩ মাস ২২০ মেগাওয়াট হারে বিদ্যুৎ উৎপন্ন

কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে টানা ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে বলে জানা গেছে। কোন কোন দিন আরো বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় বলেও সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই উপজেলায় লাগাতার বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উল্লেখিত বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, গত জুলাই মাসের শুরু থেকে কাপ্তাই ও রাঙ্গামাটি জেলায় লাগাতার ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এই বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় ১৩ দিন কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পিলের ১৬টি গেইট খুলে দেওয়া হয়। পাশিপাশি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি জেনারেটরের সবগুলো চালু রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এতে ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই জাতীয় গ্রীডে সঞ্চালন করা হয় বলেও তিনি জানান। টানা ভারি বৃষ্টিপাত কাপ্তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আশির্বাদ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তবে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র লাগাতার ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরে আনন্দিত হলেও কাপ্তাই হ্রদে বৃদ্ধি পাওয়া পানিতে অনেক ঘরবাড়ি ডুবে যায় এবং বিপুল সংখ্যক চাষীর চাষাবাদ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, হ্রদ তীরবর্তী এলাকায় অনেক কৃষক বিভিন্ন শাকসবজির চাষাবাদ করেন। কিন্তু ঘরে ফসল তোলার আগেই গত জুলাই মাস থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে চাষীদের আবাদকৃত সকল শাকসবজীর বাগান পানিতে তলিয়ে যায় এবং অনেক ঘরবাড়ি ডুবে যায়। এখনো কিছু কিছু ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত থাকায় অনেক মানুষ ক্ষতির মুখে রয়েছে।
এ ব্যাপারে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের আরো জানান, টানা বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যায়। কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ার ফলে বিদ্যুৎ উৎপানও বৃদ্ধি পায়। পানি বৃদ্ধির ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ে মাত্র ১৬ পয়সা। তবে কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধির ফলে অনেক ঘরবাড়ি এবং চাষাবাদকৃত জমি পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি সমবেদনা জানান। পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদের ১০৯ ফুট মীন সী লেভেল এর নিচের জমিতে সব রকমের চাষাবাদ এবং ঘরবাড়ি নির্মাণ না করার জন্য কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত সাবধান করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
হ্রদের পানি কম থাকলেও ১০৯ ফুট এমএসএল এর নিচের জমিতে কেউ যাতে চাষাবাদ না করেন সে জন্য তিনি রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনকেও লিখিতভাবে অবিহিত করেছেন। তবে সতর্কতাবানী আমলে না নিয়ে যারা কাপ্তাই হ্রদে ১০৯ ফুট এমএসএল এর নিচের জমিতে চাষাবাদ এবং ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলেও প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান।
তিনি আরো বলেন, কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে লেভেলে পানি রাখা হতো এখনও ঠিক একই লেভেলে পানি ধারন করা হচ্ছে। ধারণ ক্ষমতার বাইরে এক বিন্দু পানিও কাপ্তাই হ্রদে ধরে রাখা সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে সবাইকে সতর্কতা মেনে কাপ্তাই হ্রদের ১০৯ ফুট মীন সী লেভেল এর নিচে ঘরবাড়ি নির্মাণ এবং চাষাবাদ না করার জন্য প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের সকলের প্রতি আহবান জানান।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: