• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সিটি করপোরেশনের সব ক্ষেত্রেই ছিল মেয়র আতিকের স্বেচ্ছাচারিতা

প্রকাশিত: ১৩:৪০, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

আপডেট: ১৩:৪৭, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

ফন্ট সাইজ

মেয়র আতিকুল ইসলাম। মেয়র হিসেবে জনসেবার চেয়েও ব্যতিক্রমী আয়োজনে জনগণকে মাতিয়ে রাখাই ছিল যার অন্যতম কাজ। তাইতো কোথাও গান কোথাও অভিনয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের।

নানান সব আয়োজনের মধ্যদিয়ে নিজেকে কিছুটা মানবিক বা জনদরদী হিসেবেও বেশ প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন আতিক। যদিও পালিয়ে যাওয়ার পর বেরিয়ে এসেছে তার এই মানবিকতার মুখোশের আড়ালের চিত্র।

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। হাসিনা পালানোর সময় থেকেই লোক চক্ষুর আড়ালে চলে যান মেয়র আতিকুল ইসলামও। কিন্তু নিজের সিন্ডিকেটের কয়েকজন কর্মচারি ও সাংবাদিককে নিয়ে ১৮ আগস্ট গোপনে নগর ভবনে প্রবেশ করেন আতিক। নিয়ে যান বহু কাগজপত্র। তার এই লুকোচুরির কারণ খুঁজতে গিয়ে একের পর এক বেরিয়ে আসছে  শত কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য।

গেল কোরবানির ঈদে কোটি টাকার গরু ও লাখ টাকার ছাগল নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসে মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো। খামারটি নিয়ে নেটিজেনরা সরব হলে এটি খালের ওপর করা হয়েছে দাবি করে ভেঙে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সেই সময় এই ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, সাদিক এগ্রো থেকে কোটি টাকার গরুটিও কিনেছে মেয়র আতিকের ভাতিজা শাকের। উঠে আসে সাদিক এগ্রোর ব্যবসায় মেয়র পরিবারের সম্পৃক্ততার তথ্যও। অভিযোগ আছে, নিজের সম্পৃক্ততার তথ্য লুকাতেই তড়িঘড়ি করে খামারটি উচ্ছেদ করেন তিনি।

কিন্তু ওই সময় খালপাড়ে থাকা সাদিক এগ্রো এবং বস্তি ভাঙলেও খালের ঠিক মাঝখানে সদ্য গজে ওঠা রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সুরের ধারা নামের গানের স্কুলটি ভাঙেনি নগর প্রশাসন। এ নিয়ে নানান প্রতিবাদ হলেও বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করেননি মেয়র। কারণ খালের ওপর ওই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করতে সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন খোদ আতিকই। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে মেয়র আতিক পালিয়ে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের নথিতে।

মেয়রের ঐচ্ছিক তহবিলের নামে তিনি সুরের ধারাকে এই টাকা দিয়েছিলেন ডিএনসিসির সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন বিভাগ থেকে। শুধু সুরের ধারাকে অনুদান দেওয়াই নয়, এভাবে ঐচ্ছিক তহবিলের নামে ৫ বছরে ৩৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। এখনো এই ৩৭ কোটি টাকার বড় অংশেরই হিসাব পাওয়া না গেলেও এর মধ্যে মাত্র ১ কোটি ৬০ লাখ ৬৫ হাজার টাকার হিসাব পাওয়া গেছে নগর প্রশাসনের কাছে। এই হিসাব যাচাই করে দেখা গেছে খাল দখলকারী সুরের ধারাকে ১০ লাখ, মেয়রের এপিএস এর সংগঠন বিডি ক্লিনকে ২ ধাপে সাড়ে ১২ লাখ টাকাসহ নিজের পছন্দের ব্যক্তি ও সংগঠনকে বিলিয়েছেন নগরবাসীর টাকা।

অভিযোগ আছে, সিটি করপোরেশনের সব ক্ষেত্রেই ছিল মেয়রের স্বেচ্ছাচারিতা। মনমতো পদ বানিয়ে নিজের আত্মীয় স্বজনদের বসিয়েছেন সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পদে। তাদের দিয়েই সকল দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ করতেন আতিক। সংশ্লিষ্ট পদে অভিজ্ঞতা না থাকলেও মেয়রের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন ভাতিজা ইমরান আহমেদকে। বিদেশী সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে শুধু উত্তর সিটি এলাকার জন্য বানিয়েছেন চিফ হিট অফিসার নামে নতুন পদ। এ পদে বসিয়েছেন নিজের মেয়েকে। শ্যালিকার প্রতিষ্ঠান শক্তি ফাউন্ডেশনকে দিয়ে করিয়েছেন নগর এলাকার বৃক্ষরোপনের কাজ, ভাগনেকে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছেন সকল ঠিকাদারীর কাজ। সবচেয়ে বেশি লুটপাট করেছেন এপিএস ফরিদ উদ্দিনের মাধ্যমে। তার বিরুদ্ধে ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাটের নথিপত্র পাওয়া গেছে।

তবে মেয়র ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের এসব অনিয়ম জানলেও লিখতে পারেনি গণমাধ্যম। কারণ তার ছিল একটি শক্ত সাংবাদিক সিন্ডিকেটও। নানান অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতির পাহারাদার এসব সাংবাদিকদের নিয়ে একাধিকবার বিদেশ সফরও করেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

১৮ আগস্ট নগর ভবনে গিয়ে ধাওয়া খেয়ে পালানোর পর থেকে দীর্ঘদিন নিরুদ্ধেশ ছিলেন আতিকুল ইসলাম। অবশেষে বুধবার তাকে গ্রেফতার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। দুর্নীতির মাধ্যমে তার আয় করা সকল অর্থ আবারও সিটি করপোরেশনের তহবিলে ফিরে আসবে এখন সেটাই প্রত্যাশা নগরবাসীর।


 

বিভি/এআই

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2