• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

আওয়ামী লীগের হয়ে ইউনূস সরকারকে হটাতেই মাঠে আমলারা! (ভিডিও)

নিয়াজ মাখদুম

প্রকাশিত: ১৬:৪৭, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৬:৫০, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ফন্ট সাইজ

শেখ হাসিনার পতনের আগে জুলাই মাসের ১৬ তারিখ অর্থাৎ অভ্যুত্থানের ২০ দিন আগেও যে কর্মকর্তা শেখ হাসিনার তোষামোদিতে ছিলেন এক কাঠি সরেস। অর্থনীতির শেখ হাসিনা মডেলকে ৪১ সাল পর্যন্ত যেতে চেয়েছিলেন প্রজাতন্তের এই উঠতি অফিসার। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার ছাত্র জনতার বিপ্লবে, শেখ হাসিনার পতন তারপর পলায়ন ভারতে।

দেশের মানুষের আকাঙ্খার বাস্তবায়নে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কারে মনোনিবেশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনপ্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী উপসচিবদের পদোন্নতি দিতে পরীক্ষা এবং প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের কোটা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ সুপারিশের কথা জানান। এরপরই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন আওয়ামী লীগের সুবিধা নেয়া এসব আমলারা। স্বৈরাচারের এসব দোসররা গিরগিটির মতো রং বদলিয়ে সুশীল সেজে দেশকে অস্থির করার মিশনে নামে। মুয়ীদের বহিস্কার দাবির পাশাপাশি শৃঙ্খলা না মেনে দিতে থাকেন নানা ধরনের হুমকি ধামকি।

প্রশাসন ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা নিয়ম ভেঙে গত রবিবার সচিবালয়ে শোডাউন করেন। মাঠে নামেন অন্য ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারাও। তাদের সংগঠন ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ গত মঙ্গলবার কলমবিরতির নামে এক ঘণ্টা কাজ থেকে বিরত থাকেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার মানববন্ধন এবং ৪ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দেন। দু’পক্ষকেই  জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।

রীতিমতো ব্যানার টানিয়ে সভা করেন প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে সরকারের প্রতি এমন অবস্থান চাকরিবিধি ও শিষ্টাচারের লঙ্ঘন বলছেন বিশ্লেষকরা। 

সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার ৩০ (এ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার বা কর্তৃপক্ষের কোনো আদেশ বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো রূপ অসন্তোষ বা ক্ষোভ প্রকাশ বা আন্দোলনে কোনো সরকারি কর্মচারী অংশগ্রহণ করবেন না।’ বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীদের সবাই কর্মচারী; কর্মকর্তা বলে কিছু নেই। ৩০ ধারার সি উপধারায় বলা হয়েছে, সরকার বা কর্তৃপক্ষের কোনো আদেশ বা সিদ্ধান্ত বদলের জন্য চাপ দিতে পারবেন না কর্মচারীরা। ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ২(ই) ধারায় এমন আচরণকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কেউ তা করলে সরকার তিরস্কার থেকে শুরু করে বরখাস্তের মতো শাস্তি দিতে পারবে। 

তাহলে হঠাৎ করে কেন তারা এতোটা অস্বাভাবিক কর্মকান্ডে যুক্ত হচ্ছেন? তাদের এমন কার‌্যক্রমের উদ্দেশ্য ই বা কি? তবে কি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রতিচ্ছবি হয়ে দেশকে অস্থির করার পায়তারা করছেন তারা-এমন প্রশ্ন এখন জনমনে। অনেকের ধারণা,অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হটাতে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছেন আমলারা।

গত দেড় দশকে ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করে প্রশাসন যন্ত্রে দলীয়করনের নিকৃষ্টতম উদাহরণ তৈরি করেছিলেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। জনস্বার্থ উপেক্ষা করে আইন প্রণয়ন, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়নসহ দেশবিরোধী অনেক সিদ্ধান্তের পেছনে ছিলেন কতিপয় দলবাজ আমলা। আর সেটিকে পুজি করে দেশকে ফোকলা করে ফেলেছেন হাসিনার মন্ত্রী-এমপিসহ সুবিধাভোগীরা। অঘোষিতভাবে আমলারা পরিণত হয়েছিল দলীয় বাহিনীতে। পদোন্নতি বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতা নয় বরং হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের অনুগত ও বিশ্বস্ত আমলারাই পেয়েছিলেন অগ্রাধিকার। কমিশন বাণিজ্যের সুবিধা নিতে  অনেক ক্ষেত্রে আমলারা নিজের গন্ডির বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন।  যা নিয়ে তৎকালীন সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও সংসদে ক্ষোভ ঝেড়েছেন। 

এই দলবাজ কর্মকর্তাদের সংখ্যা কত? গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী সেটি কমপক্ষে সাত লাখ। যার পুরোটাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে নিয়োগ পাওয়া। তাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন ওই সময়ে পদোন্নতি পাওয়া আরও সাড়ে তিন লাখের বেশি। সব মিলিয়ে সরাসরি নিয়োগ ও পদোন্নতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘সুবিধাভোগী’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১০ লাখ ৫০ হাজার ৬৮৩ জনে, যা প্রশাসনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। শেখ হাসিনার হাতিয়ার পুরোনো আমলাদের সরানো তো যায়নি বরং বিভিন্ন সংস্থায় নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রেও ঢুকে পড়ছেন তার বিশ্বস্ত অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনে সংস্কার যত বিলম্বিত হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য তা ততই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: