‘তৌহিদী জনতা’য় জঙ্গী ও আওয়ামী কানেকশন

ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নারী হেনস্থাকারীকে থানা থেকে ছাড়াতে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করে তৌহিদী জনতার পরিচয় দেওয়া কতিপয় ব্যক্তি। দোষীকে ছাড়িয়ে নিতে প্রথমে শাহবাগ থানা পরে সিএমএম কোর্টের সামনে অবস্থান নেয় তারা।
এই ধর্মীয় লেবাসধারীদের বাড়াবাড়ির মুখে এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তিকে ছাড়তেও বাধ্য হয় প্রশাসন। তারপর নারী হেনস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আবার পাগড়ি পরিয়ে সংবর্ধনাও দেয় কথিত সেই তৌহিদী জনতা। যা নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন আলেম ওলামা এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
এই ঘটনার মাস খানেক আগে একই পরিচয়ে অমর একুশে বই মেলায়ও তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রিকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে এই তৌহিদী জনতা। অথচ বাংলা একাডেমির মাধ্যমেই সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব ছিলো ।
এখানেই শেষ নয়, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে তৌহিদী জনতার ব্যনারে কখনো খেলাধুলায় বাধা, কখনো নাটকের শ্যুটিং বানচালসহ নানা বির্তর্কিত কার্যক্রমে জড়িত হচ্ছেন তারা। তাদের এসব বিতর্কিত কার্যক্রমে বিশ্ব পরিমণ্ডলে বেশ সমালোচনার মুখে ফেলেছে বাংলাদেশের মুসলিম কমিউনিটিকে। এই ঘটনাকে পুঁজি করে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে নানান অপতথ্য ছড়াতেও দেখা গেছে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। যা নিয়ে বিব্রত দেশের আলেম সমাজও।
তৌহিদী জনতার নামে তাহলে কারা সৃষ্টি করছে এসব বিশৃঙ্খলা?
দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর তৌহিদী জনতার পরিচয়ে প্রতিটি বিশৃঙ্খলায় নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করেছেন ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্ট চেক বিভাগের বাংলাদেশ সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির। ফ্যাক্টচেকে উঠে আসা তথ্য তুলে ধরে তিনি জানিয়েছেন, প্রতিটি ঘটনায় কোনো না কোনোভাবে চারজন ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। যারা বিভিন্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ও আওয়ামী ধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
এসব ঘটনার সঙ্গে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমানদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া তিন জনের একজন আতাউর রহমান বিক্রমপুরী। তার বিভিন্ন অনলাইন কার্যক্রম যাচাই করে দেখা গেছে, তিনি ‘এন্টি শাতিম মুভমেন্ট’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ চালান যেখানে ‘শাতিমে রসুল’ হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করা গেলে তাকে হত্যার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া গণতন্ত্র চর্চাকারী মুসলিমদের তিনি ‘কাফির মনে করেন। নাস্তিকদের হত্যার বার্তা ছাড়ানো তার অনেক কার্যক্রম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া গেছে। আতাউর রহমান বিক্রমপুরী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য হিসেবে ২০২১ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
এসব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় জড়িত অপর ব্যক্তি হলেন, আবু সাঈদ শের মোহাম্মদ খান। ২০২২ সালের নভেম্বরে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার অর্থ সরবরাহকারী সদস্য হিসেবে তাকে আটক করে র্যাব। এর আগে ২০১৫ সালে হাটহাজারিতে তার নামে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলাও হয়েছিলো।
তৃতীয় ব্যক্তি হলেন মোহাম্মদ তামিম। তিনি সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের ছাত্র। তিনিও উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য ২০১৫ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তবে তিনি কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে শাহবাগে নারী হেনস্থাকারী অর্নবকে ছাড়িয়ে নিতে তৎপর আরমান উদ্দিন বই মেলায় সব্যসাচির স্টলের ঘটনায় ছিলেন সামনের সারিতে। তার সঙ্গে ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে।
ইসলাম উগ্রবাদকে পছন্দ করে না জানিয়ে ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন, ইসলামকে বিতর্কিত করতেই এসব কর্মকাণ্ড করছে ভিনদেশী কিছু এজেন্ট।
ধর্মের নামে উগ্রবাদ ছড়িয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দেশে সুষ্ঠু ধর্মচর্চার পরিবেশ ধরে রাখতে সরকার তড়িৎ ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের।
এ বিষয়ে ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুল্লাহ আল আমিন বাংলাভিশনকে বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছে। নাস্তিক্যবাদকে আমরা নিঃসন্দেহে অপছন্দ করি। কিন্তু তাই বলে তাদের ওপর হামলা করতে হবে, জোর করে ওড়না পরাতে হবে এই নির্দেশ ইসলাম দেয়নি। কুরআনে অসংখ্য বর্ণনায় ইসলামকে সুন্দরভাবে মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। যারা জোর করে ইসলাম পালন করাতে চাচ্ছেন তারা উল্টো ইসলামের ক্ষতি করছেন। এটা বিরোধীদের চক্রান্তের অংশ।
ছারছীনা দরাবর শরীফের ছোট পীর মাওলানা শাহ মো. আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, রাসূল (সা.) এর যুগেও নর্তকীরা ছিলো। রাসূল (সা.) কিংবা সাহাবীরা কখনো সেখানে গিয়ে বাধা দেয়নি। একটা ঢিলও মারেনি, বোমাও মারেননি। বরং তারা সুন্দরভাবে দাওয়াতের মাধ্যমে সেই জাহেলিয়াতকে পরিবর্তন করেছেন। এখন যারা জিহাদ করে সমাধান করতে তারা আসলে কিছুই করতে পারবে না। শুধু শুধু ইসলামকে বিতর্কিত করার চক্রান্ত করছে। আমি মনে করি এটা ভারতীয় চক্রান্তের অংশ। দেশকে অস্থিতিশীল করতে অনেক ইসলামপন্থী ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর হয়ে এসব করছে। এটা ইসলামের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্থ করার চক্রান্তের অংশ।
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: