• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তর ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর টার্গেট থেকে বহুদূরে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২২ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ২৩:১৭, ২২ এপ্রিল ২০২৫

ফন্ট সাইজ
নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তর ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর টার্গেট থেকে বহুদূরে বাংলাদেশ

রফতানিতে আধিপত্য ধরে রাখতে ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। কিন্তু, যে গতিতে বিষয়টি এগোচ্ছে তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা। কার্বন নিঃসরণ কমানোর টার্গেট পূরণের অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়। 

১৯৯৬ সালে দেশে প্রথম নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধা চালু করেছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ শক্তি। এরপর সরকারি উদ্যোগে  ২০১৭ সালে সোলার প্যানেলভিত্তিক নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগের প্রবেশ করে বাংলাদেশ। জামালপুরে গড়ে ওঠা সেই সোলার প্যানেল থেকে তিন মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ যুক্ত হয় জাতীয় গ্রিডে। এরপর একে একে যুক্ত হয় বেশকিছু সোলার প্যানেল। এ ধারাবাহিকতায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তিস্তাপাড়ে বসানো হয় ২০০ মেগাওয়ার্ট ক্ষমতার সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র। সাড়ে ছয় হাজার একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয় পাঁচ লাখ ৫০ হাজার সোলার প্যানেল। ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগে তৈরি এ সোলার প্যানেলটি থেকে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয় সৌরশক্তিচালিত বিদ্যুৎ। 

দেশে সোলার প্যানেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠলেও অগ্রগতি কাঙ্খিত নয়। এখন পর্যন্ত স্থাপিত এক হাজার ৫৫৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার নবায়নযোগ্য জ্বালানির ১২৬৫ মেগাওয়াট-ই সোলার প্যানেলভিত্তিক। এরমধ্যে অফ-গ্রিডে ৩৭৭ মেগাওয়াট এবং অন-গ্রিডে ৮৮৮ মেগাওয়াট। নবায়নযোগ্য জ্বালানির বাকি উৎসগুলোর মধ্যে ৬৩ মেগাওয়াট বায়ুচালিত, ২৩০ মেগাওয়াট হাইড্রো এবং বাকি এক মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ আসে বায়োগ্যাস ও বায়োম্যাস থেকে। 

২০২০ সালের টার্গেট অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মোট উৎপাদনের ২০ শতাংশ। পরবর্তীতে সেই টার্গেট সংশোধন করে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০৫০ সাল নাগাদ শতভাগ উৎপাদন নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের টার্গেট ঠিক করা হয়। কিন্তু, বাস্তবতা হলো ২০২৫ সালে এসেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে মোট উৎপাদনের তিন থেকে চার শতাংশের মধ্যে। 

টার্গেট অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের অগ্রগতি না হওয়ায় কার্বন নিঃসরণ কমাতেও উল্লেখযোগ্য সফলতা আসেনি। তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন-বিজিএমইএ নেতারা ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক কারখানায় ৩০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর টার্গেট ঠিক করলেও কাঙ্খিত অগ্রগতি হয়নি। ২০১৩ সালের রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে হাজারো মানুষের প্রাণহানির ঘটনার পর  ব্র্যান্ড বায়ারদের চাপে দেশে স্থাপিত হয়েছে ২৪০টি গ্রিন ফ্যাক্টরি। লিড সার্টিফাইড সনদের জন্য কারখানার ছাদে বসানো সোলার প্যানেল থেকে চাহিদার ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ পান সবুজ কারখানার মালিকরা। কিন্তু, বাস্তবতা হলো তৈরি পোশাক খাতের আরও প্রায় তিন হাজার কারখানা এখনো চলছে জীবাষ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে। 

চাহিদানুযায়ী সোলার প্যানেল স্থাপন বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিরো কার্বন নীতি বাস্তবায়নে অনেক কারখানা মনোযোগ দিলেও এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন হাজারো উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। এজন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপকরণের ওপর বসানো উচ্চ করহারই প্রধান বাধা, বলছেন রফতানিকারকরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোশাক খাতের বড় সংগঠন-বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ব্যবসায়ীরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে চান। কিন্তু, সরকারি বাধার কারণে বাড়ছে না। সরকারই নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে আন্তরিক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রশ্ন করেন, ২০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি কর দিয়ে ব্যবসায়িরা কেন সোলার প্যানেল বসাবে? উদ্যোক্তারা যেখানে সরকারকে সহায়তা করতে চায়, সেখানে সরকার ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত না করে ব্যবসা করছে। কার স্বার্থে এনবিআর নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপকরণ আমদানির ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করেছে তা বোধগম্য নয়। অন্তর্বর্তী সরকার নতুন বাজেটে সোলার প্যানেলসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উপকরণের উচ্চ করহার প্রত্যাহার করবে এমন প্রত্যাশা করেন মোহাম্মদ হাতেম।

বিশ্ববাজারে টিকে থাকার মানদণ্ড পূরণে জাতিসংঘের জলবায়ু সনদে স্বাক্ষর করেছে দেশের কয়েকটি কারখানা। এর মধ্যে অন্যতম টিম গ্রুপের পোশাক কারখানা ফোর-এ ওয়ান ডাইং। প্রতিষ্ঠানটির সাসটেইনেবিলিটি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন জানান, ইউএনএফসিসিসিতে সই করেছেন তারা। তাদের প্রতিষ্ঠানে বসানো ছাদভিত্তিক সোলার প্যানেলের মাধ্যমে দেড় মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার অর্ধেকই পূরণ করা হয়। যখন কারখানা বন্ধ থাকে তখন সেই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হয়। যা দিয়ে সাধারণ মানুষের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কমিউনিটিরও সহায়তা হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।   

গবেষকরা বলছেন, শক্তির রূপান্তর শুধু পরিবেশের জন্যই উপকারী নয়, খরচ কমাতেও বেশ কার্যকরি। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে শিল্পবান্ধব নীতি প্রণয়ণ জরুরি। ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকনোমিকস এন্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস এর মূখ্য জ্বালানি বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে পোশাক কারখানাগুলোয় অর্থায়নের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ খাতে বিনিয়োগ ও ঋণ বাড়াতে হবে। কিন্তু, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বা ঋণ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা সহায়ক নয়। বড় ও ছোট পরিসরে সোলার প্যানেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে সরকারকে বাড়তি নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সেজন্য ব্যাটারি স্টোরেজ বাড়ানো এবং অন্যান্য খাতের জন্য ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি প্রণয়নের তাগিদ দেন শফিকুল আলম।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2