রবিবার থেকে ইসির সংলাপ শুরু

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য আগামী রবিববার (১৩ মার্চ) নির্বাচন নিয়ে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন শিক্ষকদের নিয়ে বসবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
এই বিষয়ে ইসির যুগ্ম-সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, আগামী রবিবার বিকাল ৩টায় নির্বাচন নিয়ে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সঙ্গে বসা হবে। তাদের পরামর্শ নিয়ে কমিশন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে পরবর্তীতে ধারাবাহিক সংলাপে বসবে।
তিনি বলেন, ৩০ জনের মত শিক্ষাবিদ/বুদ্ধিজীবির তালিকা করা হয়েছে। তবে তালিকাটি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
জানা গেছে, বিশিষ্টজনদের মতামত নেওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে সুশীল সমাজ, নারী নেত্রী, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি’র সঙ্গে সংলাপে বসছে কমিশন। তবে কোন মহলের সঙ্গে কবে বৈঠকে বসবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
ইসি সূত্র জানায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা দায়রা জজ বেগম রাশেদা সুলতানা, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমানকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নির্বাচন ভবনে অফিস শুরু করে হাবিবুল আউয়াল কমিশন। ওইদিন বিকেলে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে নতুন কমিশন।
১ মার্চ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন করে। ২ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবসে অংশগ্রহণ এবং ৬ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌদে শ্রদ্ধা জানায় কমিশন। এখন নতুন কমিশন আস্তে আস্তে নিজেদের কাজে মন দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ট্রেডিশনালি বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপে বসেন। ২০০৮ সালে ইসির নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করা এটিএম শামছুল হুদা কমিশন মেয়াদকালে দুইবার সংলাপে বসেছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া কাজী রকিবুদ্দীন আহমেদ কমিনের সময়ও সংলাপ হয়েছিল। তবে হাবিবুল আউয়াল কমিশনের মতো দায়িত্ব নিয়েই সংলাপে বসেনি কোনো কমিশন।
সদ্য বিদায়ী কেএম নূরুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নিয়েছিল ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি। এরপর কর্মপরিকল্প ঠিক করে ওই কমিশন ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সংলাম শুরু করে। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে ২৪ অক্টোবর সংলাপের মাধ্যমে এই পর্ব শেষ করে বিদায়ী কমিশন। ওই সংলাপে ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষণ সংস্থা, নারী নেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সাথে সংলাপ করা হয়। সংলাপ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পাঁচ শতাধিক সুপারিশ আসে। সেখানে পাওয়া সুপারিশগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে (সংবিধান সংশ্লিষ্ট, আইন প্রণয়ন বিষয়ক ও নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার) সাজায় কমিশন।
সংলাপে আলোচনার সুবিধার্থে কার্যপত্রে যে ৯টি আলোচ্যসূচি অন্তর্ভূক্ত করেছিল কেএম নূরুল হুদা কমিশন।
সেই সংলাপে কিছুটা আশ্বস্ত হলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পর বিএনপিসহ সমমনা বেশকিছু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কেএম নূরুল হুদা কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচন বর্জন করে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এজ এ হোল, আমরা তাদের সহায়তা করবো। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সহায়তা না করে, পলিটিক্যাল লিডারশিপে যদি নূন্যতম সমঝোতা না থাকে, আমি তো তাদের মুরব্বী হতে পারবো না। উনারা আমাদের থেকে অনেক বেশি জ্ঞানী, অভিজ্ঞ। আমরা তাদের কাছে অনুনয়-বিনয় করবো আপনারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করেন, একটা চুক্তিবদ্ধ হন যে- আপনারা সুন্দরভাবে নির্বাচনটা করবেন। ওখানে সহিংসতা হবে না, কেউ কাউকে বাধা দেবে না।
বিএনপিকে আস্থায় আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করব। বিএনপি যদি ঘোষণা দিয়েও থাকে, তাদের কি আহ্বান জানাতে পারবো না? কোন কিছুই শেষ নয়। আমরা তো তাদের চা খেতে আমন্ত্রণ জানাতেই পারি।
এরপর ২ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবসের আলোচনায় অংশ নিয়ে সিইসি বলেন, মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার, রক্ষা করবো ভোটাধিকার। এটা কিন্তু বুলি নয়, কমিশন এটা অঙ্গিকার করে ফেলেছে। কোনো অঙ্গিকার করতে নাই। আর যদি কোনো অঙ্গিকার করতে হয়, তাহলে আগে সেটি হৃদয়ে ধারণ করতে হবে, পালন করতে হবে। তা না হলে কিন্তু আমরা মিথ্যাচার করবো। চেষ্টা অন্তত করতে হবে, সফল নাও হতে পারি। কিন্তু গণমানুষের যে ভোটাধিকার, সেটি বাস্তবায়নে আমাদের উপর যে সাংবিধানিক দায়িত্ব রয়েছে। সেটি আমাদের পালন করতে হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনেই আগামী ২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিভি/এইচকে
মন্তব্য করুন: