বাঙালী পরিচয়ে অস্ট্রেলিয়ার তরুণীর সঙ্গে প্রতারণা, নাইজেরিয়ান যুবককে খুঁজছে র্যাব

বাংলাদেশে বসেই অস্ট্রেলিয়ার তরুণীর সংগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে জর্জ একপুনবি নামের নাইজেরিয়ান এক যুবক। ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে তাদের পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রেম। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে বাংলাদেশে ছুটে আসেন কেইলাহ জেন সোমার্স (২৪) নামের অস্ট্রেলিয়ার তরুণী।
বাংলাদেশে এসে কেইলাহ জানতে পারেন, ওই যুবক বাঙালী নয়, নাইজেরিয়ান। তাছাড়া ব্যবসায়ী পরিচয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুললেও বাস্তবে বাংলাদেশে তার কোনো ব্যবসা নেই। উল্টো কেইলাহ দেশে আসার পর থেকে সব খরচ তাকেই বহন করতে হচ্ছিলো। এতে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। এমনকি ওই যুবক কেইলাহকে নির্যাতনও করেছে। সেই সংগে কেইলাহর কাছে থাকা বেশ কিছু ডলারও চুরি করে পালিয়ে গেছে নাইজেরিয়ান যুবক জর্জ একপুনবি।
সম্প্রতি একটি দৈনিক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব অভিযোগ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার তরুণী কেইলাহ জেন সোমার্স। কেইলাহ অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বাসিন্দা।
আরও পড়ুন:
- চোখের সামনে ২৯ সহযাত্রীকে মরতে দেখেও বোট ছাড়েননি সামিউল
- ফলোয়ার ৯০ লাখ, ভোটে দাঁড়িয়ে পেলেন মাত্র দেড় হাজার!
- পরকীয়া সম্পর্ক দেখে ফেলায় খুচিয়ে চোখ তুলে শিশুকে হত্যা চেষ্টা মামা-মামীর
কেইলাহ জানান, জর্জের ডাকে সাড়া দিয়ে গত ৩০ নভেম্বর তিনি ঢাকায় আসেন। মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় জর্জের ভাড়া বাসায় ওঠেন তিনি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ঢাকায় আসার কিছুদিনের মধেই জর্জের আচরণ বদলে যেতে থাকে। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে খাওয়া, ঘোরাঘুরিসহ সব কিছুর খরচই কেইলাহকে দিতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে সঙ্গে আনা ১০ হাজার ডলারের বেশির ভাগই এভাবে খরচ হয়ে যায়।
কেইলাহর অভিযোগ, দু’মাসে তিনি বুঝতে পারেন জর্জ আসলে কোনো কাজ করেন না। এমনকি বাংলাদেশে তার ভিসার মেয়াদও অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জর্জ খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে শারীরিক নির্যাতন করেন। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারির আগে জর্জ বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যান। আর যাওয়ার সময় তার ব্যাগে থাকা প্রায় দেড় হাজার ডলার চুরি করে নিয়ে যান। এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি জর্জের বাসা থেকে বেরিয়ে আলাদা থাকা শুরু করেন।
সাক্ষাৎকারে কেইলাহ বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাবো। সেই ভাবনা থেকে ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসে যোগাযোগ করি। তারা বিমান ভাড়া ও যাতায়াত খরচ বাবদ আমাকে আড়াই হাজার ডলার ঋণ দেয়। কিন্তু এরপর আমি বাংলাদেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। বর্তমানে দূতাবাসের দেওয়া লোনের অর্থ দিয়েই চলছি।
কেইলাহ জানান, তার বয়স যখন মাত্র চার বছর, তখনই তার মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর সিডনিতে বাবার সঙ্গেই বড় হতে থাকেন কেইলাহ। বাবার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ১৪ বছর বয়সে ঘর ছাড়েন তিনি। এরপর একেক সময় একেক ধরনের কাজ করে নিজের জীবন চালানো শুরু করেন। এভাবে জীবন চলছিল।
এসব বিষয়ে কেইলাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, আপাদত তার সেই প্রেমিক জর্জ একপুনবিকে নিয়ে তিনি ভাবছেন না। সময় হলে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। তবে প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে কোনো নিউজ না করতেও অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে, প্রতারণার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে র্যাবের গোয়েন্দাদের নজরে আসে। এরপরই র্যাবের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ওই তরুণীর সঙ্গে। তবে ওই তরুণী কোনোভাবেই আইনগত সাহায্য নিতে চাইছে না বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাবের গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর ইয়াসির আরাফাত বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, ওই তরুণীর সঙ্গে আমরা একাধিকবার যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদেরকে কোনোভাবেই তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন না। ফোন দিলে তিনি বলেন, পরে কথা বলবেন। এরপর আর কথা বলেন না। তবে আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। ওই নাইজেরিয়ান তরুণকে ধরতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:
- চোখের সামনে ২৯ সহযাত্রীকে মরতে দেখেও বোট ছাড়েননি সামিউল
- ফলোয়ার ৯০ লাখ, ভোটে দাঁড়িয়ে পেলেন মাত্র দেড় হাজার!
- পরকীয়া সম্পর্ক দেখে ফেলায় খুচিয়ে চোখ তুলে শিশুকে হত্যা চেষ্টা মামা-মামীর
ঢাকায় এসে প্রতারণার শিকার হলেও অস্ট্রেলিয়ার আর ফিরে যেতে চান না কেইলাহ। বাংলাদেশেই থেকে যেতে চান তিনি।
ইতিমধ্যে তিনি বাংলাদেশে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কেইলাহ নামের পরিবর্তে নিজের নাম রেখেছেন ‘ফাতেমা আমুল’।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে গেছি আমি। এ দেশের বেশিরভাগ মানুষের ধর্মটাকেই নিজের বলে মনে হয়েছে আমার। মুসলিম মেয়েদের মতো হিজাব পরাও শুরু করেছি।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে কেইলাহকে চাকরির অফারও দিয়েছেন দুয়েকটি প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাবও আসছে। সব কিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই বাঙালী কোনো যুবককে বিয়ে করে এদেশেই স্থায়ী বসবাস করবেন কেইলাহ।
বিভি/এসএইচ/রিসি
মন্তব্য করুন: