ব্যস্তযানের সড়কে ছুটছে শিশুর বাদ্যযান

রাজধানীর শাহবাগ সংলগ্ন সড়ক। যে সড়ক দিনভর হর্ন বাজিয়ে দ্রতগতির যান ছুটে সেখানে বাদ্যের তালে ছুড়ছে শিশুর টমটম। রাজধানীর রাজপথে মিছিল স্লোগানের পরিবর্তে শোনা যাচ্ছে ঢোল, বাঁশি আর ঝুনঝুনির শব্দ। কর্মব্যস্ত শহরের প্রাণকেন্দ্র যেন হঠাৎ গ্রামে পরিণত।
গ্রামের বৈশাখী মেলার অনেক অনুসঙ্গই হাজির শহরবাসীর কাছে। যা দেখে কিছু সময়ের জন্য নিজেকে শৈশবের গ্রাম্য জীবনে আবিষ্কার করছেন অনেকে। হয়েছেন স্মৃতিকাতরও।
বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখে ক্ষণিকের এই মেলা বসে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে। সেখানে দেশীয় ঐতিহ্যের নানান পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। শিশুকিশোরদের নিয়ে মেলায় হাজির হন অনেক অভিভাবক। নিজের সন্তানকে জানানোর চেষ্টা করেন বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে। কিনে নেন বাঙালি ঐতিহ্যের নানান পণ্যও। মেলাকে ঘিরে শিশুদের উচ্ছ্বাস ছিল বেশ। উপস্থিতি ছিলো বিদেশী নাগরিকেরও।
মেলায় ছেলেকে নিয়ে এসেছেন আসমা আক্তার। তিনি বলেন, আমরা ছোটকালে পহেলা বৈশাখে বাবার সাথে মেলায় যেতাম। চুড়ি,ব্যন্ডসহ অনেক কিছু কিনতাম। অনেক বছর পর এবার ছেলেকে নিয়ে মেলায় এসেছি। মূলত তাকে জানাতে চাচ্ছি গ্রামের সংস্কৃতি কেমন।
আব্দুল আলিম নামের একজন তাঁর শিশুসন্তানকে টমটম কিনে দিয়েছেন। যদিও তার ছেলের দাবি এই খেলনা সে কখনো দেখেনি। তিনি বলেন, গ্রামে বৈশাখের মেলা হবে আর কয়েকদিন রাস্তায় টমটমের টুংটাং শব্দ হবে না এমন কখনো হতো না। অথচ আমাদের শিশুরা এগুলো চিনেও না। বাঙালির ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মকে জানাতে এমন মেলার আয়োজন নিয়মিত হওয়া উচিত।
রইসুল আলম বলেন, মূলত ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসছি মেলায়। কিন্তু আমরা ছোটকালে যেসব খেলনা নিয়ে খেলতাম সেগুলো দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে গেছি। ইচ্ছে করছে বাচ্চা হয়ে যাই।
তবে এবারের পহেলা বৈশাখ রমজান মাসে হওয়ায় দর্শনার্থীর উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিলো। দর্শনার্থী কম হওয়ার পাশাপাশি আধুনিক সব পণ্যের আগমনের কারণে দেশীয় পণ্যগুলো খুবই কম বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি বিক্রেতাদের।
মেলায় তাল পাতার পাখা নিয়ে এসেছেন আজমত আলী। তিনি বলেন, যশোর ও বগুড়া থেকে বিভিন্ন ডিজাইনের হাতপাখা এনেছি। ভেবেছিলাম পহেলা বৈশাখে মানুষ আগ্রহ নিয়ে কিনবে। কিন্তু একেতো মানুষ কম আসছে তাছাড়া এখন এসি-আইপিএস হয়ে যাওয়ায় কেউ আর এসব দেশী জিনিস নিতে চায় না।
মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে এসেছেন আল আমিন। তিনি বলেন, আমার বেশ ভালোই বিক্রি হয়েছে। তবে রমজানের কথাটা মাথায় ছিলো না। এটা মাথায় থাকলে এত মাল আনতাম না।
হাতের বানানো বেহালা নিয়ে এসেছেন সালাহ উদ্দিন। তিনি বেহালা বাজিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করছেন এবং ব্যবহার শিখিয়ে বিক্রি করছেন। সালাহ উদ্দিন জানালেন, দেশের ঐতিহ্যবাহী একটা বাদ্যযন্ত্র দেখে অনেকেই কিনছে। বেশ ভালো বেচাকেনা হয়েছে।
তবে এবার মেলা ঘুরে তেমন কোনো খাদ্যপণ্যের দোকান চোখে পড়েনি।
বিভি/কেএস
মন্তব্য করুন: