দেশে ফিরলো সার্বিয়ার রাস্তায় পড়ে থাকা সেই যুবকের মরদেহ

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার যুবক বাদল খন্দকার ২০২১ সালে সাড়ে ৬ লাখ টাকা ব্যয় করে গিয়েছিলেন ইউরোপের দেশ সার্বিয়ায়। জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র দিয়ে মেসার্স নূরজাহান রিক্রুটিং এজেন্সি (আর.এল-১৩৯৪) বাদলকে জানিয়েছিল সেখানকার একটি কোম্পানিতে চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু বাদল সেখানে গিয়ে কোন কোম্পানি খুঁজে পাননি।
এজেন্সি ও দালালের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান ও সহযোগিতা না পেয়ে বুকভরা হতাশা নিয়ে সার্বিয়ার ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে আশ্রয় নেন বাদলসহ ১৪ বাংলাদেশি। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না দেখে জীবন বাঁচাতে সার্বিয়া থেকে ইতালির পথে রওনা হন তিনি। কিন্তু সেই পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। রাস্তায়ই পড়ে থাকে বাংলাদেশি এই যুবকের মৃতদেহ।
গত ৭ মার্চ স্থানীয় সময় গভীর রাতে সার্বিয়ার রাস্তায় পাওয়া যায় বাদলের মরদেহ। বিষয়টি তাঁর পরিবার জানলেও মরদেহ দেশে আনারও কোনো ব্যবস্থা পাচ্ছিলেন না। সবশেষ ব্র্যাক ইনফরমেশন সেন্টারের সহযোগিতায় শনিবার রাতে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানে দেশে আনা হয় বাদলের মরদেহ।
বাদলের পরিবার ও ব্রাক ইনফরমেশন সেন্টার সূত্রে জানা যায়, মানব পাচারকারীদের প্রতারণায় সার্বিয়ার রাস্তায় প্রাণ হারান বাদল। তাকে যে কোম্পানিতে পাঠানো হয়েছিল সার্বিয়াতে সেই কোম্পানির অস্তিত্বই ছিলো না। সার্বিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাস বা শ্রম শাখা না থাকায় কোনো ধরণের সহযোগিতাও পাননি তিনি। মৃত্যুর পর তার মরদেহ আনতেও বেশ বেগ পেতে হয় দূতাবাস না থাকায়। মরদেহটি দেশে আনতে ৪ লাখ ৯ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিলো যা তার পরিবারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই বাদলের পারিবার ব্র্যাক ইনফরমেশন সেন্টারে যোগাযোগ করলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রায় দেড় মাস পর বাদলের মরদেহ ঢাকায় আনা সম্ভব হয়।
এদিকে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেসার্স নূর জাহান রিক্রুটিং এজেন্সি (আরএল ১৩৯৪) সার্বিয়াতে বাদলসহ ১৪ বাংলাদেশিকে পাঠালেও উক্ত কোম্পনি বা রিক্রুটিং এজেন্সির অনুকূলে দূতাবাসের কোনো সত্যায়ন ছিলো না।
নিহতের পরিবারে দাবি, এই ঘটনায় তাঁর স্ত্রী বাদী হয়ে মানব পাচার আইনে সাভার থানায় মামলা করলে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সির ম্যানেজারসহ ২ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সি মালিককে পলাতক দেখানো হলেও তিনি বর্তমানে ঢাকায় বিভিন্ন সভাসমাবেশ অংশগ্রহণ করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
নিহত বাদলের শ্যালক সাদ্দাম হোসাইন বাংলাভিশনকে বলেন, এত টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়ে চাকরি না পাওয়া চরম হতাশায় ছিলেন দুলাভাই। যার কারণে ইতালি যাওয়ার পথে হার্ট অ্যাটাক করে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। যে অবস্থা ছিলো আমরা তাঁর মরদেহ দেখতে পাবো কিনা সন্দেহে ছিলাম। তবে ব্র্যাক ইনফরমেশন সেন্টারের সহযোগিতার কারণে মরদেহটি দেশে এনে দাফন করতে পারলাম।
এই ঘটনা দোষীদের কঠিন বিচার নিশ্চিতেরও দাবি জানান নিহত বাদলের শ্যালক।
বিভি/কেএস
মন্তব্য করুন: