যানজটে হর্ন না বাজালে গাড়ি চালককে ফুল উপহার!

বায়ুদূষণের পর শব্দদূষণেও রাজধানী ঢাকা বিশ্বের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে। শুধু রাজধানীতে নয়, সারা দেশেই শব্দদূষণ ক্রমে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঢাকা শহরে শব্দদূষণের অন্যতম কারণ হলো গাড়ির হর্ন। বিশেষত যানজটে আটকে থাকাকালে গাড়ি চালকদের অযথা হর্ন বাজানোর কারণে অত্যাধিক শব্দদূষণ হয়ে থাকে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক এলাকা ইত্যাদি নীরব এলাকা। তা স্বত্বেও এসকল এলাকায় মানমাত্রার থেকে দ্বিগুণের বেশি শব্দ উৎপন্ন হচ্ছে। যানবাহনজনিত শব্দদূষণ হ্রাসে গাড়িচালকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। তাই অযথা হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকা গাড়ি চালকদের ফুল উপহার দিয়ে ব্যতিক্রমী সচেতনতা কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।
আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে বুধবার (২৭ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে যৌথভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), রায়ের বাজার হাই স্কুল, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, লাইফ সার্ভ বাংলাদেশ, দি ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ (আইডাব্লিউবি), কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট।
এ সময় ‘সুস্বাস্থ্যের জন্য শ্রবণশক্তি রক্ষা করুন, অযথা গাড়ির হর্ন দেয়া থেকে বিরত থাকুন’ শীর্ষক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। পরে শব্দদূষণ থেকে গাড়ি চালকদের বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ফুল ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন দি ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর পলিসি অফিসার আ ন ম মাছুম বিল্লাহ ভুঁঞা, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এমএ মান্নান মনির। এছাড়া আয়োজক সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, শব্দদূষণের কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাসের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, দুশ্চিন্তা, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক অবসাদসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষত, শিশুরা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে কারণ তাদের উপর শব্দদূষণের প্রভাব স্থায়ী হতে পারে। গর্ভবতী নারীরা অতিরিক্ত শব্দদূষণের শিকার হলে সন্তানদের বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হয়ে থেকে যানবাহনের অযথা ও অতিরিক্ত হর্নের কারণে। বিশেষত যানজটে আটকে থাকাকালীন গাড়িচালকদের মধ্যে অযথা হর্ন বাজানোর মানসিকতার কারণে নগরবাসী ভয়াবহ শব্দদূষণের শিকার হন।
দি ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর পলিসি অফিসার আ ন ম মাছুম বিল্লাহ ভুঁঞা বলেন, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী, নির্ধারিত মাত্রার থেকে বেশি মাত্রায় শব্দ উৎপাদিত করলে অর্থাৎ আইন ভঙ্গ করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা শব্দের উৎস বা যন্ত্রপাতি জব্দ করতে পারবেন। দোষী প্রমাণিত হলে প্রথম অপরাধের জন্য একমাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড এবং দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে শব্দদূষণ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।
ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির বলেন, আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি জনগণের মাঝে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিশেষত অযথা হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকার জন্য গাড়িচালকদের সচেতন করে তোলা প্রয়োজন। কারণ গাড়িচালকের বাজানো হর্নের কারণে তিনি নিজে, তার সন্তান-আত্মীয় স্বজন সকলেই শব্দদূষণের ভয়াবহতার শিকার হচ্ছে।
কর্মসূচি থেকে গাড়ি চালকদের প্রতি যানজটে অযথা হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকা, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর সামনে হর্ন না বাজানোর অভ্যাস করা, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ মেনে চলা, গাড়িতে নিষিদ্ধ হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার না করা, নো-হর্ন সাইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, যত্রতত্র গাড়ি রাস্তায় পার্কিং করা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি আহ্বান জানানো হয়।
বিভি/কেএস
মন্তব্য করুন: