আগামীকাল পবিত্র ঈদুল ফিতর

ফাইল ছবি
আগামীকাল মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল ফিতর। রবিবার বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে ৩ মে মঙ্গলবার। করোনা মহামারির প্রকোপ কমায় এবার খোলা ময়দান বা মাঠে ঈদের জামাত আয়োজন করা হবে। তবে দেশের বেশ কিছু এলাকায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে।
দেশবাসী ও বিশ্বের সব মুসলমানকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি ভুলে মানুষ সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। ঈদের আনন্দ আমাদের সবার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন পরিব্যাপ্তি লাভ করুক।এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। হাসি-খুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক। বিশ্বের সব মানুষের সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হোক। আজকের দিনে আমি মহান আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি।’
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও আমি অনুরোধ করব যথাসম্ভব গণজমায়েত এড়িয়ে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের আনন্দ উপভোগ করি। সেই সঙ্গে আল্লাহতায়ালার দরবারে বিশেষ দোয়া করি, যেন এই সংক্রমণ থেকে আমরা সবাই দ্রুত মুক্তি পাই।’
পবিত্র ঈদুল ফিতরে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর উত্তরোত্তর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও অব্যাহত শান্তি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায়। করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে বৈরী আবহাওয়া থাকলে ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের নামাজের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ঈদের দিন সকাল ৭টা, ৮টা, ৯টা, ১০টা ও ১০টা ৪৫ মিনিটে বায়তুল মোকাররমে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। এ জামাত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, গেল চারদিনে ৭০ লাখের বেশি মানুষ রাজধানী ছেড়ে গেছে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে গত বুধবার থেকেই মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। রবিবার এসে রাজধানী অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে।
সরেজমিনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে এখন আর ব্যস্ততা নেই। শাহবাগ, পল্টন, সচিবালয়, কাকরাইল, মৎস্যভবন ও হাইকোর্ট এলাকার রাস্তাগুলো এখন ফাঁকা। মাঝে মধ্যে কয়েকটি ব্যক্তিগত ও গণপরিবহন দেখা গেলেও যানজটের কোনো চিহ্ন নেই।
এদিকে, গণ-পরিবহনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রাস্তায় এখন সিএনজি ও রিকশার রাজত্ব। শেষ মুহূর্তে এসে যারা বাড়ি যাচ্ছেন, তারা এসব যানবাহনে করে লঞ্চ ও বাস টার্মিনালে এবং রেলওয়ে স্টেশনে যাচ্ছেন। সকালে মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে কথা হয় বলাকা পরিবহনের একটি বাসের হেলপার রফিকুল সঙ্গে। তিনি বলেন, যাত্রী নেই, রাস্তা-ঘাট সব ফাঁকা। এখন আবার আব্দুল্লাহপুর যাচ্ছি। মাত্র ৩০ মিনিটে গুলিস্তান থেকে যাওয়া যাচ্ছে। আগে যেতে সময় লাগত ২-৩ ঘণ্টা।
বাংলামোটরে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ সিএনজিচালক সিদ্দিক মিয়া বলেন, সকাল থেকে তিনটি বড় ট্রিপ পেয়েছি। গাবতলী, মহাখালী ও সদরঘাট। ঈদের পরের দিন বাড়ি যাব। রাস্তাঘাটে গণপরিবহন কম থাকে। যারা শেষ সময়ে বাড়ি যান, তারা গাড়ি পান না। তাই এ সময়ে থাকি কিছু বাড়তি টাকা আয়ের জন্য। রাস্তা ফাঁকা থাকায় খুব সহজেই যাত্রী নিয়ে চলাচল করা যায়।
শুধু রাজধানীর রাজপথ নয়, অলি-গলিতেও ঈদের ছুটির আমেজ দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলির ছোট মুদির দোকান ও চায়ের দোকানগুলোতেও নেই চিরচেনা আড্ডা।
এদিকে ফাঁকা রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন থানার সদস্যরা রাস্তায় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এবং আবাসিক এলাকাগুলোর সামনে সকাল থেকে পুলিশের টহল দেখা গেছে। অস্বাভাবিক গতিবিধি লক্ষ্য করলেই করা হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ।
এদিকে সারাদেশে আগামীকাল (৩ মে) মঙ্গলবার ঈদ উদযাপন করা হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে রবিবার ও আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে। এরমধ্যে চাঁদপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, মাদারীপুর, ভোলা, লক্ষ্মীপুর এবং বরিশালে উদযাপন করা হচ্ছে।
১৯২৮ সাল থেকে চাঁদপুরে সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আল্লামা মোহাম্মদ ইসহাক প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ইসলামের সব ধর্মীয় রীতিনীতি প্রচলন শুরু করেন। মাওলানা ইছহাকের মৃত্যুর পর থেকে তার ৬ ছেলে এ মতবাদের প্রচার চালিয়ে আসছেন।
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: