• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

কর্ণফুলী জেটিতে এসে শেষ রক্ষা পেলো ডুবতে যাওয়া জাহাজ

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ৫ মে ২০২২

ফন্ট সাইজ
কর্ণফুলী জেটিতে এসে শেষ রক্ষা পেলো ডুবতে যাওয়া জাহাজ

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের পর দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে ডুবতে ডুবতে কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটিতে এসে শেষ রক্ষা পেলো রফতানি পণ্যবাহী একটি জাহাজ। এর ফলে জাহাজে থাকা ৮০০ কোটি টাকার রফতানি পণ্যও রক্ষা পায়।

ভিয়েতনামের পতাকাবাহী এই জাহাজটির নাম এমভি হাইয়ান সিটি। জাহাজটি মেরামতের জন্য দেশের অন্যতম জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ড্রাই ডকে দ্রুত যাবতীয় কার্যক্রম চলছে।

জানা যায়, ভিয়েতনামের পতাকাবাহী এমভি হাইয়ান সিটি জাহাজটি রফতানি পণ্য নিয়ে গত ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করে। কুতুবদিয়ার কাছাকাছি যাওয়ার পর এমভি ওরিয়ন এক্সপ্রেস নামে আরেকটি জাহাজের সাথে সংঘর্ষে হাইয়ান সিটি জাহাজের পোর্ট সাইডে কার্গো হোল্ডে ছিদ্র হয়ে পানি ঢোকে এবং জাহাজটি ৭ ডিগ্রি কাত হয়ে যায়। কার্গো হোল্ডে পানি প্রবেশ করে জাহাজটি ডুবে যাওয়ার অবস্থা হলে এটিকে দ্রুত কর্ণফুলী ড্রাইডকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

জাহাজটিকে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এবং এর মেরামতের জন্য দ্রুত সমন্বয় সভা আহ্বান করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান। ঈদের ছুটি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে জাহাজটিকে বার্থিং দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

পরে গতকাল বুধবার (৪ মে) জাহাজটি কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটিতে ভেড়ানোর পর কন্টেইনার খালাসের জন্য কাস্টম ল্যান্ডিং পারমিট গ্রহণ করা হয় এবং কর্ণফুলী ড্রাইডকের ফোরশোরে প্রয়োজনীয় ড্রেজিং সম্পন্ন করা হয়।

জানা গেছে, প্রয়োজনীয় মেরামত শেষে পুনরায় কন্টেইনার ভর্তি করে জাহাজটি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে। জাহাজটি মেরামত করতে সাতদিন সময় লাগবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে এটিই ছিলো সবচেয়ে বড় ও দুঃসাহসিক উদ্ধার অভিযান। সাধারণত চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো হয়। তবে হাইয়ান সিটি জাহাজের ছিদ্র দিয়ে পানি প্রবেশ করে ড্রাফট ১০ মিটারের বেশি হয়ে গিয়েছিলো। এই কারণে জাহাজটি জেটিতে ভেড়ানোর জন্য নদী ড্রেজিং করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে যা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ঘটনার আকর্শীকতায় সংশ্লিষ্টরা হতবিহব্লল হয়ে পড়লেও কর্ণফুলী ড্রাইডকের অভিজ্ঞ কর্মীগণ দ্রুত নদী ড্রেজিংসহ প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম শুরু করে। যা এক দুঃসাহসিক অভিযান। 

 উল্লেখ্য, বন্দরে জেটির অভাবে জাহাজ জটের কারণে পণ্য খালাসে ধীর গতি ও বিপুল অংকের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দেশের বৃহত্তম জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান- কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড গত বছর কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণপাড়ে আনোয়ারায় কাছাকাছি সময়ের মধ্যে পরপর দুটি জেটি নির্মাণ করে। ১৭০ মিটার লম্বা দুটি জাহাজ একসঙ্গে ভিড়তে পারে দেশের প্রথম বেসরকারী এই ড্রাইডক জেটিতে। দুই জেটিতে মাসে ১০-১২টি জাহাজ এক সঙ্গে পণ্য খালাস করতে সক্ষম।

উল্লেখ্য, চট্রগ্রাম বন্দরে ঢোকার পথে একটি গুপ্ত ব্যান্ড তথা বাক থাকায় বড় জাহাজের পাখা চ্যানেলের বাইরে চলে যাওয়ার কারণে ঐ জাহাজগুলো বন্দরে ঢুকতে পারেনা। কর্ণফুলী ড্রাই ডক জেটিতে এই সমস্যা নেই, কারণ এটি গুপ্ত ব্যান্ডের বাইরে সাগরের দিকে তৈরি করা হয়েছে। ফলে এখানে বিভিন্ন সাইজের দীর্ঘাকায় জাহাজ ভিড়তে সক্ষম।

জেটি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে এই দুই জেটি দৈনিক কম করে হলেও ৬ হাজার টন এবং মাসে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টন পণ্য খালাস করতে সক্ষম। কম করে হলেও মাসে দেড় লক্ষ টন হিসেবে বছরে ১৮ লক্ষ টন পণ্য এই দুই জেটিতে খালাস হওয়া সম্ভব। কর্ণফুলীর এই জেটি বেসরকারী হলেও এর মাধ্যমে বন্দরেরও উপার্জন হচ্ছে। বন্দরে পণ্য খালাস হলে যে উপার্জন বন্দরের হয় এখানেও তা হয়। তবে সবচেয়ে বড় কথা এই বন্দর নির্মাণের ফলে জাহাজ জট হ্রাস পাওয়াসহ দেশের অর্থনীতিতে গতি এসছে।

বন্দরে জেটি সমস্যায় মাসকে মাস পণ্য খালাস ব্যাহত হলেও এযাবৎকাল পর্যন্ত নদীর দক্ষিণ পাড়ে জেটি তৈরি করে পণ্য খালাস করার ব্যাপারটি বিভিন্ন আলোচনা ও সার্ভে পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্ত কর্ণফুলী শীপ বিল্ডার্স কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় কাজটি আলোর মুখ দেখেছে। সাবেক বন্দর চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে তারা এই জেটি তৈরি সম্পন্ন করেছে। আরও দুটি জেটি এখানে তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে কর্ণফুলী ড্রাই ডক কর্তৃপক্ষ জানান।

তারা বলেন, সম্পূর্ন নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি এসব জেটি নির্মাণের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে নিজেদেরকে সামিল করাই মূল লক্ষ্য। একই সঙ্গে পণ্য আমদানীবাহী জাহাজ বন্দরে এসে মাসকে মাস অপেক্ষা করেও পণ্য খালাস করতে না পারায় বিপুল অংকের যে আর্থিক ক্ষতি তার অবসানের লক্ষ্যে এই জেটি আমরা নির্মাণ করেছি। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
জেটি তৈরির ক্ষেত্রে বন্দরের ক্ষয়ক্ষতি তথা সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই এই জেটি তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। পরিকল্পনাধীন বাকি জেটিগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হলে অদূর ভবিষ্যতে মোংলা বন্দরের সমপরিমান বা তার চেয়েও বেশি পণ্য দেশের এই প্রথম বেসরকারী কর্ণফুলী ড্রাইডক স্পেশালাইজড্ ইকোনোমী জোন জেটি খালাস করবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
 

বিভি/এসএইচ/এএন

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2