দেশত্যাগ নয়, ছেলেকে রিসিভ করতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন দাবি হাজী সেলিমের

ফাইল ছবি
দুদকের মামলায় দশ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত পুরনো ঢাকার আলোচিত সংসদ সদস্য হাজী সেলিম দেশ ছাড়তে নয়, সিঙ্গাপুর থেকে আসা ছেলেকে রিসিভ করতে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন এমন দাবি করেছেন তাঁর একান্ত সচিব মুইনুদ্দিন মাহমুদ বেলাল।
মঙ্গলবার (১০ মে) দুপুরে ছোট ছেলে সালমান সেলিমকে নিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে সকাল দশটার দিকে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন হাজী সেলিম।
তবে সেই সময় হাজী সেলিম নিজেই দেশ ত্যাগ করতে চেয়েছেন গণমাধ্যমের এমন দাবি উড়িয়ে দিয়ে তাঁর একান্ত সচিব বাংলাভিশনকে বলেন, এমপি হাজী সেলিম সকালে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। তবে দেশত্যাগের উদ্দেশ্য নয়, সিঙ্গাপুর থেকে আসা তাঁর ছোট ছেলে মদীনা গ্রুপের পরিচালক সালমান সেলিমকে রিসিভ করতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন তিনি। অনেকেই হয়তো বিষয়টি ভুল বুঝেছেন।
এদিকে বিমানবন্দরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় টিজি৩২২ ফ্লাইটে থাইল্যান্ড যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন হাজী সেলিম।
প্রসঙ্গত, জ্ঞাত আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের ( দুদক ) দায়ের করা মামলায় উচ্চ আদালত হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রেখেছেন। গত ২৫ এপ্রিল আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, এক মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে তাকে আত্মসমর্পন করতে হবে। সে হিসাবে আগামী ২৪ মে এক মাস পূর্ণ হবে।
গত ১ মে এই দণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন হাজী সেলিম। এতে দেশজুড়ে তীব্র বিকর্ত শুরু হয়। পরে ৫ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি। আজ আবারও বিমানবন্দরে যাওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন- হয়তো তিনি আবারও হয়তো দেশত্যাগ করছেন। পরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা জানতে পারেন, তিনি নিজ ছেলেকে রিসিভ করতেই বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন।
হাজী সেলিমের আইনজীবীর বক্তব্য
গত ৫ মে হাজী সেলিমের আইনজীবী প্রাণ নাথ বলেন, ‘এই মামলা ২০০৮ সালে হাজী সেলিমের ১০ বছর এবং ৩ বছরের সাজা হয়। পরবর্তীতে তিনি নিম্ন আদালতে তিনি আত্মসমর্পন করলেও আদালত তাকে জামিন দেননি। যেকারণে অর্ডারের অ্যাগিনেস্টে আমরা মহামান্য হাইকোর্টে যাই। সেখানে আমরা অর্ডারের বিরুদ্ধে আপিল করি। একই সঙ্গে তার জামিন চাওয়া হয়। তখন হাইকোর্ট তাকে এই মামলায় জামিন দেন।
পরবর্তীতে দুদক অ্যাপিলেড ডিভিশনের জামিনের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু অ্যাপিলেড ডিভিশন হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখে এবং হাইকোর্ট ওই সাজা থেকে তাকে খালাস দেন। খালাসের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক অ্যাপিলেড ডিভিশনের আবারও মামলা করেন। দুদক একটা পিটিশন দিলেন মামলাটা প্রত্যাহার করার জন্য। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিদ্ধান্ত দিলেন হাইকোর্টের অর্ডারটা স্যাটাসাইড করে হাইকোর্টকে এই মামলা পুনরায় শুনানি করার জন্য। শুনানি শেষে হাইকোর্ট তিন বছরের সাজা মওকুফ করে ১০ বছরের সাজা বহাল রাখে। কিন্তু আপিল বিভাগে যাওয়া পর্যন্ত তিনি ওই মামলায় জামিনে আছেন। সেখানে বলা হয়েছে, নিম্ন আদালতের নথি পাওয়ার ৩০দিনের ভিতরে তাকে আদালতে হাজির হতে হবে। এই রেকর্ডটা নিম্ন আদালতে আসে ২৫/০৪/২০২২-এ অর্থাৎ আগামী ২৪/০৫/২০২২ তারিখ পর্যন্ত তিনি যে কোনো সময় নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারবেন।
এই মামলায় যেহেতু তিনি হাইকোর্টে জামিনে আছেন। এছাড়াও হাইকোর্ট তার জামিন করেনি। যদি হাইকোর্ট তার জামিন বাতিল করা হতো তাহলে নিশ্চয়ই তিনি আইনের আওতায় আসতেন।
তাহলে পরবর্তী করণীয় কি জানতে চাইলে আইনজীবী বলেন, যেহেতু হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে এবং তিনি যেহেতু একজন আইনপ্রণেতা হাইকোর্ট যে রায় দিবেন তিনি সেটার জন্য আপিল করবেন। যেহেতু হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের সে হিসেবে তিনি নির্দেশিত সময়ের মধ্যেই আত্মসমর্পণ করবেন। এরপর আমরা অর্ডার নিয়ে আমরা হাইকোর্টের আদেশের অ্যাগিনেস্টে আমরা আপিল করবো।
বিভি/এসএইচ/এইচএস
মন্তব্য করুন: