ব্ল্যাকমেইল ও যৌন হয়রানির অন্যতম ক্ষেত্র উন্মুক্ত গোসলখানা

খোলা বাথরুমেই গোসল সারতে হয় অনেক কিশোরী-তরুণীর।
রাজধানী ঢাকা ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ বাস করে। তবে বিভিন্ন এলাকার কিশোরী-নারীরা উন্মুক্ত স্থানে গোসল করতে বাধ্য হন। ফলে অনিরাপত্তা তৈরি হয়, সেই সঙ্গে শুরু হয় ভোগান্তি।
বিশেষ করে বেশিরভাগ টয়লেট-গোসলখানায় দরজার লক না থাকা এবং ওপরের ছাদ না থাকায় যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির ঝুঁকিতে থাকেন কিশোরী-তরুণীরা। সম্প্রতি এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার (১১ জুন) ঢাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল তুলে ধরে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির ওয়াশ স্পেশালিস্ট এস এম তারিকুজ্জামান।
এ বছরের শুরুতে ‘এমপাওয়ারিং গার্লস ফর ইকোনমিক অপরচুনিটি অ্যান্ড সেফ স্পেস - ই গ্লস’ নামে দেশে একটি মডেল প্রজেক্ট শুরু প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। এ প্রজেক্টের আওতায় ঢাকা শহরের চার কলোনি- ধলপুর, মালেক মেম্বর কলোনি, আই জি গেট কলোনি এবং ম্যাচ কলোনিতে ১৫টি গোসলখানা স্থাপনের কাজ করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি)।
ওয়াশ স্পেশালিস্ট এস এম তারিকুজ্জামান বলেন, এই চার কলোনির মেয়েদের নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছে, যেখানে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৪১৭ জন মেয়ে উত্তরদাতা হিসেবে ছিলেন এবং ১২টি ফোকাসড দলীয় আলোচনা করা হয়। এই সমীক্ষা এবং তিন মাসব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন করার উদ্দেশ্যে কাজ করেছে বিওয়াইএস নামক একটি যুব সংগঠন।
জরিপে ৯৮ শতাংশ নারীই জানিয়েছেন তারা উন্মুক্ত গোসলখানা ব্যবহার করে থাকেন। এ উন্মুক্ত গোসলখানার মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ গোসলখানায় রয়েছে নারীদের জন্য পৃথক জায়গা, অর্থাৎ শুধু নারীরাই সেখানে গোসলের কাজ সারেন।
সবচেয়ে বড় তথ্য হলো-একটি গোসলখানার বিপরীতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা গড়ে ৩৫ থেকে ৪৫ জন। আর সর্বোচ্চ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭০ জনও পাওয়া গিয়েছে। সেক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সংখ্যা ২০ জন।
খোলা গোসলখানা ব্যবহারকারী নারীরা জানিয়েছেন, এই গোসলখানাগুলো তাদের জন্য নিরাপদ না। পাশের কোনো উঁচু বিল্ডিং থেকে ছবিগ্রহণের মতো ঘটনাও ঘটে। রাতে টয়লেটে যেতে ভয় পান নারীরা। ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ কিশোরী ও যুবতী বলেন, তারা টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো না কোনো সময় সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মানিক কুমার সাহা বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজারের মত নিম্ন আয়ের এলাকা রয়েছে। এসব এলাকায় নিরাপদ গোসলখানার অভাবে পুরুষ ও নারীদের একই সঙ্গে গোসলের কাজ সারতে হয়। এতে করে গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হওয়ার পাশাপাশি সহিংসতার ঘটনাও ঘটতে থাকে।
মানিক কুমার সাহা নিরাপদ গোসলখানার চাহিদা নীতিনির্ধারক মহলে পৌঁছে দিতে চান। সবাই একসাথে এই সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে কাজ করতে চান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ভুক্তভোগী এক কিশোরী বলেন, ‘পৃথক গোসলখানার অভাব নারীদের জন্যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। কখনো কখনো মৌখিকভাবেও হয়রানি হতে হয়। আর পিরিয়ডের সময়ে নিজেদের পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় সময়টাও পাওয়া যায় না।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: