দায়িত্বে অবহেলায় রেলপথে ৭ মাসে ১০৫২ দুর্ঘটনা, নিহত ১৭৮

মিরসরাইর খৈয়াছড়ায় নির্মম রেলপথ দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে গত ৭ মাসে ছোট-বড় ১০৫২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৭৮ জন এবং আহত ১১৭০ জন। এর মধ্যে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে গেটম্যানের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বলে জানিয়েছেন সেভ দ্য রোড এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা।
সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, জিয়াউর রহমান জিয়া, শওকত হোসেন ও ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সহ-সভাপতি আনজুমান আরা শিল্পী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেলের ২ হাজার ৮৫৬টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে যার মধ্যে অবৈধ ১ হাজার ৩৬১টি। যার মানে দাঁড়ায় প্রায় ৪৮ শতাংশ অবৈধ।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে ৩৩টি ক্রসিং কে বা কারা ব্যবহার করছে, তা কেউ জানে না। এছাড়া বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর মধ্যে ৬৩২টিতে গেটম্যান নেই। কোনো সুরক্ষা সরঞ্জামও নেই।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৬টি, আহত হয়েছেন ৫২ এবং নিহত হয়েছেন ১৪ জন। ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪১টি, আহত হয়েছেন ১১১ জন, নিহত হয়েছেন ২৭ জন। ১ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ২২২টি, আহত হয়েছেন ১৮৬ জন, নিহত হয়েছেন ৩১ জন। ১ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ১১২টি, আহত হয়েছেন ১৬৬ জন, নিহত হয়েছেন ৪২ জন। মে মাসে আহত ২২১ জন, নিহত ২৩ জন, দুর্ঘটনা ঘটেছে ২১২ টি। জুন মাসে দুর্ঘটনা ১৯৭টি; আহত ১৭২ জন, নিহত ১৭ জন এবং জুলাই মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৪২টি, ঈদুল আযহার ঈদযাত্রাসহ বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৩২ জন, নিহত হয়েছেন ২৪ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪টি জাতীয় দৈনিক, ১৮টি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম, ২২টি নিউজ পোর্টাল এবং সারাদেশে সেভ দ্য রোড-এর বিভিন্ন শাখার স্বেচ্ছাসেবিদের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা এই প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে তার চেয়েও ভয়ংকর রেলওয়ের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
নিচে সেভ দ্য রোড এর পরিসংখ্যানটি তুলে ধরা হলো
মাসের নামঃ রেলক্রসিং দুর্ঘটনা/আহত/নিহত সেলফি দুর্ঘটনা/আহত/নিহত ছাদ/কাটা পরে/ ধাক্কায়/আহত/নিহত:
জানুয়ারিঃ ৭/২৯/৮ ১১/২১/৪ ৮/২/২
ফেব্রুয়ারিঃ ২০/৯২/২০ ১১/১০/৫ ১০/৯/২
মার্চঃ ১১১/১০০/১৫ ৮০/৭০/১০ ৪২/১৬/৬
এপ্রিলঃ ৭১/১২৬/২৩ ৩১/৩০/১৭ ১০/১০/২
মেঃ ১৫০/১৫০/১৫ ৫০/৬০/৫ ১২/১১/৩
জুনঃ ১৪০/১২২/১০ ৪০/৪০/৫ ১৭/২০/২
জুলাইঃ ৯০/১৮৫/১৮, ৩০/২৭/৪ ২২/২০/২
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা এবং আহতদের সরকারি অর্থায়নে চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন সেভ দ্য রোড নেতৃবৃন্দ।
একই সঙ্গে রেলওয়ের বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণে সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে ৭টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সুপারশিগুলো হলোঃ
১. অবৈধ ক্রসিংগুলোর সমাধান করা ২. দুর্নীতিবাজ রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া ৩. সরকারি লেজুড়ভিত্তিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নামে নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম বন্ধ করে রেলকে গণমূখী বাহন হিসেবে প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করা ৪. যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ রেলওয়েকে বেসরকারি খাত থেকে মুক্ত করে রাষ্ট্রিয় তত্বাবধায়নে পরিচালনার সুপরিকল্পিত উদ্যেগ গ্রহণ করা ৫. সচিব-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকল রকম আরাম-আয়েশ বাতিল করে সারাদেশে রেলওয়ের উন্নয়নে নিবেদিত থাকা ৬. যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর নজরদারি বাড়ানো এবং সারাদেশের সকল স্থানে কার্যকর সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা ৭. প্রতি ৩ কিলোমিটারে পর্যবেক্ষণ করার জন্য রেলওয়ে পুলিশ-এর বিশেষ বুথ স্থাপন করা।
বিভি/এসআই
মন্তব্য করুন: