• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ড. ইউনুসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ৪০ বিশ্বনেতার খোলা চিঠি

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ৮ মার্চ ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ড. ইউনুসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ৪০ বিশ্বনেতার খোলা চিঠি

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন বিশ্বের ৪০ বিশ্বনেতা। চিঠিটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পূর্ণ পাতাজুড়ে বিজ্ঞাপন হিসেবেও প্রকাশিত হয়েছে। 

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়র, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর ঔই বিশ্ব নেতাদের তালিকায় রয়েছেন। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, 
`মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমরা বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আপনাকে লিখছি, যাঁরা আপনার দেশের জনগণের সাহস ও উদ্ভাবনী দক্ষতার প্রশংসা করে। আমাদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের নেতা ও সমাজসেবক আছেন। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মতো আমরাও বাংলাদেশে উদ্ভাবিত ও সারা বিশ্বে গৃহীত উদ্ভাবনগুলো দ্বারা অনুপ্রাণিত। আপনার দেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থেকেই আমরা আপনাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের একজন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মহান অবদানকে সমর্থন ও স্বীকৃতি দিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে আপনাকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখছি।

‘ড. ইউনূসের ভালো থাকা, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মানবিক উন্নয়নে তিনি যে অবদান রেখে চলছেন, তা অব্যাহত রাখতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে। আমরা নিশ্চিত, আপনি জানেন যে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের অবদান, বিশেষ করে অতিদরিদ্র ও সবচেয়ে বিপদাপন্ন মানুষের জন্য তাঁর অবদান বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও সম্মানিত।

‘উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অধ্যাপক ইউনূস ইতিহাসের সাত ব্যক্তির মধ্যে একজন, যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম ও কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। এই সাতজনের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, মাদার তেরেসা ও এলি উইজেলের মতো ব্যক্তিরা আছেন।

‘তিনি ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। একে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। যার ঋণগ্রহীতা ৯০ লাখ, তাঁদের ৯৭ শতাংশ নারী। প্রতিষ্ঠানটি লাখো মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছে। সারা বিশ্বের অন্যান্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির জন্য একটি মডেল তৈরি করেছে।

‘গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক ২০০-৫০০ মার্কিন ডলারের গৃহনির্মাণ ঋণ দেওয়া শুরু করে। এর মাধ্যমে সাড়ে সাত লাখের বেশি পরিবার গ্রামীণ বাড়ি তৈরি করেছে। ‘অধ্যাপক ইউনূস গ্রামীণ শক্তি প্রতিষ্ঠা করেন, নেতৃত্ব দেন। এই গ্রামীণ শক্তি ১৮ লাখের বেশি বাড়িতে সোলার হোম সিস্টেম চালু করেছে। হাজারো গ্রামীণ নারীকে এই সোলার সিস্টেম ইনস্টল ও মেরামতের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

‘ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকমের গ্রামীণফোনে করা বিনিয়োগটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিনিয়োগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। যা সারা দেশে সামাজিক উদ্ভাবন বিস্তারের সুযোগ করে দিয়েছে। যেমন গ্রামীণ ক্যালেডোনিয়ান কলেজ অব নার্সিং দেশের অন্যতম বেসরকারি নার্সিং কলেজ, দেশের দরিদ্রদের জন্য চারটি চক্ষু হাসপাতাল, ১৫০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকসহ আরও অনেক কিছু আছে।

‘২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিম্ন আয়ের জনগণকে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের জন্য অধ্যাপক ইউনূস গ্রামীণ আমেরিকা প্রতিষ্ঠা করেন। এর বেশির ভাগ ঋণই ২ হাজার ৫০০ ডলারের নিচে। এটি ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণের মাইলফলক অতিক্রম করতে চলেছে। এসব ঋণের পরিশোধের হার ৯৯।
‘মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ টেলিকম বা গ্রামীণফোন থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হননি। বরং তিনি যেসব সংগঠন গড়ে তুলেছেন, সেগুলোর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রমে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তিনি ঢাকায় সাদামাটাভাবে বসবাস করছেন। মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন অনবদ্য পরিশুদ্ধ মানুষ ও তাঁর কার্যক্রমগুলো আপনার সরকারের অন্যায় আক্রমণের শিকার হচ্ছে। বারবার হয়রানি ও তদন্তের মধ্যে পড়ছে। এমনটা দেখতে পাওয়া বেদনাদায়ক।

‘আমরা বিশ্বাস করি, সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো, এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে চিরায়ত ও সামাজিক উদ্যোক্তারা প্রস্ফুটিত হতে পারেন। ‘আমরা আশা করি, টেকসই অগ্রগতি নিশ্চিতে কীভাবে একটি প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজকে লালন করা যেতে পারে, সে বিষয়ে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি মডেল হিসেবে বাংলাদেশ তার ভূমিকায় ফিরে আসবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম একটি ভালো উদ্যোগ হওয়া উচিত, অধ্যাপক ইউনূসের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া। তাঁকে নিজ নিরাপত্তায় ব্যস্ত রাখার পরিবর্তে দেশ ও বিশ্বের জন্য আরও ভালো কিছু করতে তাঁর শক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেওয়া।

‘আমরা ও বিশ্বের কোটি মানুষ আশা করি, আপনি আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবেন।’

চিঠিতে সংগীতজ্ঞ ও অধিকারকর্মী বোনো; ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন; ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট লর্ড মার্ক ম্যালোচ ব্রাউন; সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন; রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডেলি-হ্যারিস; ডাল্লায়ার ইনস্টিটিউট ফর চিলড্রেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির প্রতিষ্ঠাতা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) রোমিও ডাল্লায়ার; এমেরিতা চিলড্রেন ডিফেন্স ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মারিয়ান রাইট এডেলম্যান; মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্ট ফক্স; সংগীতজ্ঞ পিটার গ্যাব্রিয়েল; নাসার সাবেক মহাকাশচারী রন গারান; ইউনিসেফের সাবেক উপনির্বাহী পরিচালক ও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব কুল গৌতম; গ্লাসগো ক্যালেডিনিয়ান ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য ও ইমেরিটাস অধ্যাপক পামেলা গিলিস; রকফেলার ফাউন্ডেশন ও ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পিটার সি গোল্ডমার্ক জুনিয়র; অধিকারকর্মী জেন গুডাল; যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর; রোটারি ইন্টারন্যাশনালের সিইও জন হিউকো; উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী মো. ইব্রাহিম; ইংল্যান্ডের হাউস অব লর্ডসের কেসি মেম্বার ব্যারনেস হেলেনা কেনেডি; রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি; টেড কেনেডি জুনিয়র; ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট বিনোদ খোসলা; জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন; গায়ক, গীতিকার ও অধিকারকর্মী অ্যানি লেনক্স; মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান আর্থার লেভিট; সাবেক মার্কিন কম্পট্রোলার অব দ্য কারেন্সি ও স্প্রিং হারবার হোল্ডিংসের জেন লাডউইগ; ভিএমওয়্যারের সাবেক সিইও পল মারিজ; ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব শিকাগোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সিইও মাইকেল এইচ মস্কো; ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি; চ্যাথাম হাউসের সাবেক প্রধান নির্বাহী স্যার রবিন নিবলেট; বিশ্বব্যাংকের সাবেক ইউএস বোর্ড ডিরেক্টর ও সাউদার্ন ব্যান করপোরেশনের উপদেষ্টা জ্যান পিয়ারসি; ইয়েল ল স্কুলের স্টার্লিং প্রফেসর অব ল রবার্ট পোস্ট; মিশিগানের সাবেক মার্কিন সিনেটর এবং ব্যাংকিং, হাউজিং ও নগর উন্নয়নসংক্রান্ত সিনেট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান ডোনাল্ড রিগেল; আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন; এলেন সিডম্যান; অভিনেত্রী ইয়ার্ডলি স্মিথ; অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন; ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ইমেরিটাস অধ্যাপক ডেভিড সুজুকি; অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাইড স্কুল অব বিজনেসের সাবেক ডিন পিটার তুফানো; বৈশ্বিক নারীবিষয়ক সাবেক মার্কিন অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মিলেন ভারভির এবং উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস সই করেছেন। 

বিভি/ এসআই

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2