• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

পরিবেশ অধিদফতরের প্রকল্প বাণিজ্যঃ পর্ব-২

সেন্টমার্টিনঃ সংরক্ষণ প্রকল্পের মধ্যেই চলেছে ধ্বংসযজ্ঞ (ভিডিও)

প্রকাশিত: ০৯:১০, ১৫ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ১৭:৩৬, ২০ মার্চ ২০২২

ফন্ট সাইজ

২০২১ সালের ২৩ মার্চ ভোরের ঘটনা। একটু আগেই আলো ফুটেছে সেন্টমার্টিনের আকাশে। রাজ্যের নিস্তব্ধতা সৈকতজুড়ে। সেন্টমার্টিনের নিরিবিলি পূর্ব সৈকত ধরে হেঁটে যাচ্ছিলাম ছেঁড়াদিয়ার দিকে। গলাচিপা এলাকায় পরিবেশ অধিদফতরের মেরিন পার্ক পেরিয়ে কিছুদূর এগোতেই কানে আসে কিছু ভাঙার ‘ঠুকঠাক’ শব্দ।

কী ভাঙা হচ্ছে, জানতে আগ্রহ জাগে মনে। কান পেতে শব্দের উৎসের দিকে ওা বাড়াই। কেয়া বাগানের ঝোঁপ পেরিয়ে একটি ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখ ছানাবড়া। সমুদ্রের প্রবাল তুলে এনে বাড়ির ভেতরে হাতুড়িপেটা করে ভাঙছিলেন এক তরুণী। ক্যামেরা দেখেই দৌঁড়ে পালালেন। রেখে গেছেন হাতুড়ি চালানোর প্রকৃতি ধংসলীলার প্রমাণ।

তরুণী পালিয়ে গেলেও বয়সের ভারে পালাতে পারেননি তাঁর দাদী। অবশ্য তিনি অন্য কাজ করছিলেন। জানতে চাইলে নাতনির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এলাকায় মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রবাল ভেঙে দিচ্ছেন তাঁরা। 

সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটু সামনে এগিয়ে দেখা মেলে প্রকৃতির ওপর কতোটা নিষ্ঠুর আচরণ করছেন সেখানকার মানুষ। 

দক্ষিণ পাড়ার কাছাকাছি দেখা যায়, পুরো সৈকত প্রবালশূন্য হয়ে গেছে। শুধু অবশিষ্ট আছে কেটে নেওয়া প্রবালের ধ্বংসাবশেষ।    

প্রবালের এমন ধংসলীলা চোখে পড়ে সেন্টমার্টিনের সর্বত্র। প্রবালভাঙা পাথরের কণা ব্যবহৃত হচ্ছে এখানে নির্মাণাধীন ভবন মজবুত করতে। নির্মাণ কাজের পাশাপাশি বাড়ি বা হোটেলের সীমানাপ্রাচীর ও সমুদ্রের জোয়ার ঠোকনোর বাঁধসহ নানান কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে এগুলো।

নিজের ভূমি বা স্থাপনা পোক্ত করতে  প্রবাল ব্যবহারকারী স্থানীয় জনগণ বা হোটেল মালিকদের অনেকেই জানেন না, তাঁরাই হুমকির মুখে ফেলছেন পুরো দ্বীপকে। 

গবেষকরা বলছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপটি দাঁড়িয়ে আছে প্রবালের ভিত্তির উপর। জীবন্ত কোরাল বা প্রবালকে ঘিরেই রয়েছে এখানকার সমুদ্রের মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডার। কোরাল হারালে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিলীন হতে পারে পুরো দ্বীপই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ও উপকূল গবেষক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, সেন্টমার্টিন একটি কোরাল বিয়ারিং আইল্যান্ড। অর্থাৎ সমুদ্রের ভেতরে একটা পাহাড় রয়েছে, সেই পাহাড়ের উপরে কিছু কোরাল জন্ম নিয়েছে। আমাদের একটা অ্যাসেসমেন্ট বলছে, প্রায় সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার বছর ধরে এই কোরালগুলো এখানে আছে।

‘কোরাল জন্ম নিতে হলে সাগরের পানির একটা নির্দিষ্ট মান থাকতে হয়। এর জন্য সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও পানির স্বচ্ছতা জরুরি। একসময় এখানে খুব ভালো পরিবেশ ছিলো বলেই কোরাল গ্রো করেছিলো। কিন্তু রিসেন্টলি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এতো বেশি বেড়ে গেছে যে, এখানে কোরালগুলো বেঁচে থাকার যে পরিবেশ দরকার তা আর নেই। বিশেষ করে পানিতে যে পরিমাণ প্লাস্টিক থাকছে এবং সেডিমেন্টের প্রলেপ পড়ছে, এতে নতুন জন্ম নেওয়া তো দূরের কথা জীবন্ত কোরালও এখন প্রাণ হারাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিনে জীবন্ত কোরাল রয়েছে, কোরাল পাথরও রয়েছে। যেটাকে আমারা বিচ স্টোন বা স্যান্ড স্টোন বলি। কোরালের রগটা ছিঁড়ে ফেললে সেখানে ইরোশন বা ভাঙন শুরু হয়। সেন্টমার্টিনের ক্ষেত্রে সেটাই হচ্ছে। গলাচিপা অংশে এখন সমুদ্রদ্রের ভাঙন প্রকট হয়েছে। কারণ কোরাল কমলেও সমুদ্রের রিফ কারেন্ট এবং  উইন্ড স্পিড ঠিকই আছে। এটাই ভাঙনের বড় কারণ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশেনোগ্রাফি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ড. মো. মোসলেম উদ্দীন মুন্না বলেন, সেন্টমার্টিন আমাদের অন্য ধরনের জীববৈচিত্র্যের একটি জায়গা। এটি সবচেয়ে রিচ বায়োডাইভারসিটি এলাকা। এখানে কোরাল, এলগি ও সিউইড তাদের যে যোজনথিলার সংগে সিমবায়োসিস প্রসেস করে। সেই প্রসেসের উপর ভিত্তি করে যে ফুড সাইকেল রয়েছে সেটাকে কেন্দ্র করে অর্নামেন্টাল ফিশ ও আমাদের ট্র্যাডিশনাল ফিশ বসবাস করে। এই ব্যবস্থার কোথাও ছেদ ঘটালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো প্রতিবেশই। আমরা এখন সেটাই করছি। 

এসব বিষয় মাথায় রেখেই এখানকার প্রতিবেশ সংরক্ষণ করতে ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে সরকার। সেই থেকে এই দ্বীপ সংরক্ষণে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নানান ব্যবস্থা নিয়ে আসছে পরিবেশ অধিদফতর। সবশেষ প্রতিবেশগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্যের উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ  শীর্ষক ৫ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের কোরাল এবং ফ্লোরা ও ফ'না বিষয়ে গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে উপযুক্ত সংরক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ ৪টি লক্ষ্য সামনে রেখে ১৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বাজেট নিয়ে ২০১৬ সালে শুরু হয় প্রকল্পটি। কিন্তু স্থানীয়রাই বলছেন, দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ সবচেয়ে বেশি ধংস হয়েছে প্রকল্প চলাকালেই। এই সময়ে দ্বীপের স্বভাবিক পরিবেশ নষ্ট করে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল-রিসোর্ট। এসবের দালান নির্মাণ, সীমানাপ্রাচীরে ব্যবহার হয়েছে প্রবাল। যা খালি চোখে দেখা গেলেও নীরব ভূমিকায় ছিলো সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। প্রকাশ্যে কোরাল নিধন চললেও প্রতিরোধে চোখে পড়েনি কোনো সরকারি তৎপরতা।

আরও পড়ুনঃ পরিবেশ অধিদফতরের প্রকল্প বাণিজ্যঃ পর্ব-১ >> প্রকল্পের ১২ কোটি টাকা ফুরিয়েও ক্রিটিক্যাল এলাকায় পুড়ছে প্লাস্টিক

এই বিষয়ে জানতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্যের উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালনকারী পরিবেশ অধিদফতরের পরিকল্পনা শাখার পরিচালক মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দারের সংগে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে সেন্টমার্টিনে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। যদিও সরজমিন পর্যবেক্ষণে তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

 

এ বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালকের সংগে যোগাযোগ করা হলে তিনিও সেন্টমার্টিনের বিষয়ে কিছুই বলতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

 

** ৫ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন পড়তে দেখুন বিভিনিউজ২৪

*** নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে পরিবেশ অধিদফতরের প্রকল্প বাণিজ্য নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্ব আগামীকাল রবিবার (১৬ জানুয়ারি) প্রকাশিত হবে না। পরদিন সোমবার (১৭ জানুয়ারি) যথারীতি এই ধারাবাহিকের তৃতীয় পর্ব প্রকাশ করা হবে।

বিভি/কেএস/এসডি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2