• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

জলবায়ু পরিবর্তন

উপকূলে বাড়ছে দুর্যোগকালীন সময়ের ব্যপ্তি, বাড়বে ঝড় জলোচ্ছ্বাসও

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ২২ মার্চ ২০২২

আপডেট: ২২:৫১, ২২ মার্চ ২০২২

ফন্ট সাইজ

বঙ্গোপসাগর উপকূল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রাকৃতিক দূর্যোগের জন্য বিশ্বজুড়েই পরিচিত। কেননা বছরের পর বছর ধরে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই অঞ্চল মুখোমুখি হয়ে আসছে রেকর্ড পরিমান ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানীরও। সম্প্রতি বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ায় এই অঞ্চলে আরও বেড়েছে দুর্যোগের পরিমান। 

গত কয়েক বছর ধরেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, জলাবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে হারে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে তাতে বঙ্গোপসাগর উপকূলে আরও বাড়বে দূর্যোগের সংখ্যা ও শক্তি। এবার সেটারই বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে। তথ্য বলছে, শুধু সংখ্যা বাড়া নয়। এই অঞ্চলে বাড়ছে দুর্যোগকালীন সময়ের ব্যপ্তিও।  মৌসুম আসার আগেই চলে আসছে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দুর্যোগ।

চলতি সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরের আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি সৃষ্টি হয়েছিল একটি লঘুচাপ। যা পরবর্তীতে শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে। শক্তি ও গতিপ্রকৃতির বিবেচনায় আবহাওয়াবিদরা ধরেই নিয়েছিলেন এটি রূপ পেতে যাচ্ছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে। যার সম্ভাব্য নামও নির্ধারণ করা হয়েছিল অশনি। যদিও তেমন শক্তি সঞ্চার করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত গভীর নিম্নচাপ আকারেই মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন উপকূলে আছড়ে পড়ে সেটি।

আরও পড়ুন:

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুর কারণে বঙ্গোপসাগরে সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে ঝড়ের সৃষ্টি হয়। বিগত সময়গুলোর তথ্য যাচাই করলে দেখা যায়, এখানকার অধিকাংশ ঝড়ের উৎপত্তি হয়েছে মধ্য এপ্রিলের পরে। কিন্তু এবার প্রায় একমাস এগিয়ে মার্চে (বসন্তকালেই) উপকূলমুখী হয়েছে ঝড়। যা একবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে একেবারেই বিরল ঘটনা। তাই এই ঝড়কে আগাম বা বিরল ঝড় বলেও আখ্যা দিচ্ছেন জলবায়ুবিদরা।

বঙ্গোপসাগর উপকূলের ঘূর্ণিঝড়গুলোর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিগত ১২৯ বছরে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর মিলিয়ে মার্চ মাসে সর্বমোট ৮টি ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয়েছিল। যার মধ্যে ৬টিই বিলিন হয়েছে সমুদ্রেই। ১৯০৭ সালে একটি শ্রীলঙ্কা উপকূলে এবং সবশেষ ১৯২৬ সালের মার্চে একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল তামিলনাড়ু উপকূলে। 

বঙ্গোপসাগর উপকূলের দুর্যোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ নাথ। তাঁর কাছেই প্রশ্ন ছিলো, কেন এই অস্বাভাবিকতা। 

ড. বিশ্বজিৎ নাথ বাংলাভিশনকে জানান, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এগিয়ে আসছে দুর্যোগের সময়, বাড়ছে শক্তিও। গত ৩ মাসে বঙ্গোপসাগরের আন্দামান নিকোবর ও মিয়ানমার উপকূলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল। অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সমুদ্রের এই অঞ্চলের তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৪ দশমিক ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। যা এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির মূল কারণ। 

আরও পড়ুন:

`অপরিকল্পিত নগরায়ণ জলবায়ু বিপর্যয়ের ভয়াবহতা বাড়াচ্ছে`

এই গবেষকের সহযোগিতা নিয়ে নাসা থেকে বঙ্গোপসাগর উপকূলের বিগত ৬২ বছরের ঘূর্ণিঝড়গুলোর তথ্য পর্যালোচনা করি আমরা। এতে দেখা যায় ৬০ বছরে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে ৪ গুণ বেড়েছে এই উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আঘাতের হার। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে, ১৭৯৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ২২৪ বছরে বঙ্গোপসাগর উপকূলে আঘাত হেনেছে ৭৯টি ঘূর্ণিঝড়। এর মধ্যে ১৯৭১ সাল থেকে ২০২১ সালের ইয়াস পর্যন্ত ৫১ বছরে দেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে ছোটবড় ৩৫টি ঘূর্ণিঝড়।

এই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ১৮১ বছরে যেখানে ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল ৩০টি, সেখানে ১৯৬১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৬০ বছরে হয়েছে ৪৯টি। এর মধ্যে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ইয়াস পর্যন্ত ২ বছরে আঘাত হেনেছে ৪টি ঘূর্ণিঝড়। সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি যার শক্তিও পৌছেঁছে ভয়াবহ মাত্রায়।

নাসা মাল্টিসেন্সর ডাটা থেকে বঙ্গোপসাগরপৃষ্ঠের ২০০২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৯ বছরের তাপমাত্রার তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, ২০০২ সালের  জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা ২৮.৮৯ এবং অক্টোবর মাসে ২৯.৮৯ ডিগ্রি ছিল।  ২০২১ সালে এসে ফেব্রুয়ারি মাসেই তাপমাত্রা উঠে যায় ২৮.১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে যা মে মাসে গিয়ে ৩১.০০ ডিগ্রিতে পৌঁছে। গড় হিসেবে এই সময়ের মধ্যে ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে বঙ্গোপসাগরে। সবশেষ অশনির আগমনের পূর্বমুহূর্তে (বিগত ৩ মাসে) এই তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩০.৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিগত সব রেকর্ডকে পেছনে ফেলেছে।  

আরও পড়ুন: 

৯৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে ধেয়ে আসছে অশনি!

এ বিষয়ে ড. বিশ্বজিৎ নাথ বলেন, বঙ্গোপসাগরপৃষ্ঠে যে অস্বাভাবিকহারে তাপমাত্রা বাড়ছে সেটা আমরা আগে থেকেই বলে আসছি। তবে এবার অশনির আগ মুহূর্তে যে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে সেটি অস্বাভাবিকেরও অস্বাভাবিক। তবে এই তাপমাত্রা পুরো বঙ্গোপসাগরে ছিল না। এটি শুধু আন্দামান নিকোবর ও মিয়ানমার কোস্টের দিকের। একই সময়ে বাংলাদেশ কোস্টে তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৭ দশমিক ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। যদিও এটিও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। এই তাপমাত্রাও ঝড় নিয়ে আসতে পারে। তবে এখন বাংলাদেশ উপকূলের তুলনায় মিয়ানমার ও আন্দামান নিকোবরের দিকে তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ঝড় সেদিকেই গিয়েছে।

তবে আন্দামান নিকোবর ও মিয়ানমার কোস্টের তাপমাত্রা শুধু জলবায়ুজনিত কারণে নয়, গত তিন মাসে এখানে সংগঠিত ১২টি ভূমিকম্পের কারণেও অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন এই গবেষক।

আরও পড়ুন:

সেন্টমার্টিনঃ প্রকল্পের ২৬ হাজার গাছ গেলো কই? (ভিডিও)

সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে বাংলাদেশে দুর্যোগকালীন সময় আরও এগিয়ে আসবে। ফলে একটি দুর্যোগ বিদায় করে আরেকটি আসার আগে প্রস্তুতি নেওয়ারও সময় পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন দুর্যোগ গবেষক ড. বিশ্বজিৎ নাথ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জলবায়ু পরিবর্তনের দ্রুত গতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া, উপকূলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও ঝড় মোকাবিলায় অত্যাধিক বনায়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ড. আব্দুল মান্নান বাংলাভিশনকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সারা বছরই ডিপ্রেশন তৈরি হয়। কিন্তু সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এই অঞ্চলে তাপমাত্রা কম থাকে বলে অনুকূল পরিবেশ না পেয়ে উপকূলের দিকে আসে না। কিন্তু এখন কিছু কিছু উপকূলের দিকে চলে আসছে। ইদানিং জলবায়ু এত দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে যে অনেক বিরল ঘটনাই ঘটে যাচ্ছে। যদি এটিও উপকূলে ঝড় আকারে আঘাত হানে তাহলে এটিও বিরল ঘটনাগুলোর একটি হবে।

বিভি/কেএস/ বিএএন

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2