• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

বাংলাদেশে ডলফিনের মতো ছোট হাঙ্গর সদৃশ নতুন তিমির সন্ধান

প্রকাশিত: ১৯:২১, ২৬ মে ২০২২

আপডেট: ১৯:২৪, ২৬ মে ২০২২

ফন্ট সাইজ
বাংলাদেশে ডলফিনের মতো ছোট হাঙ্গর সদৃশ নতুন তিমির সন্ধান

বামন কোগিয়া তিমির মাথার পাশে থাকা সাদা দাগটির কারণে শিকারি প্রাণীরা এদের হাঙ্গর ভেবে ধোঁকা খায় ও পালিয়ে যায় (ছবি: আসাদুজ্জামান মিরাজ)

তিমি বড় আকারের একটি সামুদ্রিক প্রাণীর নাম এটা মোটামুটি সবাই জানে। কিন্তু হাঙ্গরের মতো এবং ডলফিনের চেয়ে আকারে ছোট কোনো প্রাণীকে যদি তিমি বলা হয় তাহলে অবাক হতে পারেন যে কেউ। আবার যদি সেই তিমি বাংলাদেশেই রয়েছে বলা হয় তাহলেতো আরও অবাক হতে পারেন আপনি।

তবে কল্পনা বা গল্পে নয়, বাস্তবেই বাংলাদেশে ডলফিনের চেয়ে ছোট ও দেখতে হাঙ্গরের মতো একটি তিমির সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। এটি বাংলাদেশের তিমির তালিকায় যুক্ত হলো নতুন প্রজাতি হিসেবে।

জানা যায়, গত ২২ মে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে একটি হাঙ্গর সদৃশ প্রাণী অসুস্থ অবস্থায় উঠে আসে এবং মারা যায়।  তখন কে এম বাচ্চু নামে কুয়াকাটা ডলফিন সংরক্ষণ কমিটির একজন সদস্য সেটির ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করে। সেই পোস্ট ছড়িয়ে পড়লে নজরে আসে গবেষকদের।  

ছবি  ও ভিডিও দেখে ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (ডাব্লিউসিএস) বাংলাদেশ এর গবেষকরা চিহ্নিত করেন এটি  বামন কোগিয়া প্রজাতির তিমি। সংগঠনটি জানায় তাদের গবেষক দলের সদস্য রোবায়েত মনসুর মুগলী, ব্র্যান্ড স্মিথ, এলিজাবেথ ফাহর্নি মনসুর, ড. জাহাঙ্গীর আলম, নাদিম পারভেজ এবং মো. রাসেল মিয়া এই প্রজাতি চিহ্নিত করেন।

গবেষক দলের সদস্য নাদিম পারভেজ বাংলাভিশনকে বলেন, বিজ্ঞানীদের কাছে Kogia sima নামে পরিচিত এই তিমিটি প্রাথমিকভাবে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়। স্থানীয়রা বীরত্বের সাথে তিমিটি সমুদ্রে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও স্রোতের কারণে বার বার ফিরে আসে এবং প্রায় দুই ঘণ্টা পর তিমিটি মারা যায়। তিমির জন্য ঘটনাটি দুঃখজনক হলেও ছবিগুলো বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নিয়োজিত কর্মীদের কাছে খুবই আশ্চর্যজনক ছিল। ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা বাংলাদেশে প্রথম এই প্রজাতির তিমির রেকর্ড নিশ্চিত করি।সৈকতে আটকা পড়া বামন কোগিয়া তিমিকে সমুদ্রে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা (ছবি: আসাদুজ্জামান মিরাজ)

গবেষকরা জানান, তিমিটি দেখতে প্রায় হাঙ্গরের মতো, যার মাথা বর্গাকার, নাকের বর্ধিতাংশ সামনের দিকে অভিক্ষিপ্ত এবং মাথার পাশে নকল ফুলকাছিদ্রের মতো দেখতে একটি সাদা দাগ রয়েছে। এ তিমির দৈহিক গঠন এরকম যা মোটেই কাকতালীয় বিষয় নয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহার করে বামনকোগিয়া তিমি তাদের শিকারি প্রাণী যেমন ঘাতক তিমি ও বড় হাঙ্গরদের এভাবে বোকা বানায় যে সেআসলে একটি হাঙ্গর। নকল ফুলকাছিদ্রের মতো দাগ ছাড়াও বামন কোগিয়া তিমির একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সেটেশানদের মধ্যে অনন্য। এদের পেটের ভিতরে অন্ত্রের সাথে লালচে-বাদামী তরল দিয়ে ভরা একটি ছোট থলি সংযুক্ত থাকে। শিকারীদের উপস্থিতিতে এরা থলি থেকে তরল পদার্থ পানিতে ছুঁড়ে দেয় এবং নিজেদের আড়াল করে। বিষয়টা আসলে অক্টোপাসের মতো যারা কিনা ভয় পেলে কালির মতো কালো তরল নির্গত করে। যেহেতু এরা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম তিমি, তাই অন্যান্য বিশালাকার তিমির মতো আকার দিয়ে এরা শিকারি প্রাণীদের ভয় দেখাতে পারে না।

তথ্য বলছে, বিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ৯০টিরও বেশি প্রজাতির সেটেশানদের মধ্যে বামন কোগিয়া তিমি একটি। সেটেশানরা আমাদের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী যারা তাদের সারাজীবন পানিতে কাটায় এবং বাতাস থেকে শ্বাস নেয়। মানুষের মতই মা সেটেশানরা সাধারণত একটি বাচ্চা বা শাবক জন্ম দেয় যারা স্বাধীনভাবে জীবন যাপনে সক্ষম হবার আগ পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে। ডলফিন, পরপয়েস এবং বামন কোগিয়াসহ আরো কয়েকটি 'দাঁতাল' তিমিদের ধারালো দাঁত থাকে যা দিয়ে তারা পিচ্ছিল শিকার ধরে ও মুখে পুরে নেয়। তবে অন্যান্য সকল সেটেশানদের মতো এরা শিকারকে চিবিয়ে না খেয়ে সম্পূর্ণ গিলে ফেলে।

সকল সেটেশানদের একটি শক্তিশালী লেজপাখনা থাকে যা ফ্লুক নামে পরিচিত। সেটেশানরা লেজপাখনা উপরে নিচে নাড়ানোর মাধ্যমে সামনের দিকে চলে, দু'টি পার্শ্বপাখনা ব্যবহার করে সাঁতার কাটে এবং পিঠপাখনা ব্যবহার করে দেহের ভারসাম্য ও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সেটেশানদের প্রজাতিগুলোকে আলাদা করতে সাধারণত পাখনাসমূহ, মাথা, ঠোঁট বা রোস্ট্রাম এবং দেহের আকৃতির পাশাপাশি দেহের রঙ ব্যবহৃত হয়। অনেকক্ষেত্রে বামন কোগিয়া তিমিকে এদের কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের খাটো কোগিয়া তিমি Kogia breviceps এর সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়। তবে অপেক্ষাকৃত বড় ত্রিভুজাকার পিঠপাখনা, যা নাকের বর্ধিতাংশ থেকে লেজপাখনা পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের প্রায় মাঝামাঝি অবস্থিত, এবং আকারে ছোট হওয়ায় কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতে প্রাপ্ত সেটেশানটিকে বামন কোগিয়া তিমি হিসেবে নিশ্চিতভাবে সনাক্ত করা হয়।

বাংলাদেশে রেকর্ডকৃত এই বামন কোগিয়া তিমি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ গভীর সমুদ্রে বাসকারী এই তিমি সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। যদিও, বাংলাদেশের সমুদ্রে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ডাব্লিউসিএস পরিচালিত গবেষণার সময় এই প্রজাতিটি কখনো দেখা যায়নি, তবে বামন কোগিয়া তিমি আমাদের ধারণার চেয়ে বেশি পরিমাণে থাকতে পারে। কারণ, সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ সম্পূর্ণ শান্ত থাকলে এবং এরা সমুদ্রপৃষ্ঠে গতিহীনভাবে অবস্থান করলে এদের দেখা পাওয়া সম্ভব অন্যথায় দেখা পাওয়া দুরূহ বলেও জানান ডব্লিউসিএস এর গবেষকরা।

কুয়াকাটায়  আটকে পড়া তিমিটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানাতে না পারলেও ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি বলছে, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশ কয়েকটি প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, এদের দুটি প্রজাতিই প্লাস্টিকের ধ্বংসাবশেষকে ভুলবশত স্কুইড, অক্টোপাস বা কাটলফিশ ভেবে গিলে ফেলে এবং মারা যায় যার বলেই এরা আজ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। প্লাস্টিকের ধ্বংসাবশেষ এদের পরিপাকতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করতে পারে, এবং ফলস্বরূপ অনাহারে মৃত্যু ঘটতে পারে। আশ্চর্যজনকভাবে বাংলাদেশের সৈকতে পাওয়া গর্ভবতী এই বামন কোগিয়া তিমির পেটে দুটি বাচ্চা ছিল। সেটেশানদের মধ্যে এই ঘটনা অত্যন্ত বিরল, কারণ সেটেশানরা সাধারণত প্রতিবারে একটি বাচ্চা জন্ম দেয়।

বিভি/কেএস

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2