স্মার্টফোনে প্রাণহীন বন্ধুচক্রের আড্ডা

ক্যাম্পাস জীবনে প্রত্যেকের অপরিহার্য সংগী হলো বন্ধু। আর একে অপরের সুখে দুঃখে সবসময় পাশে থাকার নাম হলো বন্ধুত্ব। সবারই নির্দিষ্ট কিছু বন্ধুচক্র থাকে। মানুষ জীবনে ভালো সময়গুলোর বেশিরভাগই চলে যায় বন্ধুত্বের আড্ডায়। দৈনন্দিন জীবনের নানান কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয় এই আড্ডায়।
অন্য যেকোনো জায়গায় যেমন একটি কথা বলার আগে দশবার ভাবতে হয়। বন্ধুত্বের আড্ডায় তেমনটি করতে হয় না। একজন ব্যক্তি নিঃসংকোচে তাঁর মনের অভিব্যক্তিগুলো তুলে ধরতে পারেন এখানে। ক্যাম্পাসের বন্ধুত্বের আড্ডায় যেমন থাকে হাসি ঠাট্টা ও খুনসুটি, তেমনি থাকে সুখ দুঃখের গল্পগুলোও।
গল্প, আড্ডার মাঝে দেয়াল স্মার্টফোন:
বর্তমান ফেসবুক এবং স্মার্টফোনের যুগে বন্ধুত্বের আড্ডাগুলো আর সেভাবে জমে উঠে না। ঘরে বসে ফেসবুকিং আর চ্যাটিং করে সময় পার করছেন বেশিরভাগ মানুষ। ঘরে বসেই যেখানে সকল বন্ধুর সংগে কথা ও দেখা হওয়ায় সরাসরি আড্ডায় আগ্রহ কমছে বন্ধুদের।
অনেকসময় বন্ধুরা আড্ডাচক্রে হাজির হলেও ফেসবুক, ইন্টারনেট ব্যবহারের সহজলভ্যতা ও অভ্যাসের কারণে আড্ডার মধ্যেও ম্যাসেজিং ফেসবুক স্ক্রলিং করে থাকে। বন্ধুচক্রের আড্ডাতে যেখানে শোরগোল আর হুটহাট গানের দু'য়েক লাইন ভেসে উঠার কথা সেখানে এখন শুধুই নীরবতা! সবাই শারীরিকভাবে পাশাপাশি বসে থাকলেও মনস্তাত্বিকভাবে যেনো কতদূর! মাঝখান থেকে একজন হঠাৎ হেসে উঠছেন, অথচ তার হাসির কারণই জানেন না পাশের বন্ধুটি। দীর্ঘক্ষণ পাশাপাশি বসে থেকেও ফিরছে একরাশ নীরবতার সাক্ষী হয়ে, জানতেও পারছে অন্যরা কী পোশাক পরে এসেছিলো। এই স্মার্টফোনের কারণে বন্ধুত্বের সম্পর্ক উষ্ণতা হারাচ্ছে, বাড়ছে শীতলতা। বোঝাপড়া কমছে, অবনতি হচ্ছে সম্পর্কের।
স্মার্টফোনের অপব্যবহার:
দিন দিন স্মার্টফোনের অপব্যবহার বেড়েই চলেছে। এছাড়া ফেসবুক, ইউটিউব ও বিভিন্ন ধরনের মোবাইল গেইমে আসক্তি কিশোর তরুণদের মাঝে আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে বয়সের যে সময়টাতে শিশু-কিশোরদের মাঠে খেলাধুলার কথা সেই সময়ে তারা মোবাইলে ব্যস্ত থাকছে। এতে করে অল্প বয়স থেকেই তারা মাঠের খেলাধুলা ও বন্ধুত্বের আড্ডা এড়িয়ে ঘরে বসে স্মার্টফোন আর মোবাইল গেইমের দিকে ঝুঁকছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়াগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যা বিভাগের এক অধ্যাপক প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর স্মার্টফোনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। 'হ্যাভ স্মার্টফোনস ডেস্ট্রয়েড আ জেনারেশন'? শিরোনামের এই গবেষণায় উঠে এসেছে, এই যুগের কিশোররা বন্ধুদের সংগে কম সময় কাটাচ্ছে, ডেটিংয়ে কম বেরোচ্ছে, এমনকি পুরো প্রজন্মের ঘুম কম হচ্ছে। হতাশা, উদ্বেগ ও আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে সাইবার নিপীড়নের কারণে।
পরিমিত ব্যবহার :
স্মার্টফোন আর ফেসবুক যে সব সময় বন্ধুত্বের আড্ডার ক্ষতি সাধন করছে এমনটিও নয়। এই স্মার্টফোন ফেসবুক ইত্যাদির কল্যাণে করোনার মধ্যে লকডাউনে সবাই ঘরবন্দী জীবনযাপন করলেও ভার্চুয়াল আড্ডায় একে অপরের সংগে যুক্ত হতে পেরেছে। স্মার্টফোনের সুষ্ঠু ব্যবহার বন্ধুত্বের আড্ডার জন্য হুমকি নয়। এর সঠিক ও পরিমিত ব্যবহার সমাজের জন্য কল্যাণও বয়ে আনতে পারে। তবুও বন্ধুত্বের সরাসরি আড্ডার যে এক প্রাণবন্ত উৎফুল্লতা তা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়। ফেসবুক, ইন্টারনেট, স্মার্টফোনের ব্যবহার পরিমিত হোক বন্ধুচক্রের আড্ডাগুলো আবার ফিরে পাক প্রাণচাঞ্চল্য।
বিভি/এমএস
মন্তব্য করুন: