গট ফাদারে গড ফাদার?
![গট ফাদারে গড ফাদার? গট ফাদারে গড ফাদার?](https://www.bvnews24.com/media/imgAll/2024April/image---2024-06-21T111008294-2406210511.jpg)
বংশীয় ছিলছিলায় হায়াত বেশি থাকার সুবাদে বেঁচে গেছে সাদিক এগ্রোর উচ্চবংশীয় ছাগলটি। আবার বড় বাপের পোলাটিকে ’এই ছেলে আমার না’ দাবি করে সাইডলাইনে চলে যাওয়ার চেষ্টা বাবার।
আলোচনা বা ব্যাপারটিকে এভাবে রাখলে জাতি আপাতত নাজাত পায়। ছাগল দিয়ে কী হবে? দরকারই বা কী গোটা জাতিকে এভাবে ছাগলামিতে মত্ত রাখার? দেশে কী আর কোনো বিষয়আসয় নেই? ইফফাতের বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচ্চমর্যাদার কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমানের কুকীর্তি নিয়ে গণমাধ্যমে আগেও টুকটাক তথ্য এসেছে। এতে তার একটা পশমও হিলানো যায়নি। বরং প্রমাণ করে ছাড়া হয়েছে, তিনি বড় ভালো মানুষ। ভীষণ অমায়িক! দেখতে কতো সুন্দর! মুখে হাসি লেগেই থাকে। সহাস্য বদনে কী বিনম্র তার আচরণ ও ভাষা। এখন একটি ছাগল তার সারাজীবনের কান্না হবে?
বরংএকাধিক বিবি-বাচ্চাসহ তার জন্য কান্নার বহুজন আছে। দোয়া-খায়ের করার লোকও আছে। নগদেই তো দোয়া করবেন সহকর্মী ওয়াহিদা। মতিউরের ছেলের কাণ্ডে ওয়াহিদা ইস্যু একটু হলেও মচকে গেছে। কিছুটা ফসকে গেছে আজিজ, বেনজীর, আসাদুজ্জামান মিয়া সাহেবদের ঘটনা। উছিলা তো ছাগল। এখন মওকা মনে করে নানানজন নানান কথা বললেও তাদের ওপর অনেকজনের হাত আছে, থাকে। সময়দৃষ্টে তা দেখা যায়। অথবা নানান ইস্যুর তোড়ে আগেরটা অনেকে ভুলেও যায়। বিশেস করে কেউ
এখন এই ছেলেটার বাবার দায়িত্ব শাকিব খানের ওপর না চাপালেই হয়। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ঘরে জন্মালো ছেলের দায়িত্ব পড়ে শাকিব খানের ওপর। কচলে ধরলে বেচারা শাকিবও ’না’ করতে পারেন না। কোলে তুলে নেন।
নিত্যপণ্যের বাজারের আগুনসহ জরুরি নানান ঘটনা ভুলিয়ে নাগরিকদের ছাগল চর্চায় ব্যস্ত রাখার চাতুরি লুখে দিতে হবে। আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান তার এক বিবির সন্তানকে ;চিনেন না; বলার মাঝে সমালোচনার ততো উপাদান নেই। ’দেখিলে চিনিবো বলেও তো একটা কথা আছে। আফ্রিকার অনেক গোত্র প্রধানও নিজের সকল সন্তানদের চেহারা মনে রাখতে পারেন না, পত্নি- উপপত্নীদের নাম মনে রাখতেই তাদের মেমোরি ফুল লোড হয়ে যায়। মায়েরা কেবল জানেন কোন সন্তানের বাবা কে? গরু হারানো যাওয়ায় গোপাল ভাঁড়ের বৌকে মা ডাকার গল্প অনেকেরই জানা। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের কোনো কোনো জায়গায়ও জমিজিরাতসহ নানান কিছু রক্ষার স্বার্থে বিয়ের পর বিয়ে করে নিশ্চিন্ত হওয়ার একটা সমাজ স্বীকৃত ব্যবস্থা ছিল। তারাও সব সন্তানকে চিনতেন না। সন্তানরা এসে পরিচয় দিতো সে কোন ঘরের। এ নিয়ে বহু হাস্যরসের কাহিনী রয়েছে। চট্টগ্রামের এক খান্দানি- বনেদি ছিলেন রাজনীতিতে তিনি কিংবদন্তীর মতো । বলা হয়ে থাকে, অধিক বিবাহের কারণে অধিক সন্তানের জনক ছিলেন তিনি। কখনো কখনো দেখা মাত্র সবাইকে চিনতে পারতেন না। তাই জানতে চাইতেন, এই সন্তান কোন ঘরের। ‘তুঁই খারার ফোঁয়া ওঁয়াও’।
দুনিয়ার কোনো সন্তানই বাপহীন নয়। তা ছাগলের বাচ্চা হলেও। পাঁঠারা তা মনে রাখতে পারে না। বা স্বীকার করার সময় হয় না। মায়েদের কলিজা কাঁদে। ছাগলদেরও এখন এসব শুনে হাসি আসতে পারে। কারণ আগের দিন আর নেই। কোটিতে গরু, লাখে ছাগল মুরগী হাজার পার। টাকা এখন পদওয়ালাদের পিছু ঘোরে। তা যে কয়েক পায়েরই হোক। মানুষ এখন হাসতেও ভুলে গেছে। কথায় বলে ;অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর; এই প্রবাদ যেটা বলে নাই তা হলো অধিক শোক যখন পার্মানেন্ট হয়ে যায়, তখন মানুষ সবকিছুতেই হাসে। চারপাশের চলমান কর্মকাণ্ড দেখতে দেখতে অনেকে ওই আলফা স্তরে পৌঁছে গেছে। মাঝেমধ্যে আবার পুরান কথাও মনে আসে।
মনে আছে না ঐশীর কথা? ২০১৩ সালের দেশের আবহে একটি বহুল আলোচিত নাম। বাবা-মাকে ‘নিজ হাতে’ খুন করে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যকর ও মর্মাহত ঘটনার জন্ম দেয় পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদশর্ক মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান দম্পতির একমাত্র মেয়ে। লাগাম ছেড়ে দিয়ে পরে মেয়ের বেপোরোয়া ও উশৃঙ্খল জীবনে বাধা দেওয়ার কারণেই ওই বছরের ১৬ আগস্ট রাজধানীর চামেলীবাগের নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন ওই দম্পতি । এশীকে চিনি না বা সে আমাদের সন্তান নয়, তা বলার সৌভাগ্য হয়নি মাহফুজ-স্বপ্না দম্পতির।
পদে-পদবীতে বেনজীর, আসাদুজ্জামান, মতিউর মিয়া সাবরা মাহফুজের চেয়ে অনেক উচ্চমার্গের। তাই তাদের সমান্তরাল করা মানায় না। তবে, আলোচনার সময় চলে আসে স্মরণে। মাঝে মধ্যে ঘটনাচক্রে দুয়েকটা ভাইরাল হয়ে গেলে আইজি আর ইন্সপেক্টর তুলনা করার সময়ও হয় না। পদ-পদবি মনেও থাকে না। নজিরবিহীন মিয়াদের হাতে এত এত সম্পদের বিবরণ শোনার বেশি আর কি-ই বা সাধ্য আছে আমজনতার। ওই মিয়াদের মাঝে দেশের প্রতিচ্ছবি দেখে এই জনতারা। আর ভাবে, মিয়া ও মিয়ার বিবি-বাচ্চাদের কেন সবাই মাথায় তুলে রাখে ?
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: