২১ বছরেও বিচার শেষ হয়নি বাঙালি জাতিসত্ত্বার ওপর আক্রমণের

রমনা বটমূলে বর্ষবরণে বোমা হামলা
আজও মনে আছে, একুশ বছর আগে সেদিন ছিল শনিবার .....। ঠিক আগের দিন শুক্রবার ঢাকা শহর তো বটেই পুরো দেশ জুড়ে, ধর্মের নামে জঘন্যতম ভাষায় আক্রমণ করেছিল দিনটি উদযাপন নিয়ে। কারণ, এ দিনে বাঙালি মাত্র ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মেতে ওঠেন প্রাণের উৎসবে। বাংলাভাষী মানুষের একমাত্র সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ।
পহেলা বৈশাখ নিয়ে কম ফতোয়া দেয়া হয়নি গত একুশ বছর জুড়ে, আজও চলমান। সেদিন ছায়ানটের মূল মঞ্চের বেশ নিকটেই বিস্ফোরণ ঘটায় উগ্রবাদী অমানুষেরা। নিঃসন্দেহে লক্ষ্য ছিল মঞ্চ। তাৎক্ষণিকভাবে সেখানেই মারা যান একজন অজ্ঞাতসহ (সম্ভাব্য বোমাবহনকারী?) দশজন।
ভাবছেন বিচার সম্পন্ন হয়েছে?
না, আজ একুশ বছরেও বিচার সম্পন্ন হয়নি বাঙালি জাতিসত্ত্বার ওপর এই ভয়াবহ আক্রমণের। কবে নাগাদ এই বিচার সম্পন্ন হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ওই ঘটনায় করা দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে রায় ঘোষিত হলেও হাইকোর্টে এখনও বিচার সম্পন্ন হয়নি। মামলাটি বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্টে বিচারাধীন।
সময় চলে গেছে বহুদূর, ২ দশকেও বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াতে পারেনি এই দানবদের বিরুদ্ধে। বরং এর উল্টোটাই প্রকটভাবে চোখে দেখেছি আমরা। গত কয়েক দশক যাবত ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে পৃথিবীর তাবৎ ঘৃণার চাষাবাদ করা হল সবার নাকের ডগায়। সহনশীলতা, উদারতার বদলে বেশিরভাগের মননে স্থান করে নিল অন্যের ধর্ম,বর্ণ, মতের প্রতি সুতীব্র ঘৃণা আর অসহনশীলতা।
আমাদের একমাত্র সার্বজনীন উৎসবকে কেন্দ্র করে, একটি শ্রেণীর প্রচণ্ড গাত্রদাহ উৎকটভাবে লক্ষ্যনীয়। আজ যার বয়স একুশ, তাঁর জানার কথা নয় সেদিনের বিভীষিকা। সেদিন, ওরা স্তব্ধ করতে চেয়েছিল বাংলা ও বাঙালির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক ও সার্বজনীন আয়োজনটি। অথচ, ছায়ানটের এই আয়োজনের ইতিহাস নিজ দেশ ও জাতির ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষার ইতিহাস, এই আয়োজন নিজ দেশের কৃষ্টিতে অবিচল থাকার আয়োজন।
না আমরা থেমে যাইনি, ২০০২ সালে আমরা দ্বিগুণ হয়ে ফিরেছিলাম রমনায়। সেবার চিহ্নিত অপশক্তি দারুন শক্তিশালী থাকা সত্ত্বেও হয়তো অনেকের মনে থাকবে, ছায়ানটের আয়োজন প্রাঙ্গণে মাত্র ৫ জন তরুনের মানববন্ধনটির কথা। পুলিশি হুমকি উপেক্ষা করে সেদিন রমনায় ছায়ানটের আয়োজনে মাত্র ৫ জন তরুণ নিজেদের শেকলে আবদ্ধ করে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন প্রতিবাদে।
আবারও শুনি বিভিন্ন জায়গায় এরা হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে এই আয়োজন করতে না দেবার।
আমাদের ভবিষ্যৎ, আজ যে তরুণ প্রাণ আঠারো'তে পা রেখেছে তাঁর প্রতি মিনতি করি, জেনে নিও জন্মভূমির প্রচণ্ডতম দহনের কথা। রুখে দাঁড়াও, তারুন্যের জয়গান গাও, হৃদয়ের সব অর্গল খুলে ভালোবাসো এই দেশ, ভাষা, দেশের মানুষকে। বড় কষ্টে অর্জিত আমাদের সবকিছু...
"আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ
র্স্পধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।
তব আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি,
এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে,
বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী
এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।
এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,
এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়-
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।"
(কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য)
নীরবতা এখন অপরাধ, অপরাধীর জীবন না চাইলে সরব হউন।
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: