‘নিশিতা‘র স্বপ্ন পূরনে মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশন

ছোট্ট হাসিখুশি মেয়ে নিশিতা, জীবন কি তা এখনো বুঝতে শেখে নি, থাকেন রাজধানীর হাজারীবাগের বউবাজার বস্তিতে। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট নিশিতা। খুব অভাবের সংসার।
আমার সাথে পরিচয় গত বছর শীতের সময় রাত তখন আনুমানিক ১২টা । আমি, নাজাত, সামির ও বন্ধু আলামিন রাস্তায় শীতবস্ত্র বিতরণ করতে করতে হঠাৎ ধানমন্ডি লেকের পাড়ে চলে আসি আরো কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করার জন্য।
শীতের কাপড় দেখে নিশিতা তখন ওর বাবা-মার হাত ধরে দৌড়ে আমাদের কাছে আসে আর আমরাও খুব সুন্দর দেখে তাকে শীতের কাপড় উপহার দেই। শীতের কাপড় পেয়ে সে খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে আর বিড়বিড় করে আমার কানের কাছে অনেক কিছু বলতে থাকে, মুহূর্তেই ওর ছোট হাতের স্পর্শে আমার হৃদয়ে অন্যরকম এক ভালোবাসা অনুভব করি এবং তাকে ভালবেসে ফেলি। মনে হচ্ছিল সে আমার কত যুগের চেনা আপনজন। আপন মানুষ। নিজের মানুষ!!
এভাবেই ছোট্ট নিশিতার সাথে পরিচয় পর্বের কথা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নারগিস সুলতানা।
সম্প্রতি নিশিতার পরিবারকে ফাউন্ডেশনের স্বাবলম্বী প্রজেক্টের আওতায় দশ হাজার টাকা প্রদান করেন নারগিস সুলতানা। উদ্দ্যেশ্যে পরিবারের সফলতা। এই টাকা দিয়ে ছোট পরিসরে কোন ব্যবসা করে যেন দারিদ্রের কষাঘাত থেকে মুক্তি মেলে পরিবার টির। এছাড়াও গরুর মাংস,চাল, ডাল, আলু, পিয়াজ, তেল, লবণ ও কিছু ফলসহ পরিবারটিকে পুরো এক সপ্তাহের বাজারও দিয়েছে মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশন।
এভাবেই নিশিতার মতো হাজারো মানুষের পাশে দাড়িয়ে তাদের স্বপ্ন পূরণে কাজ করছে মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশন। করোনা এবং সাম্প্রতিক বন্যায় ফাউন্ডেশনের "দূর্যোগে দুর্নিবার শাখা" শত বাধা পেরিয়ে ঢাকা থেকে গিয়ে সিলেটের বন্যাদূর্গত ও অসহায় পানিবন্দী মানুষদের পাশে দাড়িয়েছে। (ছবি)
ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নারগিস সুলতানা বাংলাভিশনকে বলেন, ২০২০ সালে “আলোকিত করি পৃথীবি” স্লোগানে মানব সেবায় বৃত হয়ে ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। তখন থেকেই অদ্যাবধি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গরীব, পথশিশু, অসহায় সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে মানুষকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের স্বাবলম্বী প্রজেক্টর আওতায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে বিশ হাজার এবং বাঁকি ১৩ জনকে দশ হাজার টাকা করে ক্ষুদ্র ব্যবসা করার জন্য সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।
নারগিস সুলতানা বলেন, নিয়মিত প্রতি শুক্রবার ঢাকা উদ্যানে প্রায় ৫০০ পথশিশু এবং ভিক্ষুকদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে এসব মানুষ সপ্তাহে একবার হলেও পেট ভরে খাওয়ার সুযোগ পান।
এছাড়াও অনেক পরিবার আছে যাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে ভর্তি হতে পারে না বা ফর্ম ফিল-আপ এর টাকা যোগাড় করতে পারে না। তাদেরকেও সহযোগিতা করা হয় বলে জানান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৩০ জন বস্তির ছেলে-মেয়েকে পবিত্র আল-কোরআন শিক্ষার ও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধিদের সাহায্যেও কাজ করে যাচ্ছে ফাউন্ডেশনটি। প্রতিবন্ধি পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ, ঘর নির্মাণে সহযোগিতা এবং যারা ভাতা পাননা তাদের ভাতা পেতে সহযোগিতার হাত প্রসারিত রেখেছে মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশন।
ফাউন্ডেশনের নিম্নলিখিত শাখাসমুহের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছেঃ
১। "সকাতরে-মানবের তরে" মানব কল্যান শাখাঃ
নিয়মিতভাবে অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত ও নিপিড়ীত মানুষকে সাহাজ্য করা; অর্থ, দ্রব্য, মনোবল, সাহস দিয়ে।
২। "ওরাও মানুষ" শিশু কল্যান শাখাঃ
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা, সাস্থ্য, নিরাপওাসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদার সহায়তা দেয়া।
৩। "উন্নয়নে নারী" নারী কল্যান শাখা।
৪। "বটবৃক্ষের ছায়াতলে" বয়স্ক ব্যাক্তি/বৃদ্ধ/বৃদ্ধা কল্যান শাখাঃ অর্থ, দ্রব্য, মনোবল, সাহস দিয়ে অসহায় বৃদ্ধ/বৃদ্ধাদের পাশে দাড়ানো।
৫। "বিশেষ মানুষ বিশেষ অধিকার" শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী কল্যান শাখা।
৬। "সুখী পরিবার" পরিবার পরিকল্পনা শাখা।
৭। "জীবন বাঁচাই" স্বাস্থ্যসেবা শাখাঃ নিয়মিতভাবে রক্ত দানের মাধ্যমে এবং চিকিৎসা সেবার সুযোগ করে দিয়ে অসুস্থ্য ব্যাক্তিদের সাহায্য করা।
৮। "দুর্যোগে দুর্নিবার" প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা শখা।
৯। " মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশন সাংস্কৃতিক সংঘ" শাখাঃ সদস্য/সদস্যাসহ সকল শাখার প্রয়োজনে সাংস্কৃতিক চচা'/সুস্থ্য বিনোদন অনুষ্ঠান আয়োজন।
এসব শাখার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সমাজের ছিন্নমূল শিশু, প্রতিবন্ধি, বয়স্ক ছাড়াও অসহায়দেরও নিয়মিত সহযোগিতা করে যাচ্ছে মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশন।
নারগিস সুলতানা বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি ১৫-১৮ বছরের অনেক মেয়েরা দিনের রাস্তায় ফুল বিক্রি করে রাতে তাদের ঘুমের জায়গা না থাকায় যত্রতত্র তারা ঘুমায়। ফলে তারা অনেক খারাপ কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। আমি তাদের সাথে কথা বলেছি, তাদের বুঝিয়েছি। তারা আমাকে জানিয়েছে, কাজের সুযোগ হলে তারা এসব কাজ ছেড়ে দেবেন। এসব মেয়েদের কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করছে মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশন।
শুধু তাই নয়, অর্থাভাবে যারা চিকিৎসা করতে পারেন না। তাদের ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়।
নারগিস সুলতানা বলেন, মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশন একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। সকলের সহযোগিতায় এই কার্যক্রম চলমান। তাই মানুষের আস্থার জায়গা ঠিক রাখতে আমরা ইতিমধ্যেই আরজেএসসি থেকে আমাদের ফাউন্ডেশনের রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করেছি। এছাড়াও সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকেও রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া চলমান।
ভবিষ্যতে পথশিশুদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন এই স্বপ্নবাজ নারী।
বিভি/এসআই
মন্তব্য করুন: