হাসপাতালে ভর্তি তারপরও জামিন নিতে ছুটতে হলো আদালতে (ভিডিও)
গত ২৬ মে হাইকোর্ট মসজিদের পাশে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে বেধরক পিটুনির শিকার হন ছাত্রদল নেতা ইজাবুল মল্লিক। অবস্থা খারাপ দেখে ছাত্রলীগেরই সহ সভাপতি রাকিব হোসেন তার নেতাকর্মীদের পেটানো থেকে নিবৃত করেন। গুরুতর অবস্থায় টানতে টানতে রিক্সায় তুলে হাসপাতালে পাঠায় ইজাবুলকে। রাকিব বলেন, আমরা দেখেছি কাউকে মারা হচ্ছে। যেই হোক আমরা আক্রান্ত ব্যাক্তিকে উদ্ধার করা আমাদের দায়িত্ব। সেজন্য আমরা তাকে উদ্ধার করেছি।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলের একটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ৬ দিন পরেও বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ইজাবুল। বলেন, বুকের ব্যাথায় শ্বাস নিতে পারছেন না। হাটুর নিচের কোপ হাড় পর্যন্ত পৌঁছেছে। আঘাতে কালো হয়ে গেছে বাহু এবং পিঠ। ঘটনার বিবরণ দিয়ে আহত ছাত্রদল নেতা বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের উপরে অস্ত্র নিয়ে যখন ঝাপিয়ে পড়ে তখন নিরাপত্তার জন্য হাইকোর্টে প্রবেশ করি। একটি রুমে ভেতরে যাই, সেখানে চারজন লোক আমাকে মারধর করেছে। একটি মেয়ে (ছাত্রলীগের সহসভাপতি তিলোত্তমা শিকদার) গালাগালি এবং মারধর করে। টেনে বাহিরে বের করলো। এরপর আমার আর হুঁশ ছিলো না।
শরীরের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইজাবুল মল্লিক বলেন, শরীরের প্রত্যেকটা জায়গা ব্যাথা করে। জয়েন্টে জয়েন্টে প্রচন্ড ব্যাথা। কথা বলতে পানি না। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে বলেছেন- সুস্থ হতে সময় লাগবে।
মহাখালীর আরেকটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মাথার গুরুতর ইনজুরি নিয়ে ছয়দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি শাহীন। কয়েকঘন্টার ছাড়পত্র নিয়ে মামলার হাজিরা দিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে মাত্র হাসপাতালে ফিরেছেন তিনি। তাঁর শরীরেও রয়েছে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। শাহীনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধারাও পাশে থেকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন। একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরো একজন ছাত্রদল নেতা।
আহত ছাত্রদল নেতা ঢাকা কলেজ শাখা সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহীন বলেন, আমাকে আহত করেছেন ছাত্রলীগ, আবার তারাই মামলা করেছে। জামিন নিতে অ্যাম্বুলেন্সে করে কোর্টে যেতে হয়েছে। কোর্টে যেতেও বাধা, আমাকে পালানোর মতো করে কোর্টে ঢুকেতে হয়েছে।
আহত আরেক নেতা সৈয়দ নাজমুল ইসলাম বাহার বলেন, মাথার উপরে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। মাথায় এমআরআই এবং হাতে এক্সরে করা হয়েছে।
আহত নেতাদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যায়ভার দল থেকে বহন করছে এমনটা জানান আহত নেতারা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আহতদের ফোন করেও খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলেও জানান তারা।
পদ্মাসেতুর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে সরকারপ্রধানের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল। তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে দাবি করে ক্ষুব্ধ হয় ছাত্রলীগ। এরপরই ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গত ২৪ মে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে ছাত্রদল। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া এবং সংঘর্ষ হয়। এদিন ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদলের বহু নেতা হতাহত হন। একদিন গ্যাপ দিয়ে ২৬ মে আবারো উভয় পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ছাত্রলীগ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের সংগঠনের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। এরমধ্যে ধানমন্ডির একটি হাসপতালে চিকিৎসা নিয়েছেন সংগঠনের সহ সভাপতি তিলোত্তমা শিকদার। অন্যদিকে ছাত্রদল নেতা ডা. রাকিব জানিয়েছেন, দুই দিনে ১১৮ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে ৩০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
বিভি/এনএম
মন্তব্য করুন: