• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

প্রাণের বইমেলা নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা

মনির হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫

ফন্ট সাইজ
প্রাণের বইমেলা নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা

প্রাণের বইমেলা নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা

আর কদিন পরেই শুরু হবে প্রাণের মেলা বইমেলা। ফেব্রুয়ারির এক তারিখ থেকেই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে এই মেলার। বাঙালির প্রাণের এই উৎসব ঘিরে কী ভাবছেন তরুণরা? বইমেলার আবেদন নিয়ে তাদের মনের আঙিনায় কী চলছে? তাই তুলে ধরবো আজ...

‘বইয়ের মেলায় বাঙালির মিলন’

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বইমেলা। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বইমেলা, একুশে বইমেলা। ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই বাঙালির নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে ধ্বনিত হয় এই বইমেলা। বইপ্রেমী মানুষের প্রানে দোলা দেয়, সবাই একত্রিত হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এবং বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতি বছর পালিত হয় অমর একুশে বইমেলা। একুশে বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মেলা। 

১৯৭২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনে বটতলায় এক টুকরো চটের উপর ৩২ টি বই সাজিয়ে এই মেলার সূচনা করেন। এবারও পুরো মাসব্যাপী এই মেলায় থাকছে ছোট থেকে বড় প্রায় ৬০০-৭০০ প্রকাশনী সংস্থার অংশগ্রহণ। 

মানুষের চিন্তার ধরন, বিষয় বিচিত্র সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা মেলে বইমেলায়। বিকাশ ঘটে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার। একুশে বইমেলা, বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালির গর্বের বিষয়। শুধু বই কেনাবেচা নয়, এই মেলায় শিক্ষা ও বিনোদনের মিষ্টি মিলবন্ধন ঘটে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু বইপ্রেমীদের জন্য মেলা নয়, পুরো জাতির জন্য  ভাষা প্রেমের একটি উৎসব। 

নুসরাত জাহান অর্পিতা 
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

‘ব‍ইমেলা: প্রাণের মেলা’

বইমেলা হলো সকল বইপ্রেমীদের মিলন মেলা, যেটি বাঙ্গালিদের সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে বহু বছর ধরে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা উদযাপন করা হতো। তবে ২০২৫ সালে পুনরায় বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। বইমেলায় প্রতিবছর যেমন নতুন নতুন লেখকদের আগমন হয় ঠিক তেমনি পাঠকদেরও বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। এখানে বিদেশি দর্শনার্থীদের‍ও ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ছোটদের গল্পের বই,সায়েন্স ফিকশন, কৌতুক, ভৌতিক, ধর্ম সংক্রান্ত সব ধরনের বই এখানে পাওয়া যায়। বইমেলাতে কেবল বই বেচাকেনা হয় না বরং বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সেমিনারের‌ও আয়োজন করা হয়; যা বইমেলাকে একটি প্রাণবন্ত ও আনন্দময় উৎসবে পরিণত করে। একুশে বইমেলা আমাদের ইতিহাস,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষায় বিরাট ভূমিকা পালন করে। বইমেলা একজন পাঠকের কাছে একটি আবেগের বিষয়। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিকে দৃষ্টি রেখে আমাদের বইমেলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হবে।

ফাইজা আহমেদ নাফসি 
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

‘বই মেলা দেশ ও জাতীর অগ্রগতির হাতিয়ার’

বাংলাদেশে বইমেলা বলতে মূলত বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলাকেই বোঝায়। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে।  এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাস্ট্রভাষা বাংলা চাই এ স্লোগানে বাংলাদেশ কম্পিত হয় তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ছাত্রদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় এবং পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রফিক, জব্বার, বরকত, সালামসহ আরও অনেক তরুণ। সেই শহীদদের সৃতি হয়ে আছে একুশে বই মেলায়। একুশে বই মেলা বাংলাদেশের অন্যতম একটি সাংস্কৃতিক চর্চা। বর্তমানে  প্রতি বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং বাংলা একাডেমির পাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় একুশে বই মেলা । সারা দেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পাঠক আসে একুশে বই মেলায় এবং তাদের পছন্দের লেখকের বই সংগ্রহ করে। এই মাসের উপলক্ষে লেখকরা প্রমাণ করে তাদের সুপ্ত প্রতিভা। বই পড়ার মাধম্যে পাঠকের জ্ঞানের বিকাশ ঘটে। বই মেলায় পাঠকদের বই পড়তে আগ্রহ বাড়ায়। মৌমাছি যেমন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে যায় ঠিক তেমনি পাঠকরা বই মেলায় যায় জ্ঞান সংগ্রহ করতে বই মানুষের মুক্তভাবে চিন্তা করতে শিখায়। শিখায় স্বাধীনভাবে বাঁচতে। শিখায় অন্ধকার থেকে আলোতে বাঁচতে। বই মেলা দেশ ও জাতীর অগ্রগতির হাতিয়ার। বই মানুষকে সঠিক ভাবে বাচতে শেখায়। বই মেলায় শুধু কেনার আগ্রহই নয়, আছে এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ। যখনই পাঠকরা শুনে বই মেলা শুরু হতে চলেছে তখন আর পাঠকদের আবেগ ধরে রাখা যায় না তারা মৌমাছির মতো ছুটে চলে আসে বই মেলায়। অনেক বই আছে যেগুলো সাধারন পাঠকদের নাগালের বাইরে থাকে একুশে বই মেলার ফলে যেকোনো পাঠক যেকোনো বই সংগ্রহ করতে পারে। একমাত্র বই মেলাই পারে পাঠক ও লেখকের মিলন ঘটাতে যার ফলে লেখকরা সরাসরি পাঠকদের কাছে বই বিক্রি করতে পারেন এবং ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে । 

আল আমিন
মার্কেটিং বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

‘বই হলো যোগাযোগের মাধ্যম’

১৯৭২ সালে ভাষার মাসে বাংলা একাডেমির চত্বরে চাটাই বিছিয়ে বই বিক্রি শুরু করেছিলেন মুক্তধারা প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা নাম দিয়ে ধারাবাহিকভাবে মেলা পরিচালনা করছে। ২০২১ সাল থেকে মেলার প্রাতিষ্ঠানিক নামকরণ করা হয় অমর একুশে বইমেলা। বইমেলা আমাদের দেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক আয়োজন। প্রতিবছর হাজারো পাঠক, লেখক, প্রকাশক, ও সাহিত্যপ্রেমীরা একত্রিত হন এই মেলাকে কেন্দ্র করে। এটি শুধু বই কেনাবেচার মেলা নয়, বরং জ্ঞান, সংস্কৃতি, এবং সৃজনশীলতার উৎসব।

আমাদের পূর্বপুরুষদের সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম বই। বইয়ের মাধ্যমে শুধু জ্ঞান আহরণ নয় বই আমাদের সততা, সত্যবাদিতা, সময়নিষ্ঠা, শিষ্টাচার, শালীনতা এবং আদর্শ চরিত্র গঠনে সহায়তা করে। একটি ভালো বই হাজারো খারাপ বন্ধুর চেয়ে উত্তম।বই শুধু অনর্গল পড়া নয় নিজের মধ্যে আত্মস্থ করা এবং বাহিরে তা প্রকাশ করার মাধ্যমে রয়েছে সার্থকতা।

বইমেলা কেবলমাত্র একটি মেলা নয়, এটি আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি পাঠাভ্যাসকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি আমাদের মনের জানালা খুলে দেয়। এ মেলা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে বই মানুষের মনের মুক্তি এনে দেয় এবং একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে ভূমিকা রাখে।

তানভির আহমেদ
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: