• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

স্বপ্নে নিজের বিয়ে দেখলে কী হয়, যা আছে হাদিসে

প্রকাশিত: ১৯:১১, ২৭ অক্টোবর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
স্বপ্নে নিজের বিয়ে দেখলে কী হয়, যা আছে হাদিসে

প্রতীকী ছবি

বিয়ে এক সামাজিক বন্ধন। এটি জীবনের অনুষঙ্গ। পরিবার গঠনের প্রথম ধাপ। নারী-পুরুষের সামাজিক ও পারিবারিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত ধর্মীয়ভাবে বৈধ সম্পর্ক। জীবনে মানুষ অনেক কিছু নিয়েই স্বপ্ন দেখে। আজ কথা বলব স্বপ্ন দেখা নিয়ে। স্বপ্নে নিজের বিয়ে দেখলে কী হয়

স্বপ্ন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে
বিখ্যাত হাদিস বিশারদ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন, ‘মানুষ যত স্বপ্ন দেখে তা মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। সত্য স্বপ্ন। অসত্য স্বপ্ন। সত্য স্বপ্ন নবীদের ও তাদের অনুসারী নেককার লোকদের স্বপ্ন। দ্বিতীয় প্রকার হলো মিশ্র ধরনের মিথ্যা স্বপ্ন, যা কোনো ব্যাপারে সতর্ক করে। যেমন, শয়তানের খেলা যা দিয়ে কাউকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। ফলে সে দেখে যে তার মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। সে সেই কাটা মাথার অনুসরণ করছে; অথবা সে এমন কোনো সংকটে পড়েছে যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য কোনো সাহায্যকারী পাচ্ছে না। কিংবা সে দেখল যে, ফেরেশতারা তাকে কোনো হারাম কাজ করতে বলছে; অথবা এমনসব বিষয় যা সাধারণত অর্থহীন। এসব অর্থহীন স্বপ্ন। (ফাতহুল বারি ১২/৩৫২)

ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে
সত্য ও ভালো স্বপ্ন দেখলে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনে করা ও আল্লাহর শুকরিয়া করা। আর মন্দ স্বপ্ন দেখলে শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা. বলেন, নবী করিম সা. বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি এমন কোনো স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে, তাহলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিত আল্লাহর প্রশংসা আদায় করা ও অন্যদের স্বপ্ন সম্পর্কে বলা। কিন্তু সে যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে অপছন্দ করে তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিত এর ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া। কাউকে এ স্বপ্ন সম্পর্কে না বলা। এমন করলে তার কোনো ক্ষতি হবে না।’ (বুখারি ৬৫৮৪; মুসলিম ৫৮৬২)

স্বপ্নের বিষয় কি বাস্তব হয়
ঘুমের মধ্যে যা কিছুই মানুষ দেখে এর মাধ্যমে দুনিয়া আখেরাতের কোনো কিছুই প্রমাণিত হয় না। ঘুমের মাঝে মানুষ কত কিছুই করে। এর মাধ্যমে যেমন দুনিয়ার কোনো কিছু অর্জিত হয় না। তেমনি শরিয়া কোনো বিধানও আরোপিত হয় না। সেই হিসেবে ঘুমের মাঝে আপনি যত ইচ্ছে খাবার খান, এতে যেমন আপনার পেট ভরে না, তেমনি রোজাও ভাঙবে না।

স্বপ্নের বিষয়ে কোরআনের আয়াত
আল্লাহর নবী হজরত ইউসুফ আ.-কে আল্লাহ তাআলা স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, ইউসুফ তার পিতাকে বলেছিল, হে আমার পিতা, আমি তো দেখেছি ১১টি নক্ষত্র, সূর্য ও চন্দ্র। আমি দেখলাম তারা আমাকে সিজদা করছে। তিনি বলেন, হে আমার বৎস, তোমার স্বপ্নবৃত্তান্ত তোমার ভাইদের কাছে প্রকাশ করো না।’ (সুরা: ইউসুফ, আয়াত ৪-৫)

পবিত্র কোরআনে মিশরের অধিপতির স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যাকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(মিশরের) অধিপতি বলেছিল, আমি দেখেছি সাতটি মোটা গাভি, যাদের সাতটি শীর্ণকায় গাভি খেয়ে ফেলল এবং সাতটি সবুজ শস্যের শীষ ও সাতটি শুষ্ক। হে প্রধানরা, যদি তোমরা আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পার তবে স্বপ্নের তাৎপর্য বলো।’ (সুরা: ইউসুফ, আয়াত ৪৩)

রাসুল সা.-কে আল্লাহ তাআলা বদরের যুদ্ধের আগে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করুন, তোমার স্বপ্নে আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছিলেন যে তারা সংখ্যায় স্বল্পসংখ্যক। যদি তিনি তোমাকে দেখাতেন যে তারা সংখ্যায় অধিক, তবে তোমরা নিশ্চয়ই সাহস হারাতে। অবশ্যই তোমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিতর্কে লিপ্ত হতে। কিন্তু আল্লাহ (তোমাদের) রক্ষা করেছিলেন, যেহেতু তিনি সবার হৃদয়ের কথা বিশেষভাবে অবহিত।’ (সুরা: আনফাল, আয়াত ৪৩)

স্বপ্নের বিষয়ে হাদিস
হজরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল সা. বলেন, ‘তিন ব্যক্তি থেকে (হিসাব-নিকাশের) কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে, ১. ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ-না সে জাগ্রত হয়। ২. নাবালেগ, যতক্ষণ-না সে বালেগ হয়। ৩. পাগল ব্যক্তি, যতক্ষণ-না সে সুস্থ হয়। (তাহাবি, হাদিস ৩০২৮, আবু দাউদ, হাদিস ৪৪০৫, তিরমিজি, হাদিস ১৪২৩, সুনানে দারা কুতনি, হাদিস ১৭৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৯৪০)

হজরত কাতাদা রা. বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, ‘ঘুমন্ত অবস্থার কোনো ভুল হলে এতে কোনো গুনাহ নেই, তবে সজাগ অবস্থায় হলে গুনাহ হবে। (মুসলিম, হাদিস ১৫৯৪, ইবনে খুজাইমা ৯৮৯, ইবনে হিব্বান, হাদিস ১৪৬০, তাহাবি, হাদিস ৯০২, আবু দাউদ, হাদিস ৪৪১)
 
স্বপ্নে নিজের বিয়ে দেখলে কী হয়
কেউ কেউ বলেন, স্বপ্নে নিজের বিয়ে দেখলে তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। অতি দ্রুত সম্পদশালী হয়ে উঠতে পারেন। কোনো কোনো সময় অবিবাহিত লোক যে বিয়ে করার চিন্তা করে বিয়ে করার আকাঙ্ক্ষা করে, তাহলে হতে পারে এটা তার চিন্তাভাবনারই রিফ্লেকশেন। কেননা যা চিন্তা করা হয় কখনও কখনও তা স্বপ্নেও চলে আসে।

এর আরেকটি তাবির হলো আল্লাহর হকুমে সে অতি শিগগির বিয়ে করবে। এটা তো হলো যে অবিবাহিত তার স্বপ্নের ব্যাখ্যা। আর যে ব্যক্তি আগেই বিয়ে করেছে, সে যদি বিয়ে স্বপ্নে দেখে সে ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার স্বপ্নের মধ্যে পার্থক্য আছে।

যদি কোনো বিবাহিত পুরুষ স্বপ্ন দেখে যে তার বিয়ে হচ্ছে তাহলে এর ব্যাখ্যা হলো তার সার্বিক অবস্থা উন্নত হবে, তার ব্যবসা, চাকরি, কাজ কারবারে উন্নতি হবে, বিশেষ করে তার খান্দান থেকে সে কল্যাণ লাভ করবে।

যদি কোনো বিবাহিত মহিলা স্বপ্ন দেখে যে তার বিয়ে হচ্ছে, তাহলে এর ব্যাখ্যা হলো কারো পক্ষ থেকে সে মহিলা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। সে জন্য কিছু সদকা করে দেয়া উত্তম। কেননা সদকায় মানুষের বিপদ-আপদ কাটে।

বিয়ে হওয়ার লক্ষণ
স্বপ্ন তিন প্রকার। ভালো স্বপ্ন আল্লাহর কাছ থেকে সুসংবাদ। আরেক ধরনের স্বপ্ন আসে শয়তানের পক্ষ থেকে, তা দুর্ভাবনা তৈরি করে। মানুষ তার মনের সঙ্গে যে কথা বলে এবং সে যা চিন্তাভাবনা করে তা থেকে অন্য আরেক ধরনের স্বপ্ন উদ্ভূত। কেউ যদি বিয়ে নিয়ে ভাবেন, তখন তার বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখা স্বাভাবিক। মন থেকে কেউ যদি বিয়ের জন্য চেষ্টা করে আল্লাহ পাক তাকে সাহায্য করেন।

স্বপ্ন বলার উত্তম সময়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পরপর সাহাবায়ে কেরাম থেকে স্বপ্ন শুনতেন। তার তাবির বা ব্যাখ্যা বর্ণনা করতেন। কেউ স্বপ্নের ব্যাখ্যা বা তাবির জানতে চাইলে তার জন্য স্বপ্ন বলার উত্তম সময় এটিই। কেননা, এতে স্বপ্ন দেখা ও বলার মাঝে সময়ের ব্যবধান কম থাকে। ফলে ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। (উমদাতুল কারি ২৪/১৭১; ইরশাদুস সারি ১৪/৪৯০; ফাতহুল বারি ১২/৪৫৮)

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন: