স্বামী-স্ত্রীর প্রথম সাক্ষাতের পর যে আমলগুলো সুন্নত

বিয়ে হলো নারী-পুরুষের অন্যতম বৈধ সামাজিক বন্ধনের একটি রীতি। আর মুসলিমদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ হলো হজরত মুহাম্মদ (স.) এ আদর্শ। যে আদর্শকে সুন্নত বা সুন্নাহ বলা হয়। জীবনের অন্যান্য কাজের মতো বিয়ের সময়েও কিছু সুন্নত রয়েছে।
মহানবী (স.) তার উম্মতদের জন্য সর্বশেষ নসিহতে বলেছিলেন- ‘আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ তোমরা এই দুটিকে আঁকড়ে ধরে রাখবে ততক্ষণ তোমরা কেউ পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ।’ তাই সুন্নাত মেনে চলা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে আল্লাহ তাআলা প্রাপ্ত বয়স্ক সক্ষম ব্যক্তিদের ওপর বিয়েকে ফরজ করেছেন। এক্ষেত্রে বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর প্রথম সাক্ষাতেও রয়েছে বেশ কিছু সুন্নত ও আমল। শুরুতে স্বামী তার স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে দোয়া করবে। এক্ষেত্রে মুসতাহাব হলো- স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একসঙ্গে দু’রাকাআত নামাজ আদায় করবে। এটা সলফে সালেহীনদের থেকে বর্ণিত রয়েছে। নামাজের পর নব দম্পতি পরস্পরের জন্য দোয়া করবে।
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর প্রথম সাক্ষাতে সুন্নতগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো-
হজরত আসমা বিনতে উমাইস (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- আমি ছিলাম আয়েশা (রা.) এর বান্ধবী। আমি আরো কিছু নারীকে সঙ্গে নিয়ে তাকে রাসূল (সা) এর জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছি ও তার ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছি। আমরা মহানবী (সা.) এর ঘরে মেহমানদারি হিসেবে এক পেয়ালা দুধ ছাড়া আর কিছু পাইনি। তিনি সে পেয়ালা থেকে কিছুটা পান করলেন, এরপর আয়েশা (রা)কে দিলেন। আয়েশা (রা) লজ্জাবোধ করলে আমরা বললাম, এটা ফিরিয়ে দিও না; গ্রহণ কর। তখন সে ইতস্তত করে সেটা থেকে পান করল। অতঃপর রাসূল (সা.) বলেন, তোমার বান্ধবীদের দাও। আমরা বললাম, আমাদের চাহিদা নেই। তিনি বললেন, তোমরা ক্ষুধা ও মিথ্যা দুটো একত্র করো না। (মুসনাদে আহমাদ ২৬৯২৫)
স্ত্রীর মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করা:
এছাড়া হযরত আমর বিন শুয়াইব (রা) থেকে বর্ণিত- তিনি তার পিতা থেকে তিনি তার দাদা থেকে তিনি নবী করিম (সা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তোমাদের কেউ যখন কোন নারীকে বিয়ে করে তখন সে যেন স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগ ধরে বলে–
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রামা জাবালতাহা আলাইহি, ওয়াআউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া মিন শাররিমা জাবালতাহা আলাইহি।
(অর্থ- হে আল্লাহ! আমি তাঁর কল্যাণটুকু এবং যে কল্যাণের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, অভ্যস্ত করেছেন সেটা প্রার্থনা করি। আর তার অনিষ্ট থেকে ও যে অনিষ্টের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, অভ্যস্ত করেছেন তা থেকে আশ্রয় চাই)। (সুনানে আবু দাউদ ২১৬০)
একসঙ্গে দুই রাকাত নামাজ পড়া:
কোন কোন সলফে সালেহীন স্বামী-স্ত্রী একত্রে দুই রাকাত নামায আদায় করাকে মুস্তাহাব গণ্য করেছেন: ইবনে আবি শাইবা শাকীক থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি.-এর কাছে এক লোক এসে বলল, আমি এক যুবতী মেয়েকে বিয়ে করেছি। আমি আশংকা করছি- সে আমাকে অপছন্দ করবে।
বর্ণনাকারী বলেন, আব্দুল্লাহ বললেন- মিল-মহব্বত আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। দূরত্ব ও ঘৃণা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আল্লাহ যা হালাল করেছেন শয়তান সেটাকে তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় করে তুলতে চায়। যখন সে তোমার কাছে আসবে তখন তাকে তোমার পিছনে দুই রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিবে। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা ১৭১৫৬)
সৎভাবে সংসার করার নিয়ত করা:
স্ত্রীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা এবং স্ত্রীও স্বামীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا
আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে। তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ্ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ। (সূরা নিসা ১৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, রমযান মাসে রোযা রাখে, নিজের যৌনাঙ্গ হেফাযতে রাখে, স্বামীর আনুগত্য করে; তাকে বলা হবে: তুমি জান্নাতের যে দরজা ইচ্ছা হয় সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (মুসনাদে আহমাদ ১১৬১)
সহবাসের দোয়া পাঠ:
স্বামী যখন স্ত্রী-সহবাস করতে চাইবে তখন বলবে— بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখো এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখো।’ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, এরপরে যদি তাদের দুজনকে ফল দেওয়া হয় অথবা তাদের বাচ্চা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি: ৪৭৮৭)
দাম্পত্য জীবনে একে অন্যের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করার নিয়ত করা
সৎভাবে সংসার করার নিয়ত করা, স্ত্রীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা এবং স্ত্রীও স্বামীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবন যাপন করবে। তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ করো তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ। (সুরা নিসা: ১৯)
এভাবেই শরীয়ত সম্মতভাবে দাম্পত্য জীবনে আসে শান্তি ও বরকত। আল্লাহ আমাদের জীবনকে শরীয়ত মোতাবেক পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আ....মি....ন....
আরও পড়ুন:
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: