হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ ওস্তাদ ‘বাবা হুজুর’ ইন্তেকাল করেছেন

মাওলানা মুমতাজুল করিম
দেশের অন্যতম বৃহৎ কওমি মাদরাসা চট্টগ্রামের আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর (হাটহাজারী মাদরাসা) প্রবীণ ওস্তাদ মাওলানা মুমতাজুল করিম (বাবা হুজুর) ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাত ১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর সায়েদাবাদস্থ আল কারিম হাসপাতালে চিকিৎধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
হাটহাজারী মাদরাসার মুখপত্র মাসিক মুঈনুল ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা মুনির আহমাদ নয়া দিগন্তকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, বুধবার বাদ আসর হাটহাজারী মাদরাসায় তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানাজা শেষে মাদরাসার কবরস্থানেই তাকে দাফন করা হবে।
মাওলানা মুমতাজুল কারিম একজন লেখক ও গবেষক হিসেবে কওমি অঙ্গনে বেশ পরিচিত ছিলেন। তার জন্ম ১৯৪২ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার সদর থানার ডুলিপাড়া গ্রামে। তিনি ২ ছেলে ও ২ মেয়ের বাবা।
তার প্রাথমিক পড়াশোনা কুমিল্লার বটগ্রাম হামিদিয়া মাদরাসায়। পরে হাটহাজারী থেকে মাধ্যমিক ও জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া মাদরাসা দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষা অর্জন গ্রহণ করেন পাকিস্তানের বিখ্যাত মাদরাসা জামিয়া আশরাফিয়া লাহোর থেকে। এখানে তিনি তাফসির ও আদব (আরবি সাহিত্য) বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন।
দেশে ফিরে তার কর্মজীবনের শুরু ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদরাসায়। ১৯৬৫ সালে তিনি এখানে মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরে একই বছরে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী চরমোনাই মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি মুসলিম শরিফ পড়াতেন।
পরবর্তীকালে ‘বাবা হুজুর’ রাজধানীর আশরাফুল উলুম বড়কাটারা মাদরাসায় ৭ বছর মুহাদ্দিস হিসেবে খেদমত করে চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগ পান। পটিয়া মাদরাসায় তিনি টানা ৭ বছর সুনামের সাথে হাদিসের দরস দেন। এ সময় পটিয়া থেকে প্রকাশিত ‘মাসিক আত তাওহীদ’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জামিয়া হোসাইনিয়ার প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।
হাটহাজারীতে আসেন ১৯৮৪ সালে। এবং ৩৫ বছর এখানে সুনাম-সুখ্যাতির সাথে হাদিসের দরস দেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে ঢাকায় তার ছেলে মাওলানা মাহমুদুল হাসান মোমতাজীর তত্ত্বাবধানে থাকতেন।
ইসলামের প্রচার-প্রসার, কোরআনের তাফসির, ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদসহ নানা দ্বীনি কাজে তিনি দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়িয়েছেন। অংশ নিয়েছেন সভা-সমিতি, ওয়াজ মাহফিল, জনসভা ও ইসলামী সম্মেলনে। একাধিক দেশও ভ্রমণ করেছেন। তন্মধ্যে তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, আমেরিকা, চীন, হংকং, কুয়েত, কাতার, বাহারাইন, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ভারত অন্যতম।
শুধু হাদিসের খেদমত ও ওয়াজ মাহফিল নয় লেখালেখিতেও মাওলানা মুমতাজুল কারিমের অবদান রয়েছে। তার রচিত গ্রন্থাবলীর অন্যতম হলো- আরবি বোখারি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ বাদয়ুল কারি ইলা দিরাসাতিল বোখারি, বোখারি শরিফের উর্দু ব্যাখ্যাগ্রন্থ হাবিবুল বারী শরহিল বোখারি, আরবি কাওয়ায়েদে ফিকহিল হানাফি, তারিখুত তাফসির, কোরআন-হাদিসের অমূল্য রত্ন, পরকালে মুক্তি কিসে (অনুবাদ), উলুমুল কুরআন, এসো কুরআনের অর্থ শিখি, আকিদায়ে খতমে নবুওয়ত, রায়বেন্ডের ১০ দিন (অনুবাদ) ও আল্লাহকে পাওয়ার রাস্তা। এছাড়া বিভিন্ন মাসিক পত্রিকা, স্মরণিকা ও স্মারকগ্রন্থে তার অনেক লেখা প্রকাশ পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, তার বড় ছেলে মাওলানা মাহমুদুল হাসান মোমতাজী রাজধানীর তেজগাঁওয়ের রহিম মেটাল জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: