ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ পরিবারে হস্তান্তর, ক্ষতিপূরণ ঘোষণা

সোমবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে রেলওয়ে স্টেশনের আউটার সিঙ্গাল এলাকায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও প্রায় শতাধিক আহত হয়। সোমবার রাতেই নিহত ১৫ জনের লাশ সনাক্তের পর প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাদের স্বজনদের নিকট রাতেই হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া এক জনের পরিচয় না পাওয়ায় অজ্ঞাত লাশ হিসেবে কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছিল।
পরবতীর্তে আজ মঙ্গলবার তার পরিচয় পাওয়া যায়। তার নাম শাহালম। বাড়ী বজিতপুরের সরাচরে। তাকে আজ মঙ্গলবার সকালে কিশোরগঞ্জ থেকে তার স্বজনদের হাতে লাশ হস্তান্ত করা হয়। তাছাড়া ট্রেন দূর্ঘটনার পর পর একজনের লাশ তাদের সাথে থাকা স্বজনরা নিজ উদ্যেগে প্রশাসনকে না জানিয়ে নিয়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
যেসব লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলো ময়মনসিংহের নান্দালের জুনায়েতের স্ত্রী হোসনা বেগম (২৭), কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর এলাকার জিল্লুর রহমানের ছেলে হুমায়ূন কবির (৩৫), একই জেলার বাজিতপুর এলাকার আবদুল হাইয়ের ছেলে আদিব উদ্দিন (৩০), ভৈরবের রাধানগর গ্রামের মন্নাফ মিয়ার ছেলে আফজাল হোসেন (২৪), ভৈরব বাজারের সুজন শীল (২৩), একই এলাকার রাব্বি (২৫), কিশোরগঞ্জের মিটামইন উপজেলার সাইমন মিয়া (২৩), ময়মনসিংহের নান্দাইলের সাইজ উদ্দিনের ছেলে সুজন মিয়া (৩১), একই এলাকার সজীব (১১), নান্দাইলের ফাতেমা বেগম (৩৫), একই এলাকার ইসমাইল (৭), এ কে এম জামাল উদ্দিন (১৮), ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার সরাইলের নিজাম উদ্দিন (৬৫), কিশোরগঞ্জের মিটামইনের রাসেল (২৩) ও নান্দালের জোসনা বেগম (২৫)। তাদেরকে তাদের স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
গতকাল বিকেলে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহা- পরিচালক মোঃ কামরুল হাসান, রেলওয়ে ডিভিশন ম্যানেজার ( ডিআরএম) মোঃ শফিকুল ইসলাম ও রেলওয়ে ( পূর্ব) জেনারেল ম্যানেজার ( জিএম) মোঃ নাজমুল হাসান ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে তারা ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে লাশের খোঁজ খবর নেন এবং স্বচক্ষে দেখেন।
এসময় তাদের সাথে কিশোরগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিকুর রহমান সবুজ উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে ১৫টি লাশ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয় রাতে। এসময় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিহতদের লাশ দাফনের জন্য প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
এ দিকে ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনার পর আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। সকাল থেকে আপ ও ডাউন লাইনে রেলপথের সকল রোডের ট্রেনগুলি ভৈরব দিয়ে চলাচল করছে।
এ দুর্ঘটনা কারণ অনুসন্ধানে ৪টি তদন্ত কমিটি করা হয়। রেল মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম- সচিব হাসান মাহমুদকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত টিম, বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা ও চট্রগাম বিভাগের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে লেঃ কর্নেল তাজুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তাছাড়া ও কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।
এবিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল হাসান দুর্ঘটনারস্থল পরিদশর্ন করে মিডিয়াকর্মীদের জানান, প্রাথামিকভাবে ঘটনাটি কন্টেনার ট্রেনের চালকের অসাবধানতার কারনে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে মনে হয়েছে। ঘটনার সময় সিগনালের কোন ক্রটি ছিলনা। তিনি বলেন আমরা কন্টেনার ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) আলমগীরসহ চালক ও সহকারী চালককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছি। দুর্ঘটনার পুরা বিষয়টি তদন্ত করার পর রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব বলে তিনি জানান।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: