• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

বেইলি রোডের আগুনে প্রাণ গেল অতিরিক্ত ডিআইজির মেয়ের 

প্রকাশিত: ১৫:২২, ১ মার্চ ২০২৪

ফন্ট সাইজ
বেইলি রোডের আগুনে প্রাণ গেল অতিরিক্ত ডিআইজির মেয়ের 

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। সেসময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের একজন সহকর্মীর মেয়ে মারা গেছেন।’ পরে জানা গেল, সেই মেয়েটিই নিহত লামিশা ইসলাম। লামিশা অতিরিক্ত ডিআইজি নাসিরুল ইসলামের মেয়ে।

অসুস্থতাজনিত কারণে  ২০১৮ সালে মারা গেছেন লামিশার মা। এরপর ছোট বোন আর বাবাকে আগলে রাখতেন লামিশা। দুই কন্যা সন্তানের কথা চিন্তা করে পুলিশ কর্মকর্তা বাবা ডিআইজি মো. নাসিরুল ইসলাম আর বিয়ে করেননি। স্কুল-কলেজ পেরিয়ে লামিশা ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। কিন্তু মেধাবী এই শিক্ষার্থীর জীবন থেমে গেলো রাজধানীর বেইলি রোডের আগুনে।

এ নিয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ছোট বেলায় মা হারা পরিবারে লামিশারা ছিল দুই বোন। হঠাৎ আগুনে আবারও বিধ্বস্ত হলো এ পরিবারটি।

বুয়েট শিক্ষার্থী লামিশা ইসলামকে নিয়ে সুদীপ কুমার চক্রবর্তীর ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

জনাব মো. নাসিরুল ইসলাম বিপিএম স্যার অতি. ডিআইজি (রিক্রুটমেন্ট এন্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং-১) হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত। পুলিশ সার্ভিসে যোগদানের পর হতেই নাসির স্যারকে একজন পেশাদার, নিবেদিত, দক্ষ, চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে দেখে এসেছি। বাংলাদেশ পুলিশে পরিবর্তিত পদ্ধতিতে শতভাগ স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা, সততা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত পূর্বক ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পদ্ধতির অন্যতম রূপকার তিনি।

২০১৮ সালে হঠাৎ স্যারের সহধর্মিণী শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে বিএসএমএমইউ-তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। স্যারের দুজন কন্যা। তারা তখন বয়সে অনেক ছোট ছিলো। আত্মজাদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে স্যার পুনর্বার দ্বার পরিগ্রহ করেননি। স্যারের কন্যাদ্বয় ক্রমান্বয়ে স্বাবলম্বী, আত্মপ্রত্যয়ী, মেধাবী সন্তান হিসেবে স্যারের স্নেহমমতায় বড় হয়ে উঠে।

রমনা পুলিশ কমপ্লেক্সের শিমুল ভবনের চারতলায় আমাদের বাসা ছিলো আর তিনতলায় স্যারের বাসা। মাঝেমধ্যে লিফটে স্যার এবং স্যারের কন্যাদ্বয়ের সাথে দেখা হতো। একদিন হঠাৎ জানতে পারি স্যারের বড়ো আত্মজা লামিশা ইসলাম বুয়েটে ভর্তি হয়েছে। শুনে যারপরনাই আনন্দিত হই। মাতৃহীন সন্তানেরা পিতার স্নেহে গর্বিত সন্তান হিসেবে সাফল্যের মুকুট ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

২৭ ফেব্রুয়ারি হতে বার্ষিক পুলিশ সপ্তাহ সূচনা হওয়ায় ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স-এ ব্রিফিং শেষ করে জরুরি প্রয়োজনে শিমুল ভবনে যাই। লিফট দিয়ে উঠার সময় লামিশার সাথে দেখা হয়। তার বুয়েট ভর্তি হওয়া নিয়ে গর্ব অনুভব করতে পারি। তখন ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি মৃত্যু তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

২৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সপ্তাহের অংশ হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলছিলো রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স-এ। হঠাৎ শুনতে পারি বেইলি রোডে বহুতল ভবনের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং নাসির স্যারের কন্যা আটকে পড়েছে। সম্ভবতঃ সে ছাদে আশ্রয় নিয়েছে এবং তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে শুনতে পেরে স্বস্তিবোধ করি। এরপর অনুষ্ঠান শেষে বাসায় চলে আসি।

উৎকন্ঠা থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সংবাদ দেখার এক পর্যায়ে মাননীয় আইজিপি মহোদয়ের ঘটনাস্থল হতে মিডিয়া ব্রিফিং প্রত্যক্ষ করে জানতে পারি যে, আমাদের একজন সহকর্মীর কন্যা ঐ ভবনে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুবরণ করেছেন। তখনও নিশ্চিত ছিলাম না প্রয়াতের পরিচয় নিয়ে। হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো প্রাপ্ত দু:সংবাদে চরম ব্যথিত, বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে পড়ি। নাসির স্যারের বড় আত্মজা বুয়েটের কেমিকৌশল শিক্ষার্থী লামিশা ইসলাম মর্মান্তিক অগ্নিকান্ডে মৃত্যুবরণ করেছে। তার বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি। স্যার এবং স্যারের ছোট আত্মজার প্রতি গভীর সমবেদনা।

বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) রাত পৌনে ১০টার দিকে ভবনটিতে আগুন লাগে। আগুনে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। এরপর একে একে আসতে থাকে নিহতের খবর। এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৬ জন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২২ জন। তারা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বেইলি রোডের ওই সাততলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের খাবারের দোকান রয়েছে। তৃতীয় তলায় একটি পোশাকের দোকান ছাড়া ওপরের তলাগুলোয় রয়েছে খাবারের দোকান। প্রতিদিন বিকালের পর থেকে খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় জমে। অনেকেই পরিবার নিয়ে সেখানে খেতে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনটি প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পাশাপাশি ক্রেনের সাহায্যে ভবনের সপ্তম তলা ও ছাদে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের নামিয়ে আনতে থাকেন তাঁরা। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

 

বিভি/এসএইচ/টিটি

মন্তব্য করুন: