বন্যার গানের স্কুল থাকবে, খাল ভিন্ন দিকে নিতে চান জেলা প্রশাসক

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল দখলের অভিযোগে সম্প্রতি সাদিক এগ্রোতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এ সময় সাদিক এগ্রোর সঙ্গে খালের জায়গায় থাকা বস্তির ঘরগুলোও উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু গরিব মানুষের ঘর উচ্ছেদ করলেও খালের ঠিক মধ্যভাগে থাকা রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পরিচারিত গানের স্কুল সুরের ধারার কাছে গিয়ে থেমে গেছে উচ্ছেদ অভিযান। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানান মাধ্যমে চলছে তীব্র সমালোচনা। কিন্তু জনগণ যত সমালোচনাই করুক তা আমলে না নিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসন বলছে, সুরের ধারা স্কুলটি টিকিয়ে রেখেই খালটিকে তার পাশ দিয়ে প্রবাহিত করতে চান তারা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সুরের ধারা স্কুলের নামে বেড়ীবাঁধ থেকে শুরু করে বিশাল জায়গা বাউন্ডারি করে রাখা হয়েছে। এই জমির শেষ অংশে রয়েছে সুরের ধারা নামের গানের স্কুলটির টিনসেড ঘর। ঘরটির সামনে বিভিন্ন মন্ত্রীসহ সরকারের প্রভাবশালী নেতাদের নামে সাইনবোর্ড দিয়ে গাছ লাগানো রয়েছে। যদিও স্কুলের সীমানর মাধ্যেই জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া নদীর অনেকগুলো পিলার দৃশ্যমান রয়েছে, যা প্রমাণ করছে এটি খালেরই জায়গা। তবে এই প্রতিষ্ঠানের বাউন্ডারির ভেতর জেলা প্রশাসক কোনো সাইনবোর্ড না দিলেও এই সীমানার বাইরে ঠিকই দেওয়া হয়েছে খালের সাইনবোর্ড।
স্যাটেলাইট চিত্র যাচাই করে দেখা যায়, স্কুলটির মাঠের অংশটি ছিল তিনটি খালের সংযোগস্থল। প্রথমে ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গাটির আশপাশে ভরাট করে। তারপর এই জায়গাটি ভরাট করে তৈরি হয় ট্রাক স্ট্যান্ড। তবে ২০১৮ সালের দিকে সরে যায় সেই ট্রাক স্ট্যান্ড। তার কিছুদিন পরই সেখানে উঠানো হয় টিনশেড ঘরটি।
স্থানীয়রা জানান, প্রথমে জাহাঙ্গীর কবির নানকের নামে এখানে একটি ট্রাকস্ট্যান্ড করা হয়েছিল। ট্রাকের চালকরাই ময়লা এনে ফেলে এটি ভরাট করে। তবে ২০১৮ সালের দিকে এই ট্রাক স্ট্যান্ডটি উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়। কিন্তু ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হলেও খালটি খনন করে দেওয়া হয়নি। সেই সুযোগে কিছুদিন পর এখানে ঘর তোলা শুরু করে সুরের ধারা।
আতাউর রহমান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ট্রাক স্ট্যান্ডসহ সেবারও কয়েকটা বিল্ডিং ভাঙা হয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম খালটা প্রাণ পাবে। কিন্তু কদিন পরে দেখি সুরের ধারা ঘর তুলছে। সুরের ধারা বলছে, সরকার নাকি তাদের নামে এটি বরাদ্দ দিয়েছে। তাহলে অন্যদের উচ্ছেদ করার মানে কী, বুঝলাম না।
আমেনা আক্তার বলেন, নদী ভাঙনে আমাদের বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর আমরা সাদিক এগ্রোর পেছনে টিনের ঘরে থাকতাম। ফার্ম ভাঙার সময় আমাদের ঘরবাড়িও ভেঙে দিছে। আমরা গরিব মানুষ, এখানে অল্প ভাড়ায় থাকতাম। আমাদের ঘরতো ভাঙছেই ঘরের জিনিসপত্রও নিয়ে গেছে। কিন্তু আমাদেরটা ঠিকই ভাঙতে পারছে অথচ রেজওয়ানা বন্যার ঘরটা ভাঙেনাই। এটা অন্যায় নয় কী?
এ বিষয়ে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বাংলাভিশনকে বলেন, এই খালের দখল নিয়ে আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছিলাম। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সিটি করপোরেশনের নিরবতা ছিল। যখনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা উঠলো, সেটা দেখে হঠাৎ গিয়ে তারা শুধু একটা খামার আর বস্তির ঘর ভাঙলো। অথচ খালের মাঝেই গানের স্কুল রয়ে গেলো, ইউল্যাবের দখলকৃত অংশ এবং বহুতল ভবনও রয়ে গেছে। এখন আবার দেখছি সেখানে খেলার মাঠ করার সাইনবোর্ড দিয়েছে নগর প্রশাসন। সহজেই বলা যায়, এটা দুরভিসন্ধিমূলক।
আইনিভাবে খালের জায়গা স্কুল বা মাঠের জন্য দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে, খালের জায়গা খালকে ফেরত দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
খালের জায়গায় থাকা সুরের ধারা নামের প্রতিষ্ঠানটি কেন ভাঙা হলো না জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বাংলাভিশনকে বলেন, যেহেতু একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে সেটা ভাঙাও অর্থনৈতিক ক্ষতি। আমরা চেষ্টা করছি অর্থনৈতিক ক্ষতি না করে কিভাবে খালটাকে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করা যায়। আমরা ইউল্যাবের সঙ্গে কথা বলছি। চেষ্টা করছি তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে সুরের ধারা স্কুলটির পেছন দিয়ে খনন করে খালটিকে প্রবাহিত করা যায় কিনা।
থানা নির্মাণচেষ্টা এবং ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ স্থাপনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা ভাঙলেওতো এখন দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি। আমরা এখন আর নতুন কোনো স্থাপনা উঠতে দিবো না, এটা আপনাকে কথা দিচ্ছি। আপনি শিওর থাকেন এখানে থানা বা অন্য কোনো স্থাপনা আমি অন্তত হতে দেব না।’
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: