ছদ্মবেশে রাতের আঁধারে শহর পরিদর্শন করেন ডিসি

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা
ছদ্মবেশে রাতের আঁধারে নারায়ণগঞ্জ শহর পরিদর্শন করে বিভিন্ন সমস্যা নিজ চোখে দেখলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা। এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান করে শহরকে বসবাসের উপযোগী করার পাশাপাশি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা নিয়ে নানা পরিকল্পনা রয়েছে তার। পর্যায়ক্রমে তিনি এসব পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাবেন বলে জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে গত মাসের মাঝামাঝিতে তিনি নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হোন। শহরের যানজট, হকারদের দখলে ফুটপাত, বেহাল সড়ক থেকে শুরু করে হাজারো সমস্যাসহ বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনায় শহর অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছিল। দায়িত্ব নিয়ে শুরুতেই তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে শহরের বিভিন্ন সমস্যা ও তা সমাধান করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রথমেই তিনি যানজট নিরসনে কাজ করা শুরু করেন। এরই মধ্যে শহরে অবৈধ অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। পাশাপাশি সড়কে অবৈধ পার্কিং ও হকার উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। আগামীতে ফুটপাত হকারমুক্ত করে তা পথচারীদের চলাচলের উপযোগী করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
এ ছাড়াও জেলার যেসব স্থানে উন্নয়ন কাজ আটকে রয়েছে তা দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার চাপ দিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন ধরে জমি সংক্রান্ত জটিলতা ও অবৈধ স্থাপনার জন্য আটকে থাকা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাদঁমারী থেকে চাষাঢ়া মোড়ের সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে গতি ফিরেছে। আগামী সপ্তাহে চাঁদমারী এলাকায় সরকারি জায়গায় নির্মিত মসজিদটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হবে। এরপর নারায়ণগঞ্জ রাইফেলস ক্লাবও সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হবে। সড়কটির এই অংশের কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য সব ধরনের তদারকি জেলা প্রশাসক করছেন। এর আগে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডটি ৬ লেনে উন্নীতকরণ করা হলেও চাঁদমারী থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের কাজ বাকি ছিল। এর ফলে সড়ক প্রশস্তকরণের সুফল পুরোপুরি পায়নি নগরবাসী। পাশাপাশি এই অংশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হতো।
এর আগে জেলা প্রশাসক হিসেবে নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব নিয়েই অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা রেলক্রসিংগুলো সংস্কার করার পাশাপাশি আগামী ২৬ মার্চ থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শুরুতেই এক বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে চলে যাবার আগে এমন কিছু করে যেতে চাই যে বিদায়বেলা বলতে পারি এই জেলার জন্য কিছু করে গেছি। দেশের প্রতিটি জেলাতেই কিছু সাধারণ সমস্যা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়। তবে এই শহরকে যানজটমুক্ত, জনবান্ধব ফুটপাত এবং শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণরোধে সবার আগে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা যখন কোনো সমস্যা সমাধানে কাজ করি তখন সমস্যাটি সমাধানের জন্যই কাজ করি। হয়তো অনেক সময় অনেক কিছু করা হয়ে উঠে না। তিনি সুন্দর নারায়ণগঞ্জ উপহার দিতে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন।
রাতের আঁধারে জেলা প্রশাসকের ঘুরে বেড়ানোর বিষয়টির প্রশংসা করে নগরবাসীর বলেন, এমন জেলা প্রশাসকই নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, নারায়ণগঞ্জ তিনি জঞ্জালমুক্ত করে শহরকে বসবাসের উপযোগী করে তুলবেন। যেনো নারায়ণগঞ্জবাসী সবসময় তার কথা স্মরণে রাখে।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: