আশ্রয়ণের ৮৯ ‘নতুন স্বপ্ন’ দীপ্তিময় আলো ছড়াচ্ছে

আশ্রয়ণ প্রকল্পে বদলে গেছে জীবন।
‘আমাদের মতো গরীব অসহায় হয়ে কেউ যেন জন্ম না নেয়। জন্ম নিয়ে যেন পাপ করেছিলাম। আর সে পাপ মোচন হয়েছে আশ্রয়ণে একটি স্থায়ী ঠিকানা হয়ে। রোদ-ঝড়,বর্ষায় কি কষ্ট আমাদের ছিল তা বুঝে বলা সম্ভব নয়। আকাশে মেঘ চমকালেই যেন বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠতো। কাঁথা-বালিশ জড়াতে অস্থির থাকতে হয়। আকাশের বৃষ্টি নামলে অনেকে গরু-ছাগল নিয়ে দৌড়ায়,কেউবা ধান-খড় জড়ায় আর আমাদেরকে কাঁথা-বালিশ,চুলা-খড়ি টানা হ্যাচড়া করে নিরাপদে রাখতে দৌড়াতে হয়। কতদিন ভেজা বিছানায় রাত কেটেছে,তার হিসাব জানা নাই।’
আবেগে কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ পাতাইবাড়ী ডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগি নুর ইসলাম(২৮)।
নুর ইসলামের পূর্বের বসত ছিল পার্শ্ববর্তী কাঁঠালী ইউনিয়নের দেশীবাই গ্রামে। তিনি দিনমজুরের কাজ করতো। গত বছর সমস্ত উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত ঘরে বসবাসের জন্য হতদরিদ্র পরিবার হতে আবেদন করতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারনা করা হয়। এতে একটি ঘরের জন্য আবেদন করেন নুর ইসলাম। সে সময় কয়েক দফা যাচাই-বাছাইয়ে চুড়ান্ত তালিকায় নাম উঠে নুর ইসলাম-রশিদা বেগম দম্পত্তির।
এক সময় তারা স্বপ্নের ঠিকানা পান। নুর ইসলাম-রশিদা দম্পত্তির ঘরে দুই সন্তান। নুর জান্নাত(৫) ও নাইম ইসলাম(১)।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আফিস সূত্র জানায়, সারাদেশে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে পূনবার্সণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের তত্তাবধানে শুরু হয় ‘ আশ্রয়ণ প্রকল্প’। উপজেলাটিতে এক হাজার ২৩২টি ভূমিহীন পরিবারের তালিকা ছিল। তার মধ্যে ১ম, ২য় ও ৩য় পর্যায়ে ৮২১টি, সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মিত আশ্রয়ণ ব্যারাকে ১০০টি, গুচ্ছগ্রামের মাধ্যমে নির্মিত ঘরে ১৮০টি ও উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল হতে ৩টি ঘর নিমার্ণের মাধ্যমে মোট ১১০৪টি পরিবারকে পূণবার্সিত করা হয়েছে। এছাড়া ৪র্থ পর্যায়ে ১২৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেলাই মেশিন চালাতে চালাতে হাসি মুখে রশিদা বেগম জানান, ‘অভাবের শেষ পর্যায়ে আমরা ছিলাম। ভবিষ্যত তো দুরের কথা একমুঠো আহারের চিন্তাই আমাদের কাছে বড় ছিল। আল্লাহর রহমতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আশ্রয়ণের ৮৯ নম্বর ঘরটি আমাদের স্বপ্নের নতুন পথ দেখাচ্ছে। আশ্রয়ণে আসার পর আমি সেলাই প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণের পর আমাদের ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) স্যারের সহায়তায় একটি সেলাই মেশিন পাই। তারপর নিয়মিত সেলাইয়ের কাজ করে যাচ্ছি।
প্রায় ১৩০ ঘরের উপকারভোগি পরিবারের সদস্য ছাড়াও অনেক মহিলা ও মেয়েরা কাপড় সেলাই করতে দেয়। সেখানে বসবাসরত উপকারভোগি খাদিজা বেগম,লতিফুল নেছা ও ওসমান খান জানান, সে বাড়ীর চারিদিকে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ রোপন করেছে। পরিশ্রমী রশিদা সেলাই কাজের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি পালন করছে। সাম্প্রতিক সময়ে তার রোজগারের টাকায় তার স্বামী নুর ইসলামকে দিয়ে মীরগঞ্জ হাটে একটি মুদি দোকানের ব্যবসা খুলেছেন। তাকে দেখে অনেকেই এখন উৎসাহ নিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষন গ্রহণের সুযোগ খুঁজছে।
মীরগঞ্জ ইউনিয়ন ৪নং পাতাইবাড়ী ডাঙ্গা এলাকার ওয়ার্ড সদস্য মমিনুর ইসলাম বলেন, মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন(ক শ্রেণির) পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে পাতাইবাড়ী ডাঙ্গায় ১৩০টি গৃহ নির্মাণ করা হয়। সেখানে বসবাসরত সুবিধাভোগিরা অনেকেই মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে স্বাবলম্বী হবার পথ খুঁজে পেয়েছে। যার বাস্তব দৃষ্টান্ত নুর ইসলাম-রশিদা দম্পত্তি।
৭নং মীরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা মানিক বলেন, আমরা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত সুবিধাভোগি নির্বাচন করেছি। তাই অনেকেই আশ্রয়নে তাদের স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ খুঁজে পেয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে একধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। জলঢাকা উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে অত্র অঞ্চলের মানুষের মান উন্নয়ন থেকে শুরু করে মৌলিক মানবাধিকার সহ উন্নয়ন- অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছে।’
মন্তব্য করুন: