মহাকাব্যিক করাচি টেস্ট, পাকিস্তানের লড়াইয়ে হতবাক অস্ট্রেলিয়া

দীর্ঘ ২২ বছর পর পাকিস্তান সফরে এসেছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেই চরম রোমাঞ্চ উপহার দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান। শেষদিনের নখ কামড়ানো উত্তেজনার করাচি টেস্টে হার এড়িয়েছে স্বাগতিকরা।
শেষ বিকেলের আলোয় করাচি সাক্ষী হলো অন্যতম সেরা এক টেস্টের। যেটিতে মিশে থাকল বাবর আজমের স্মরণীয় ইনিংস, আব্দুল্লাহ শফিকের সঙ্গে তার মহাকাব্যিক জুটি আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাল না ছাড়ার গল্প।
১৭২ ওভার ব্যাটিং অথবা ৫০৬ রান—করাচিতে ড্র বা জয়ের যে কোনোটি করতে হলেই বিশ্বরেকর্ড করতে হতো পাকিস্তানকে। চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রানতাড়ার রেকর্ডটা ৪১৮ রানের। ‘টাইমলেস’ টেস্ট বাদ দিলে এর আগে কখনো চতুর্থ ইনিংসে এতো ওভার ব্যাটিং করে বাঁচায়নি টেস্ট। করাচিতে পাকিস্তান চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা দেখিয়ে করল ড্র।
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটা শেষ দিনে এসে রঙ বদলেছে বারবার। অস্ট্রেলিয়ার শেষবারের মতো ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা হয়েছিল বাবরের উইকেট দিয়ে। ৫০০ মিনিটের ওপর ব্যাটিং করে, ৪২৫ বলে ১৯৬ রান করে লায়নের বলে যখন বাবর ফিরলেন ম্যাচ ড্র করা থেকেও পাকিস্তান তখন দাঁড়িয়ে ১২.২ ওভার দূরে।
এমন ইনিংসের পরও তাই হতাশই দেখাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার অভিনন্দনের মধ্য দিয়ে ফেরা বাবরকে। তখনো অবশ্য পাকিস্তানের হাতে ৫ উইকেট। রোমাঞ্চ বাড়ে বাবরের আউটের ঠিক পরের বলেই ফাহিম আশরাফ স্লিপে ক্যাচ দিলে। হুট করেই ম্যাচ ঝুঁকে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। সেটিকে নিজেদের করে নিতে এর পরের ওভারেই তৃতীয় নতুন বলটা নিয়ে নেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক কামিন্স।
রিজওয়ান প্রতি-আক্রমণের চেষ্টা করেছিলেন, তবে লায়নের বলে সাজিদ ফিরলে আবারও ঢুকতে হয় খোলসে। আট ওভার বাকি, হাতে তিন উইকেট! পাকিস্তানের সমর্থকদের স্নায়ুর চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়া ৪৮টি বল বিপদহীন পার করিয়ে পাকিস্তানকে শেষ পর্যন্ত ড্র এনে দিলেন রিজওয়ান।
বাবর-শফিকের মহাকাব্যিক জুটি ভেঙে অস্ট্রেলিয়া উল্লাসটা করতে পেরেছিল মধ্যাহ্নবিরতির আগ দিয়ে। ৪ রানের জন্য টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শতক পাননি শফিক।
তবে এর আগেই বাবরের সঙ্গে রেকর্ড জুটি গড়ে ফেলেছেন। আগেরদিন দুজনের জুটি শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের ২১ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর। আজ অবিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে দুজন মিলে খেলেছেন ৫২০ বল। টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে কোনো জুটি এর আগে এত বল খেলেনি। ২০০১ সালে ভারতের দীপ দাসগুপ্ত ও রাহুল দ্রাবিড় খেলেছিলেন ৫০০ বল।
বিরতির পরের ৮ ওভারে ২১ রান তুলেছিল পাকিস্তান, এরপরই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফাওয়াদকে ফেরান কামিন্স। সে উইকেটের পরই হয়তো আক্রমণের ভাবনা থেকে সরে আসে পাকিস্তান।
বাবর শফিককে ফেরাতে পারলেও রিজওয়ানকে শেষ পর্যন্ত টলাতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। করাচি দেখল পাকিস্তানের মহাকাব্যিক ব্যাটিং প্রদর্শনী, যাতে বাবর-শফিকের পর অবদান থাকল রিজওয়ানেরও।
বিভি/এ.জেড
মন্তব্য করুন: