দুই যুগ পর পাকিস্তান সফরের টেস্ট সিরিজ জিতল অস্ট্রেলিয়া

সিরিজের ট্রফি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া দলের উল্লাস
সেই ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের মাটিতে এসেছিল ক্রিকেটের পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া। এরপর কত জল গড়িয়েছে, কত নদীর গতিপথ পাল্টেছে। কত পাহাড় সমতল হয়েছে। কত দ্বীপ জেগেছে। এসেছে কত নতুন প্রাণ। আর এই ২৪ বছর পর পাকিস্তানে এসে টেস্ট সিরিজও জিতে নিলো অস্ট্রেলিয়া।
তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজে রাওয়ালপিন্ডি ও করাচিতে ড্রয়ের পর লাহোর টেস্টে এসে জয়লাভ করেছে অস্ট্রেলিয়া। ফলে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে জিতে নিলো সফরকারী দল।
লাহোরে পাকিস্তানকে শেষ ইনিংসে জয়ের জন্য ৩৫১ রানের লক্ষ্য দেয় অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ দিন শেষে বিনা উইকেটে ৭৩ রান তোলা পাকিস্তান পঞ্চম ও শেষ দিনে এসে আর ১৫৮ রান যোগ করতেই অলআউট হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ২৩৫ রানে অলআউট হওয়া পাকিস্তান ১১৫ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে। তিন ম্যাচ সিরিজের একমাত্র জয় তুলে নিয়ে টেস্ট সিরিজ নিজেদের দখলে নিলো প্যাট কামিন্সের দল।
তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে রাওয়ালপিন্ডিতে নিষ্প্রাণ ড্র দেখে দুই দল। করাচিতে জয়ের আশা তৈরি করলেও পাকিস্তানি অধিনায়ক বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের দৃঢ়তায় ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় সফরকারী অস্ট্রেলিয়াকে।
লাহোরে তৃতীয় ও শেষ টেস্টে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় অজি অধিনায়ক কামিন্স। প্রথম ইনিংসে চার অজি ব্যাটারের অর্ধশতকে ৩৯১ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় সফরকারী দল।
চলতি সিরিজে অসাধারণ ফর্মে থাকা উসমান খাজা নার্ভাস নাইন্টিজে আটকে পড়ে ফেরেন ৯১ রানে। এ ছাড়াও ক্যামেরন গ্রিন, অ্যালেক্স ক্যারে ও স্টিভেন স্মিথ করেন যথাক্রমে ৭৯, ৬৭ ও ৫৯ রান। পাকিস্তানিদের পক্ষে নাসিম শাহ ও শাহিন শাহ আফ্রিদি ৪টি করে উইকেট শিকার করেন।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে মিডল ও লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যাটিং ব্যর্থতায় ২৬৮ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। ৪৪ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়েছে বাবর আজমের দল। এরমধ্যে শেষ চার ব্যাটার তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ফলে পাকিস্তান শেষ চার উইকেট হারায় কোনো রান যোগ না করে।
স্বাগতিকদের পক্ষে প্রথম ইনিংসে আব্দুল্লাহ শফিক ৮১, আজহার আলী ৭৮ ও অধিনায়ক বাবর ৬৭ রান করেন। অজিদের পক্ষে অধিনায়ক কামিন্স ৫৬ রানে ৫ উইকেট তুলে নেন। এ ছাড়াও মিচেল স্টার্ক ৩৩ রানে নেন ৪ উইকেট।
১২৩ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নামে অস্ট্রেলিয়া। এই ইনিংসে ওয়ানডে গতিতে রান তুলতে থাকে সফরকারীরা। মাত্র ৬০ ওভারে ৩ উইকেটে ২২৭ রান তুলে ৩৫০ রানের লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া।
চলতি সিরিজে নিজের দ্বিতীয় শতক তুলে নেন অজি ওপেনার খাজা। শেষ পর্যন্ত ১০৪ রানে অপরাজিত থাকেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত এই ব্যাটার। এই সিরিজে ৫ ইনিংসে ব্যাট করে ১৬৫ গড়ে ৪৯৬ রান করেন খাজা। অজিদের পক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫১ রান করেন ওয়ার্নার।
লাহোরে ১১৫ ওভারে ৩৫১ রানের লক্ষ্যে চতুর্থ দিন মাঠে নামে স্বাগতিক পাকিস্তান। দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম-উল হক দারুণ শুরু করেন। চতুর্থ দিন শেষে বিনা উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৭৩ রানের জুটি গড়ে মাঠ ছাড়েন শফিক-ইমাম।
শেষ দিনে পাকিস্তানের জিততে প্রয়োজন ছিল ২৭৮ রান। আর অজিদের প্রয়োজন ছিল ১০ উইকেট। শেষ পর্যন্ত নাথান লায়ন ও কামিন্সের বোলিং তোপে হার মানতে বাধ্য হয় বাবর বাহিনী।
শেষ দিনে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে পাকিস্তান। যদিও ইমাম ৭০ ও বাবর ৫৫ রান করে কিছুটা লড়াইয়ের চেষ্টা করেন, তবে সেটি যথেষ্ঠ ছিল না দলটির জন্য। নাথান লায়ন ৮৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে অন্যতম ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়াও অধিনায়ক কামিন্স ২৩ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট।
শেষ টেস্টে ৭৮ রান দিয়ে ৮ উইকেট শিকার করে নেওয়া অজি অধিনায়ক কামিন্স হন ম্যাচসেরা। আরেক অজি ক্রিকেটার খাজা সিরিজে ৪৯৬ রান করায় জেতেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: