• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

‘আমি এই অশিক্ষিত মা-ই আমার ছেলেকে শিক্ষিত করেছি’

ইভা আক্তার, গণ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১৩:০০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ফন্ট সাইজ
‘আমি এই অশিক্ষিত মা-ই আমার ছেলেকে শিক্ষিত করেছি’

গ্রাজুয়েট সন্তানদের সাথে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গর্বিত মায়েরা।

বন্ধু ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক। বুকে আয়। কত বছর পর দেখা হলো। ঠিক এভাবেই শুরু হলো সকালটা। বসন্তের হাওয়া কেবলই জানান দিল তোমরা প্রস্তুত তো! ভোরের আলো ছড়িয়ে গেলো, সোনালি আলো মাখিয়ে তোড়জোড় করে সবাই মায়া মাখানো কালো গাউন জড়িয়ে নিল, মূল ফটক থেকে আসিফ নাম ভেসে এলো.... মামা তোরা কি আমাকে রেখেই ছবি তুলে ফেললি!

হয়তো সবাই কর্মজীবনে ব্যস্ত। তবে মুছে যায়নি সেই আবেগাত্মক মনোভাব, হারিয়ে যায়নি হাতে হাত রাখার বিশ্বস্ততা। এমন আবেগাপ্লুত দৃশ্য দেখা যায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। নির্ধারিত সময়ের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে ক্যাম্পাসে  আসতে শুরু করে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা। হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের কালো গাউন পরে আকাশে টুপি উড়ানোর স্বপ্ন পেলো পরিপূর্ণতা। ঢোলের বাড়িতে আওয়াজ ভাসলো  গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাউৎসব। 

কালো গাউন পরে বন্ধু, সহপাঠী, পরিচিতদের নিয়ে সেইসব স্মৃতি ফ্রেমবন্দি করে রাখছেন। আজকের এই বিশেষ দিনে স্বাক্ষী করে রাখতে বাবা- মাকে নিয়ে এসেছেন ক্যাম্পাসে।  ছেলে-মেয়ের এমন অর্জনে মুখে হাসির কমতি নেই মা-বাবাদের।

আশিকের সাথে তার গর্বিত মা

কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুর রাহিমের মা স্নিগ্ধমাখা হাসিতে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন," আজকে আমার নিজেকে অনেক বেশি সুখী লাগছে। ছেলেকে দেখে উকিল উকিল লাগছে। আমি বিদেশে ছিলাম শুধু নিজের ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলবো এবং শিক্ষিত করবো বিধেয় সবকিছু রেখে দেশে ছুটে এসেছিলাম। যখন রাহিম কলেজে ছিল খাবার নিয়ে গিয়ে খাইয়ে দিয়েছি, প্রতিদিন নিজ হাতে জামা-কাপড় পড়িয়ে কলেজে পাঠিয়েছি। যখন কলেজে যেতাম শিক্ষকরা আমার ছেলের প্রশংসা করতো সেটা শুনতে আমার খুবই ভালো লাগতো। আজকে আমার সব আশা পরিপূর্ণতা পেয়েছে।"

ফার্মেসি বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের  শিক্ষার্থী উৎপল চন্দ্র দাস বলেন, "দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর আজকে সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সমাবর্তন পেলাম। বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে আজকের দিনের অনুভূতি অসাধারণ যা ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না। বাবা মায়ের হাজার ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও আজকের এই দিনে আমার সাথে অংশগ্রহণ করে তারা খুবই খুশি। তাদের ছাড়া আমার এই গ্র্যাজুয়েশন অসম্পূর্ণ থেকে যেত। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে আমি আবার সেই ক্যাম্পাস জীবনে ফিরে গিয়েছি।"

উৎপল চন্দ্র দাশের বাবা মহেশ চন্দ্র দাশ বলেছেন, "আমি একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি তাই আমি সবসময় চেয়েছি আমার ছেলেকে আমি সর্বস্ব দিয়ে হলেও শিক্ষিত করবো এবং গর্ব করে আমি আজকে বলতে পারছি আমি পেরেছি। আজকের এই জায়গায় আমার ছেলেকে দেখে খুবই ভালো লাগছে।"

আনন্দের এই দিনে বাবা-মাকে পাশে রেখেছিলেন উৎপল চন্দ্র দাশও

অভিভাবকদের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের আনন্দের মাত্র দিয়েছে আরও বাড়িয়ে। তাদের সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি হয়ে মুহূর্তগুলো স্মরণীয় করে রাখছেন গ্র্যাজুয়েট সন্তানরা। কেউ কেউ বাবা-মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে তুলছেন ছবি, কেউ কেউ পরিয়ে দিচ্ছে কালো গাউন আর টুপি। 

লাল কার্পেটে দাড়িয়ে বাবা-মায়ের সাথে স্মৃতি ফ্রেমবন্দি করেছেন মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের  ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী রুকাইয়া আক্তার। তিনি বলেন, "এটা আমার একটি স্বপ্নের দিন ছিল। এই স্বপনের দিনটা স্বাক্ষী রাখার জন্য আমার জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আমার বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। আমার বাবার অনুপ্রেরণায় আজকে এই জায়গায় দাড়িয়ে আছি। বাবা কে এই দিনে দাড়িয়ে বলছি বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি।"

রুকাইয়ার বাবা হাজী আক্কাস আলী বলেন, "আজকের এই আনন্দের ভাষা বলে বুঝানোর মতো নয়। এই পর্যন্ত দেওয়া সকল শ্রম আজকে আমার স্বার্থক। আজ থেকে আমি বলতে পারব আমার সন্তান গ্র্যাজুয়েট।"

মা-বাবাকে সাথে নিয়েই স্মৃতি ধরে রাখতে চান রুকাইয়া আক্তার

বকুল তলায় মাকে জড়িয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ২০১৪-১৫ সেশনের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের আশিকুর রহমান বলেন, "অবশেষে আজকে ক্যাম্পাসের গণ্ডি পার করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে গ্র্যাজুয়েট হতে পেরেছি, এই আনন্দের ভাষা প্রকাশ করার মতো নয়। আমার সবকিছু ঘিরে আমার মা। তার অনুপ্রেরণায় আজকে আমি সফল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পরে আজকে সবাইকে দেখে খুবই আনন্দ লাগছে, এটাও আজকের দিনের একটা বিশেষ অংশ।"

উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আশিকুর রহমানের মা নাজমা বেগম বলেন, "আমার একটিমাত্র ছেলে। ছেলের বাবা মারা গিয়েছে ৫-৬ বছর আগে। আমার জীবনের সবথেকে খুশির দিন আজকে। আমি এককভাবে ছেলেকে অনেক কষ্ট করে আজকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। আমি শুনেছি মা শিক্ষিত হলে জাতি শিক্ষিত হয় এটা মিথ্যা কথা। কারণ, আমি তার প্রমাণ। আমি দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। কিন্তু আমি এই অশিক্ষিত মা-ই আমার ছেলেকে শিক্ষিত করেছি। আমার জীবনের গর্বের বিষয়ই আমার ছেলে। আমি অনেক আনন্দ করছি আজকে এখানে এসে।"

আশিকুর রহমানের বন্ধু নোমান হাসান বলেন, "আমাদের সময়ে ক্যাম্পাস থেকে পিঠা উৎসব ছাড়া আর কোন উৎসব পাইনি। আমরা নিজেরা নিজেরা করেছি কিন্তু এমন বড় উৎসব পাইনি। যেটা দেখে খুবই আনন্দ লাগছে। কর্মব্যস্ততায় সুযোগ হয়ে উঠে না বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়ার তাই সবাইকে আজকে দেখে খুবই ভালো লাগছে। ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পরে সকল কাজে প্রভিশনাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করেছি আজকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্র্যাজুয়েট হয়েছি। ক্যাম্পাসে কাটানো মুহূর্তগুলা আজকে খুবই মনে পরছে। বন্ধুদের সাথে পিএইচএ'র ভবনে আড্ডা, নৌকায় ঘুরা, আম-বেল চুরি করে খাওয়ার মুহূর্তগুলো ভেসে উঠছে।"

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2