পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন সৌন্দর্যে ভরপুর বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে

ভ্রমণের জন্য বিখ্যাত বিভাগ চট্টগ্রাম। সে বিভাগের অন্যতম এক ভ্রমণের জায়গা হলো বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া বাজারের পাশেই অবস্থিত বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। বলা যেতে পারে এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে আসেন একটু প্রশান্তির খোঁজে। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে জোয়ারের পানিতে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের উপকূলীয় বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝাউগাছ ক্ষতবিক্ষত হয়ে উপড়ে পড়েছে।
ঝাউগাছ সৈকতটির সৌন্দর্য বর্ধেনের সহায়ক। যা পর্যটকেদের আকর্ষণ করত। এমন প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষ খুঁজতে যেত শান্তির পরশ। এখানে হতো বনভোজনসহ নানা অনুষ্ঠান। গত তিন চার বছর ধরে জোয়ারের ঢেউ ও স্রোতে ভাঙতে শুরু করে পর্যটন ও বিনোদনের এ জনপ্রিয় সৈকতটি। এভাবে ভাঙতে থাকলে সৈকতের ঝাউগাছ বিলীন হয়ে যেতে পারে। আর এই ঝাউগাছ আর সবুজ ঘাসের গালিচার জন্য এক অপরূপ সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে।
অনিন্দ্য সুন্দর বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত দেখতে হলে যেতে হবে জোয়ারের সময়। সকালের দিকে গেলে নিরানন্দ লাগবে, যেতে হবে দুপুরে তখন জোয়ারের টান থাকে। বাঁশবাড়িয়ায় সমুদ্র সৈকতে একটি লোহার জেটি ঘাট রয়েছে। অনেকের মুখে আবার ব্রিজ নামেও চলছে এটা। জোয়ারের সময় লোহার যে ব্রিজটি আছে তার উপর দাঁড়িয়ে মিহি অনুভূতি দিয়ে পায়ের পাতা ছুঁয়ে যাবে সমুদ্রজল। যেটি মনে হবে এক বিশাল সমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন আপনিও। এই লোহার ব্রিজটি সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুললো বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তরে বাঁশবাড়িয়া বাজার। বাজারের মধ্য দিয়ে একটি সরু পিচঢালা পথে এগিয়েছে সমুদ্র উপকূলে। বাজার থেকে মাত্র ১৫ মিনিটে সেই পথে এগুলেই মিলবে সমুদ্রের দেখা। এই সৈকতের মূল আকর্ষণ হলো, প্রায় আধা কিলোমিটারের বেশি সমুদ্রের ভেতর হেঁটে যেতে পারবেন আপনি। আর সঙ্গে পাবেন প্রকৃতির অপার স্নেহ।
বাঁশবাড়িয়া যাওয়ার পথটা অসাধারণ। গাছের ফাঁকে ফাঁকে সূর্য মামা খেলা করেন ওখানে। উপরে খোলা আকাশ, পাশে খোলা জায়গা, একটু সামনে এগিয়ে গেলে বিশাল সমুদ্র।
এবার আমাদের বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ শেয়ার করি-
ইন্টারনেটে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের রিভিউ দেখার পর আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে বাঁশবাড়িয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করি। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা ফেনী সরকারি কলেজের চারজন বন্ধু রওনা দিই বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশে। আমাদের যাত্রা শুরু হয় ফেনীর মহিপাল থেকে। আমরা চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে পড়লাম। বাস আমাদের কে সীতাকুণ্ড বাঁশবাড়িয়া বাজারে নামিয়ে দিলো দুপুর ১২ টায়। যেহেতু দুপুর হয়ে গেলো সেজন্য আমরা বাঁশবাড়িয়া বাজারে দুপুরের খাবার শেষ করে নিলাম। এরপর আমরা সিএনজি ভাড়া করে বাজার থেকে চলে গেলাম বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে। যদিও অনেকে পায়ে হেঁটেও বাজার থেকে চলে যায়। পায়ে হেঁটে যাওয়ার মজা অন্য রকম। রাস্তার পাশে অনেক সৌন্দর্য এবং দূর থেকে সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। যেহেতু আমরা দেরিতে গেলাম সেখানে তাই আমরা পায়ে হাঁটার চেষ্টা করিনি।বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের যে উপকূলীয় বাঁধ রয়েছে সেখান থেকে সমুদ্র সৈকতের বিশাল বিশাল ঝাউগাছের বাগান দেখা যায়। যেটি মনকে মুহূর্তে শীতল করে সেবে। এরপর আমরা সিএনজি থেকে নেমে চলে গেলাম সমুদ্র সৈকতে পানির কাছে। এর মাঝে একটু ঝাউগাছের বাগানে বিশ্রাম নিয়েছিলাম। সমুদ্রের শীতল বাতাস আর ঝাউগাছের ছায়া একাকার হয়ে যায়। আমাদের হাতে সময় কম ছিলো তাই আমরা পানির কাছাকাছি চলে গেলাম পানির ঢেউ উপভোগ করতে। যদিও বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের পানিগুলো ঘোলাটে। তারপর ও ঢেউগুলো বিশাল বিশাল হয়ে আসে সমুদ্র থেকে। যা অত্যন্ত মুগ্ধ করে। সাথে আছে সে সমুদ্র সৈকতে বিশাল একটি লোহার ব্রিজ। যেটি একদম সমুদ্রের মধ্যে ও অনেকদূর পর্যন্ত। আমরা সে ব্রিজে যখন উঠলাম, ব্রিজের নিচে সমুদ্রের পানি এসে ধাক্কা খাচ্ছিল, তখন মনে হয় যেন সমুদ্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। এভাবে আমাদের অনেকক্ষণ কাটলো। আমাদের হাতে সময় কম হওয়াতে আর অপেক্ষা করা গেলো না সমুদ্র সৈকতে। তাই বাড়ি ফেরার পালা শুরু করলাম।অবশেষে আমরা আবার বাঁশবাড়িয়া বাজারে এসে ফেনীগামী বাসে উঠলাম।
আবার কেউ যদি চায় তাহলে স্পিডবোটে করে জনপ্রতি ৪০০ টাকা (আপডাউন) সন্দ্বীপ ঘুরে আসতে পারে। ২০ মিনিট মতো সময় লাগে। তবে বলে রাখা ভালো, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত অবস্থিত ব্রিজটি মজবুত খুঁটি ছাড়া নির্মিত, যার কারণে সাবধানতা বজায় করা উচিত। অহেতুক বড় দল নিয়ে ব্রিজে না ওঠাই ভালো। যেহেতু কোনো বেষ্টনী নেই, সেহেতু জোয়ার-ভাটার সময় মেনে চলা উচিত।
যেভাবে যাবেন:
কে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে সীতাকুণ্ডে অথবা চট্টগ্রামের অলংকার থেকে সীতাকুণ্ড যাওয়ার যেকোনো বাস বা টেম্পোতে করে বাঁশবাড়িয়া নামতে হবে। ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা। অলংকার থেকে চট্টগ্রাম হাইওয়ে ধরে ২৩ কিলোমিটার যেতে হবে। এটা বাড়বকুণ্ডের একটু আগে। বাঁশবাড়িয়া নামার পর সিএনজিতে করে আরও ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার গেলে বেড়িবাঁধ পাওয়া যাবে। সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা করে। চাইলে রিজার্ভও নেওয়া যায়। ওখানেই বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত।
খাবার খাওয়া:
চাইলে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার আগে বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকেও খাওয়া শেষ করা যায়, তবে এতটা উন্নত মানের খাবার পাওয়া যায় না। কেউ চাইলে সীতাকুণ্ড বাজারে গিয়েও খাবার খেতে পারেন। যেখানে ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়।
যেখানে থাকবেন:
যারা একদিনের ভ্রমণে যান তাদের ক্ষেত্রে থাকার তেমন প্রয়োজন নেই। যারা দূর থেকে আসে বা একাধিক দিনের জন্য আসে, তাদের থাকার প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বাঁশবাড়িয়া বাজারে তেমন কোনো আবাসিক হোটেল পাওয়া যায় না সাধারণত। চাইলে সীতাকুণ্ড বাজারে গিয়ে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে নরমাল থাকলে রুম প্রতি ৬০০-৭০০ টাকায় পাওয়া যাবে। আর উন্নতমানের চাইলে ১০০০-২০০০ টাকা লাগতে পারে।
অবশেষে একটি কথা, ভ্রমণের স্থান পরিষ্কার ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ক্ষতিকর হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। খাবারের কোনো অংশ বা প্যাকেট কেউ সমুদ্র সৈকতে ফেলে সৌন্দর্য নষ্ট না করাই উত্তম। কারণ, সৌন্দর্য উপভোগ করার অধিকার সবার আছে। আরেকটা কথা হলো, সমুদ্র সৈকতটিতে এখনও ভালো কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই বিধায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাত হওয়ার আগে ভ্রমণ স্থানটি ত্যাগ করাই শ্রেয়।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: