সাগরে ভূকম্পন ও তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধিই অসময়ে ঝড় এনেছে

প্রতীকী ছবি
বিগত ৯৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে গ্রীষ্মকাল আসার আগেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে ঝড়। যা ইতোমধ্যে গভীর নিম্নচাপ আকারে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন উপকূলে। যদিও ধারণা করা হয়েছিল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে পর্যাপ্ত শক্তি সঞ্চার করতে পারলে এটি বড় ধরণের ধংসযজ্ঞ চালাতে পারে কক্সবাজার উপকূলে। তবে শেষ মুহূর্তে ঝড়টি দূর্বল হয়ে পড়ায় এই যাত্রায় বেঁচে গেছে বাংলাদেশ উপকূল।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু অঞ্চল হওয়ায় বঙ্গোপসাগরে সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে ঝড়ের সৃষ্টি হয়। বিগত সময়গুলোর তথ্য যাচাই করলে দেখা যায়, এখানকার অধিকাংশ ঝড়ের উৎপত্তি হয়েছে মধ্য এপ্রিলের পরে। কিন্তু এবার প্রায় একমাস এগিয়ে মার্চে (বসন্তকালেই) উপকূলমুখী হয়েছে এই ঝড়টি। অসময়ে ঝড়ের আগমন কিছুটা বিচলিত করেছে সবাইকে।
বঙ্গোপসাগর উপকূলের দূর্যোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ নাথ। তিনি বাংলাভিশনকে জানান, গত ৩ মাসে বঙ্গোপসাগরের আন্দামান নিকোবর ও মিয়ানমার উপকূলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল। অক্টোর থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সমুদ্রের এই অঞ্চলের তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৪ দশমিক ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। একইসঙ্গে গত ১৩ মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে ওই অঞ্চলে প্রায় ১২টি ভূমিকম্প হয়। যার মাত্রা ছিলো ৪.১ থেকে ৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। যা এই ঝড় সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ।
তিনি বলেন, ভূমিকম্প হলে স্বাভাবিকভাবেই সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ে। অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা বাড়ার এটাও অন্যতম কারণ। আর তাপমাত্রা ও বায়ুচাপের তারতম্য থাকলে ঝড়ের সৃষ্টি হবে এটাতো আমরা সবাই জানি।
এই ঝড়টির বাংলাদেশমুখী না হওয়ার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, একই সময়ে বাংলাদেশ কোস্টে তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৭ দশমিক ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এটিও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। এই তাপমাত্রাও ঝড় নিয়ে আসতে পারে। তবে এখন বাংলাদেশ উপকূলের তুলনায় মিয়ানমার ও আন্দামান নিকোবরের দিকে তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ঝড় সেদিকেই গিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামুদ্রিক দুর্যোগকালীন সময় আরও এগিয়ে আসার পাশাপাশি ঝড়গুলোর শক্তিও বাড়ছে বলে জানিয়ে এই দুর্যোগ গবেষক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের দ্রুত গতি নিয়ন্ত্রণ অতি জরুরি। একইসঙ্গে আমাদের উপকূলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অত্যাধিক বনায়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।
বিভি/কেএস
মন্তব্য করুন: