৪১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এবার

৪১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এবার
বৈশ্বিকভাবে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে আবহাওয়া। এর বড় ধাক্কা এসেছে বাংলাদেশে। বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে গত ৪১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এবারে। গেলো জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে এবার। ১৯৮১ সালের পর থেকে আবহাওয়ার এমন বিরূপ চেহারা কখনোই দেখা যায়নি। দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির দেখা মেলে জুলাই- আগস্ট মাসে। কিন্তু এবার বৃষ্টির ভরা মৌসুমেও প্রকৃতি বিরূপ। শ্রাবণে মেঘের ঘনঘটা তো দূরের কথা। প্রচণ্ড তাপদাহে তপ্ত প্রাণ। বৃষ্টির জন্য চাতকের আকুলতায় চেয়ে থাকতে হয় আকাশের দিকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসেবে, গেলো জুলাই মাসে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে ২১১ মিলিমিটার। যা ১৯৮১ সালের পর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গড় বৃষ্টিপাতের অর্ধেকেরও কম। গেলো ৪১ বছরে গড় বৃষ্টিপাত ৪৯৬ মিলিমিটার। যদিও ২০২০ সালে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছিলো ৫৫৩ মিলিমিটার। আবহাওয়াবিদ ড. আব্দুল আব্দুল মান্নান বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জলবায়ু নির্দিষ্ট নিয়ম মানছে না। কখনো অতিবৃষ্টি আবার কখনো বা অনাবৃষ্টি। উত্থান-পতন তাপমাত্রায়ও।
কৃষকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, অনাবৃষ্টি ও অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে চাষাবাদের সময়কাল সংকুচিত হচ্ছে। ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বীজের অঙ্কুরোদগম কম হচ্ছে। গাছের দৈহিক বৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। ফুল ও ফল কম হচ্ছে। ফল পুষ্ট হচ্ছে না। ফলের আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি পেকে যাচ্ছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ফসলের পাতা বটে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমান কমে যাচ্ছে। অনাবৃষ্টি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বোরো ধানের ক্ষেতে-যেখানে সেচের বিকল্প ব্যবস্থা নেই সেখানে আগাম থোড় ধরছে। হঠাৎ তাপমাত্রা উঠানামা করার ফলে হাঁস-মুরগীর ডিম উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
আবহাওয়ার কেন এ বিরূপ আচরণ? দ্রুত রূপ বদলের ভবিষ্যতই বা কি হতে পারে- এমন প্রশ্ন ছিল জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমানের কাছে। তার মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বণ নি:সরণের হার কমিয়ে আনতে উন্নত দেশগুলো কাজ করতে না পারলে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ কেবল বাংলাদেশেই নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। এর জন্য উন্নত দেশগুলোর দায়ই বেশি-বলছেন তারা।
মন্তব্য করুন: